ফেরার অধ্যায়: -২য় বর্ষ সংখ্যা ১৫


                              প্রচ্ছদ শিল্পী - মৌমিতা দাস


এই সংখ্যায় যারা লিখলেন :-

দুটি কবিতা:- 
প্রবীর রায়, মণিশংকর বিশ্বাস


কবিতা:-

রাজা, সন্দীপন দত্ত, বিদিশা সরকার, অভিশ্রুতি রায়,রিয়া সরকার ,সৌরভী রায়,উজ্জ্বল বর্মন, সুকৃতি সিকদার, চন্দ্রাণী গোস্বামী, সোমনাথ গুহ,তাপস দাস,দেবমিত্রা চৌধুরী, ঈশিতা দে সরকার, শঙ্খদীপ মাহাত,অনন্যা দাশগুপ্ত,রতন দাস, সত্তাপ্রিয় বর্মন, বিষ্ণুদীপ চক্রবর্তী, টুম্পা ভট্টাচার্য,দুর্জয় দাস,অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য ,মোনালিসা চট্টোপাধ্যায় ,বিবেক চৌধুরী,শ্রেয়সী চ্যাটার্জী,নাজিয়া নিগার,শান্তা মারিয়া,কুহেলী রায়,বিদুষী পাল,তৌফিক জহুর,ধৃতিরূপা দাস

সিরিজ কবিতা:-
সোনালী চক্রবর্তী,কৌশিক জোয়ারদার, পঙ্কজ ঘোষ

গদ্য:-

 বিকাশ দাস(বিল্টু), সুমন ভট্টাচার্য, শৌভিক বণিক ,পার্থ সারথি লাহিড়ী,তন্ময় বসাক,বিবেকানন্দ বসাক,মহিবুল আলম,শুভ্রদীপ রায়

পাঠ প্রতিক্রিয়া:- 

সব্যসাচী মজুমদার



একটি নামমাত্র সম্পাদকীয় :-

মুখোমুখি হবো অথচ মুখোমুখি হতে ভয়! সাজ সরঞ্জাম অস্ত্র নিয়ে তৈরী হবার পালা আবার। তবুও যেখানে সাহিত্য মৃত মানুষের পাশে বসে থাকা ছেলে অথবা মেয়েটিকেও পাশ কাটিয়ে যায়নি ,প্রিয় মানুষের শোকেও ছেড়ে যায়নি, ক্ষুধার চোটে ক্রন্দনরত মানুষকেও ছেড়ে যায়নি সেখানে দ্বিতীয় যুদ্ধের আগে-পরে কীভাবে সাহিত্য ছেড়ে যাবে আমাদের! চাইলেই কি সব হয়!
একের পর এক সবাই ছেড়ে যাচ্ছে আমাদের।আমরা খড়কুটো আগলে পড়ে আছি। তিন মাস পর আবার স্বমহিমায় ফিরলাম।মাস্ক স্যানিটাইজার সহ। বরাবর ওয়েব ডুয়ার্সে বলে এসেছি সিরিয়াস সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হোক পেজ কালচার থেকে বেরিয়ে। পেজ কালচার আর যাইহোক কখনো সিরিয়াস লেখার কাছে আপনাকে দাঁড় করাতে পারে না।সাময়িক জনপ্রিয়তা। যতদিন পেজ কালচার নির্ভরশীল হয়ে লেখাটাকে লেখা ভেবে আমোদ নেবেন ততদিন ফাঁপা হতে থাকবে লেখার হাত। পেজ কালচার হোক বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ প্রদত্ত জনপ্রিয়তা হাজার হাজার সম্মান দুটোই ফোঁকলা দাঁতের হাসির মতো।
সাহিত্যের ভাষা বদলাচ্ছে ,বদল আসছে বলার ধরণে ,দেখানোর ধরণে ।সিরিয়াস সাহিত্য চিরকাল থেকে যাবার জন্য আর পেজ কালচার দুদিনের মুখ চেনা মুগের ডাল।
সিরিয়াস লেখা আরও বেশী করে আপ্যায়ন চলুক ,চিনে নেওয়া হোক খাঁটি কলমকে। টিউবে হাওয়া না ভরে বিশ্বাসে হাওয়া ভরা হতে থাকুক।
ফিরে এলাম আরও একবার।প্যানডেমিক অবস্থায়। আরও অনেক মৃত্যু দেখবো আমরা জানি তবুও ভেঙে যাব না।যেভাবে স্বপ্ন দেখি একদিন সফল হবার সেভাবেই স্বপ্ন দেখা হোক বেঁচে থাকার ,মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হোক আর শিল্পীদের না রগড়ে নিজেদের মানসিকতা ঘষামাজা করা হোক।
মুখে মাস্ক পরুন, দূরত্ব বজায় রাখুন, শারীরিক তবে মানসিক নয় ,ভালো থাকুন ভালো রাখুন...

 









প্রবীর রায়-এর দুটি কবিতা

বেয়াকুব 

কুয়াশাঅক্ষর শীতে ভ্রমে আটক সেইসব গুণাবলি
চিহ্নিত করতে পারোনি
জীবনের মত করে বলতে চেয়েছিলে
আচ্ছন্নতা আসলে হাওয়ার উত্তুরে নেশা
ভুলে থাকার মত    ভুলে যাওয়ার মত
 

হুকুমনামা 

এমন গানই তো ফুটে ওঠে
ফুলগুলিও আনন্দ গায় প্রতিটি সকালে
পর্দাহীন বাড়ীগুলো জানালা খুলছেনা
হাওয়া অতোটা সতর্ক নয়
আনমনে দোলাতে চাইছে

শেষ নির্দেশ ছিল
বন্ধ হয়ে যাও
পাথর হয়ে থাকো




মণিশংকর বিশ্বাস -এর দুটি কবিতা

ধূপকাঠি

ধূপকাঠি যতক্ষণ দাউদাউ করে জ্বলে

সুগন্ধও পুড়ে যায়—

সে তখন চিতাকাঠ—

 

মানুষের কামনা নাশকতা স্নেহ যৌনতার

প্রকৃত তৃষ্ণার থেকে দূরে

আমগাছের ছায়ায়

আম্র মুকুলের গন্ধের মতন

মানুষটি তখন ওড়াউড়ি করে।

 

জীবিত কামনা দাউদাউ নিভে এলে

ধূপকাঠি যখন পদ্মাভ, শরণাগত

তোমার পায়ের মতো রাঙা,

তখনই তার প্রকৃত সুবাস

টের পাই, অমিতাভ।


সহজ পাঠের কবিতা

যখন বাতাসে খরা

রোদে তামা হয়ে গেছে ঘাস

আমাদের বাবা-মায়ের যৌবনের

ছায়াঘেরা গল্পগুলি ভালো লাগে।

ভাবি জঙ্গলে যাব—

অরণ্যদেবের সঙ্গে চা খেয়ে আসব…

তারপর একদিন প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যায়

পিঁপড়ের পৌরসভা—

চৈতী ফুলের গাছে বসে থাকে

গৃহহীন শালিখ

আমাকে তোমার মনে পড়ে, হয়তো-বা—

অমনি নদীর ওপার থেকে

ঝকঝকে মেঘ উড়ে আসে

যেন এই মাত্র ওদেরও স্কুল ছুটি হলো

আর আমিও মনে মনে ভাবতে থাকি—

 

এবার পুজোয় দেখা হোক বা না হোক

দুবরাজপুর থেকে অবিভক্ত বাংলা ভাষায় তোমার

চিঠি আসবে, ঈশ্বর

কাশফুলের অক্ষরবৃত্তে লেখা—

“কী খবর, ভালো আছো?...তোমার নতুন বই...

কবে আসছ এদিকে?”

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কবিতা:-


র ত ন  দা স

জ্ঞানচক্ষু

ভালবাসা পেলে মানুষ অবোধ হয়ে যায়,
শিশুর মতন।
পাথরে ফোটে ফুল পুরোনো অভ্যাসে
ফুটিফাটা উঠানে লাগে কাদার নরম।
কোচকানো সাদা কাগজ, ভাজ খুলে খুলে
পাট করে সাজালে ফের প্রেমে, উষ্ণতায়,
কাগজের শুভ্রতা অমলিন লাগে
কোচকানো দাগ থেকে যায়।
বধুঁ, 'ভালোবাসি ভালোবাসি' কোলাহলে,
হাঁসুলির বাঁকে
অথবা হাসিতে যে
হাঁসুয়া লুকাও!
এখনও জাননি তুমি
একবার স্বেচ্ছায় খুন হয়ে গেছে যারা
'ফিরবে না, ফিরবে না' বলে
তবু ফিরে আসে,
শিশু হতে চায় তারা,
শুধু তৃতীয় নয়ন খুলে যায়।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

তা প স  দা স

চুম্বন

১.

এই যে আমাকে ছুঁলে
আমি তখন পাখি দেখলাম,  আগেও দেখেছি
এই পাখি অথবা অন্য পাখি। পাখিরা পাখিই ছিল
আমার বন্ধু ছিল না, আর
বন্ধু থাকলেও দরজা ছিল না ভেতরে আসার
আজ ভেতরে শুধু দানাশষ্যের ভিড়...

২.

আমার ঠোঁটে তুমি রোদ রেখে গেলে
শরীর যেন দু'ভাগ হয়ে গেছে
ডানদিকের পাখি বাঁদিক এসে বসে
পরাবাস্তব পুকুরে স্নান সেড়ে নেয়
জলের ছায়া জলের পিছে ছোটে







বি দি শা  স র কা র

শীতের ডাইরি ৪

এই চারপাশ,শুকিয়ে যাওয়া খানাখন্দ – কোনও মড়ক নয়।ভোরের মতই সত্য। আমরা ঘুমের মধ্যেও যেমন টের পাই,অন্ধও। তবে তার চোখ বোধে। সেখানে বোধই
প্রথম বোধই শেষ কথা। স্পর্শের মধ্যেই লালন। স্পর্শই আধিদৈবিক। অন্বেষণের উড়ানের বিকল্প গানই তাকে পথে নামায়। পথ দেখিয়ে দেয়, উপার্জনও।
উপার্জনের ফলনে পেস্টিসাইড ফলনকে জারি রেখেছে। অথচ সেই অনন্ত মাঠ,যেখানে অপু’র বিস্ময়! সংহারের প্রয়োজনীয়তাকে স্ববশে আনাও তো স্বশিক্ষার বিষয়। তাই পাঠ্য-পুস্তক থেকে বেরিয়ে এসেছে স্বাধিকারে। আর্তের কাছে পরিবেদনা নিরাময় নয়। আসল বিষয় ঈশ্বর প্রদত্ত দুটি হাত, যা কখনও কখনও দশভুজার কাজ করে।
অর্জন আর বর্জনের দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলেই মানুষ সিদ্ধান্তের নিরিখে দোলাচলে।সেখানে প্রতিবাদও ভঙ্গুর। আর যথার্থ প্রতিবাদের থেকে উঠে আসে টায়ার পোড়ার গন্ধ। আঘাত প্রত্যাঘাতের মাঝখানে জন্মদাগও মুছে যায়। সংশোধনাগার থেকে ঠিকানার দূরত্ব ভাবেনি কেউ। ভাবেনি হাজার চুরাশির মা’র প্রয়াণ কোন কঠিন বাস্তবকে পর্যায়ক্রমিক প্রহসনে রূপান্তরিত করেছে। একটা চরিত্র কত বছর বেঁচে থাকে ? কলম যাকে চরিত্রের স্বীকৃতি দেয় তেমন পোস্টমর্টমের পরও আরও
কয়েকযুগ বাঁচিয়ে রাখতে পারে কলমই। অভয়ারণ্যেও ঘেরাটোপ! সেই আপ্তবাক্য
“মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়” – স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে – প্রকৃত সারসই তাহলে উৎকৃষ্টতর।
ভাববার সময় এসেছে। প্রতিবাদটা কোথা থেকে আসে—বোধ ? মস্তিষ্ক? মুঠো? না বাহুবল? আসলে মানুষ আদপে শান্তিপ্রিয়। পিঠ বাঁচা'ন পলায়নবৃত্তি সুশীল সমাজকে যতটা পঙ্গুত্ব দিয়েছে তার অধিক দিয়েছে বিনোদনের টোপ।দর্শকের কাজ হাততালি দেওয়া। আরেকটু উচ্চকিত হলে দু’একটা সিটি-ও। শীত আকাঙ্খিত, শীত গুহাভিমুখী। শীত সত্যিকে মিথ্যের জ্যাকেট পরিয়ে দিয়ে ব্র্যান্ড ম্যানিয়াক কফি মগ।
তুমি আমি’র মাঝখানে যে ফায়ার-প্লেস সেটা সৌখিনতার মনোগ্রাম। এই বৈকল্যের কাছে অসহায় মানুষ অগ্নি-নির্বাপক আপোষ। অন্যথা হলে প্রতিবাদের মাশুল ট্র্যান্সফারের চিঠি ধরিয়ে দেবে। গণধর্ষণের সরেজমিন তদন্ত আর্তকে চিরুনিতল্লাশ করবে, ঘটনার অনুপুঙ্খ নগ্ন করবে জনআদালতে। মনোবিদ চ্যানেলে সমাজের এই ব্যধি বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত রাখবেন। অন্ধকারে পিছন ফিরে বসে থাকা ভিক্টিম এক খপ্পর থেকে আরেক খপ্পরে। তারপর ফিরে এসে পায়ের তলার অবলম্বনটাকে সরিয়ে দিয়ে হ্যাং।আবার পোস্টমর্টম।
একটা ঝোরার মুখে কয়েকটা বোল্ডার গড়িয়ে দিয়ে শাসন করছে গতিপথ। যদিও বিস্মিত নই।দাবী দাওয়ার সংসারে অবুঝ অনটন বুঝে সুখদা বরদা হয়ে বিসর্জনের পরবর্তী অধ্যায়। প্রতিদিন ভাসানের পরই একটা স্তব্ধতা ঘাটের অন্ধকারে পরিমিত হয়। চলাচল থেমে গেলে বাস্তুভিটে দরজা খুলে দেয়। ঘর ও বাসা সেখানে তুলনামূলক। দু’পক্ষের দোলাচলে যে নীরবতা – তাদের ঘুম পাড়িয়ে সিন্দুক খোলার আয়োজন। সদ্যজাতরা মুখ গুঁজে অভিমানে। সমস্ত রসদ ফুরিয়ে গেছে বলেই তো বেবিফুড। মাপা সময় থেকে মাপা কথারা বাকি রাত একটা জানলাকেই জেনেছে জেরুজালেম। একটা নির্দিষ্ট তারাকেই ধ্রুবক।ইঞ্জিনের ধোঁয়ায় প্রতিবেশী ছাদে হারিয়ে যায় চাঁদ।
জোড়া লাগাবার কিছু পদ্ধতি থাকে। অনুশোচনা বা বিবেক পরমুখাপেক্ষী। সামনে রাখা রয়েছে অ্যাডেসিভ, সেলোটেপ আরও সব বাজার চলতি জোড়া লাগা। ক্রোধ নাস্তিক অথবা আস্তিককে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে প্রমাণ করেছে অস্তিত্ববাদের পরাকাষ্ঠাকে। আসলে অস্তিত্বের আস্তিক অথবা নাস্তিক হিসেবে আলাদা কোনও ফুট নোট নেই। একটা ইমারত ভেঙে যাচ্ছে দেখে ক্যামেরার ভূমিকায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।সম্পর্কের ফয়সলার দিনে আদালতে পাড়া প্রতিবেশীর ভিড়ে কনুই সক্রিয়। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা সন্দেহ, বিশ্বাস, কনডোম, ডুপ্লিকেট চাবি বা সিসিটিভি, আপাতত তারা ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের এক্তিয়ারে।
এই এক্তিয়ার অথবা চিহ্নিত এলাকার বাইরে যে দ্বিতীয় পৃথিবী বা ভুবন- কৌতূহল সেখানেই।পরিশ্রমের বিকল্প পন্থা হিসেবে যা নির্ধারিত তার তাগিদকে শাসন করছে একনায়কতন্ত্র। সেক্ষেত্রে একার পক্ষে কতটুকু সম্ভব? বিপণনযোগ্য স্তুতি খোলা বাজারের বাম্পার অফার। মানুষ ভীত মানুষের থেকেই, গৃহপালিতের কাছে নিশ্চিন্ত।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

রা জা

দেবপ্রিয়ার জন্য শেষবার

কার জন্য গুছিয়ে রাখব মিথ্যে রঙের সমাহার? কী করেই বা ছবি আঁকব?

রক্তদানের আছিলায় আবার দেখে ফেলেছি এ শরীরের সমস্ত ফ্যাকাশে।আজও ধবধবে ক্যানভাস জড়িয়ে শুয়ে থাকব।আমার  ঘুমহীনতা এমন এক সাদার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ,যার সঙ্গে হাসপাতাল,ঘোলাটে নার্স,বাবার মৃত চোখ এমন কী মায়ের নিভে আসা সিঁথির তুলনাও অসম্ভব।আমার ভয়াবহ সফেদ অন্ধকার জানান দিচ্ছে, সব রাতই অন্নসংস্থানের রূপকথা নয়।কোনো কোনো খিদের বিপরীতে তোমারই মতো দূর-দূরান্তে থমকে থাকে রুটির আশ্বাস



স ন্দী প ন  দ ত্ত

শিল্প

যেকোনও আঘাতেরই ডাকনাম ভালোবাসা হতে পারে
ক্ষত হয়ে যেতে পারে আশ্চর্য অলংকার
ঘৃণা ও হিংসার বিপরীতে বিস্ময়কর টিকে যায় ভালো গাছ
ভাঙনকে কেউ পলি ভাবতেই পারে

এসবই আছে যা এখনও অবাক করে
হতাশ, অবসাদগ্রস্থ, বিষণ্ণ মানুষ
বিচ্ছেদ, খিদে ও মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে

ব্যর্থ বা অমার্জনীয় প্রেমিকও
লিখতে পারে প্রেমের কবিতা

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ঈ শি তা  দে  স র কা র

নিখোঁজ নন্দিনী

সেখানে পথ নেই কোনো।
শপথ ছিলো এক কিংবা দুই;
শরীরে বাঁশির ক্ষত রেখেছে রাখাল;
মাধুকরী দেখছে অপমানের যাত্রাপালা-
আমি কুশিলব।
থার্ড বেলের অভ্যেসে রাতের পায়চারি দেখি।
দেখি সব রাস্তাই গলির কাছে জিরোয়;
দোতারা রঙের ঘুম কুড়োয় ক্লান্ত জমিন।
আমি কুড়োই একটা আধখাওয়া ভবিষ্যৎ -
ভাত মাখি বাসি অতীত আর ঠোঁটের আস্বাদে;
কান্না গিলি; কুলকুচি করি;
বাইরে ফেলি না।
অনুর্বর কান্না মাটিকে পোয়াতি করেনি কোনদিন।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সু কৃতি  সি ক দা র

শিরালিপি

সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়া নদী
ঢেউ গিলে কবিতা বানায়।
বুকের আঁধারে তবু তার
হুবহু বেলুন ফুলে আছে।
২.
মায়া সভ‍্যতার লিপিগুলি
স্রোতের তলায় গড়ে ঘর।
হাওয়া তার কতটুকু বোঝে!
জলের উপরি তলে সখি
আলোর মহীমা ভেঙে যায়!
৩.
নিজেকে নিংড়াই…
তুমিও স্নানের পর চুল শুকাও।
শুষ্কতা পেরিয়ে গেলে ঢেউ
সিঁড়ি ভেঙে নেমে যায় নিচে।
উষ্ণতা থাকে না তবু আঙুলের ছাপ
দরজায় রেখে গেছে কেউ।
নদীও জানে না তার স্রোতের ভিতরে
কত ঢেউ বুদ হয়ে আছে,
ফাঁক করে পাহাড় দুখানি
আমিও আকার পাই নিরাকার প্রেমে।





মো না লি সা  চ ট্টো পা ধ্যা য়

সমুদ্রের নোনা ডাক  ১

নীলের ভিতর সুর বুনেছে গাছের ছায়াপাখি  বকুলঘ্রাণের রাতে  নদীর জোনাক ,
আবীররঙিন জেনে নিশীথ পাখিও জাগে রাত
নতুনের জলভাঙা মাস বৃষ্টি নেই
এখানে  ফুলের মধু  পরাগ মিলনে নাচে
জন্মকাল এক মর্মে লাগে রং
এই ভরা জোছনায়
সমুদ্রের নোনাডাক নিশি দোল
যে প্রাণ গাছের মত খালি গায়ে সোজা
তার সাদা  বুকে মাথা রাখি
মনখারাপের রাত আসে --
পাথরের ফুলে ফুলে যদি বকুল জন্মায়
প্রশ্ন ভুলে ময়ূরীর ডাক শুনি ।
জীবন থমকে যায়
মানুষের চেয়ে থাকা মানুষের মনে
সমুদ্রপাখিরা ডাক দিয়ে যায়
পরজন্ম আমাদের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

দু র্জ য়  দা স

বসন্ত ১

হাওয়ায় খাবি খাওয়া দুপুর এই। খস খস শব্দের মানচিত্র। বিকল্প সদর ভাঙছে রঙ। তারিখ উথলে ওঠা লিটমাস। হাত বোলাও জারুল। প্রশ্রয়ের ভিতর মিহি হচ্ছে পলাশ। অবকাশ একপ্রকার খসে যাওয়া। মন কেমন করা অবনমন। শুষে নিচ্ছে। লকলকে লাল ফোটাচ্ছে জনপথ।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

চ ন্দ্রা ণী  গো স্বা মী

ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়

একান্ত সংগোপনে একটি চমৎকারের ভিতর
লিখেছিলে, যদিদং হৃদয়ং----

তদিদং মম বলার পর
রোদেরা ছদ্মনামে মেঘ হয়ে যায়।

ক্রমশ রাত প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠলে
তুমুল কলোরলে নির্লজ্জ নদী চাঁদের পাশে বসে

অদ্ভুত ঘুমের ভেতর মাঝি দাঁড় বায়।
জোনাকি নেভে জ্বলে। সাথে ছেঁড়া ছেঁড়া লোভ।

চরাচর জুড়ে চুম্বনের গন্ধে মনখারাপ মাখামাখি ;

বাতাসে ভেসে আসা দু'এক কলি রবীন্দ্রনাথ
নিঃস্ব করে বলে যায়, "ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় ..."

তবুও কেন যে নিশাচরের ডানায় টলটল করে বাইশে শ্রাবণের শোক!






অ ভি শ্রু তি  রা য়

তীব্র ভৈরব থেকে

স্তব্ধতা রেখোনা পাতাটির ওপর।
কিছুটা আলো রাখো
আর
ফোঁটাফোঁটা জলীয় মনস্কতা
স্নানঘর রাখো
পত্রজালিকা জুড়ে।
প্রতিটা স্নানের পর কোমল হয়  "রে", "ধা"
প্রতিটা স্পর্শের পর
নাভিগান শুরু হয়।
পাতা ঝরার শব্দ জুড়ে
সুর নীচু হয়ে আসে


------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

রি য়া  স র কা র

একটা সময় পর

 ভীড় মাঝে নিস্তব্ধতার গ্রাস বৃহত্তর
 লেখা ক্রমশ আরও অগোছালো
আজকাল আর পথ খুঁজতে মন চায় না,
  দিশাহীন পথ আবেশেই চোখ মুদি...
ভালো মন্দের দাড়িপাল্লা না হয় শূন্যই থাক,
     তার অতলতায় হোক মুক্তি ।
অবহেলা আর বেকারত্বে নাড়ী টনটন করে,
      ছিঁড়ে আসতে চায় একরাশ চিৎকার।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সৌ র ভী  রা য়

তুমি চলে গেলে

তুমি চলে গেলে
আমি কষ্ট পাই,
ছিঁড়ে যায় বানানো কড়ির মালা।
মনে হয় একলা চলে যাই বনে
রেখে আছি অপমান, ঠকে যাওয়া দুঃখগুলো
বেঁধে আসি লাল কাপড়
বটের ডালে
বলে আসি, ঠাকুর দেখো দুঃখগুলো যেন আর রোদ হয়ে না ফেরে।
তুমি অন্যের হয়ে গেছ যবে
সেদিনই ছিঁড়েছিল সুতো,
বিঁধেছিল ;
কেবল কেউ আর তা বাঁধেনি।
তারপর অনেক অনেক অনেক
দিন বয়ে গেলে, ভ্রম-বিষ ফুরোলে
ফিরে যাই একা সে বনে ; দেখি
ফুটে আছে বসন্তের প্রথম পলাশ, ছিঁড়ে যাওয়া কড়ির মালা থেকে শুধু কড়ি কুঁড়িয়ে নিই।
তুমি চলে গেলে
আমি কষ্ট পাই,
বহুকাল পরে সেগুলোই
পলাশ হয়ে ফোটে
স্মৃতিতে; বসন্তে...

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

উ জ্জ্ব ল  বর্ম  ন

নদীর ধর্ম

এঘর দিয়ে ওঘর দিয়ে সেঘর দিয়ে
একটাই নদী বয়ে যায়,
শত্রু মিত্র সকলের তৃষ্ণা মেটায়
আমিত্বের পতন ঘটায়।
নদীর কাছে গিয়ে বসলে খুব সহজেই নদীর ধর্ম চেনা যায়
যখন দেখি নদীর ধর্ম অধর্ম।






Lamahatta


দে ব মি ত্রা  চৌ ধু রী

মুখোমুখি মূহুর্তরা

ছোট্ট টেবিলটাতে মুখোমুখি বসে,
আমরা কাটিয়ে দিই এক-একটা সংসার।
আমি আর বন্ধু আমার...

মাঝে মাঝে আগুনের মতো হাত তুলে,
ও আমাকে ঘিরে ঘিরে নাচে__

একদিন সব তাপ ছাই হয়ে এলে,
বন্ধুটি নদী হয়।
আর আমি রূপ ধরি অববাহিকার...

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

অ ন ন্যা  দা শ গু প্ত

ঠিক তোমার মতো

তোমার মতো একটা দিন খুঁজে পাইনি যে দিনে আমি অলস গায়ে রোদ পোহাব।

একটাও বিকেল পাইনি
যে বিকেলে বাউল গান শোনাতে আসবে...

ঈদের দিনে তোমার মত করে
কেউ আসেনি সেমাই হাতে,

আমার শীতের দুপুরে
তোমার মত করে ভাত বেড়ে
বসে থাকেনি কেউ।

অনেক বছর পার হল জানো,
কেউ তোমার মত ভুখা পেটে
খাবার জোগাবার আশ্বাস দেয়নি।


--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

অ র্ঘ্য দী প  আ চা র্য্য

কোল্যাটারাল

জোনাকিজন্মের পরের সেরা ছবি,
আলোতে ফুটে আছে অবুঝ গাল।
আঘাতে হেসে বলে কুয়াশাবান্ধবী-
"ড্যমেজ? সে তো সবই কোল্যাটারাল!"

মৃত্যু দিয়ে আয়ু করেছে যারা বিমা,
কফিতে চিনি মিশে দুঃখ হোক।
আমরা বিখ্যাত জেনেছি হিরোশিমা,
হৃদয়ই আসলে তো বিস্ফোরক!

যে কোনও সাদা পাতা গল্প হতে পারে,
খেয়ালি এলোচুলে বাহারি ছাদ।
এখনও রাত হলে ক্লান্ত রোজগারে-
অফিস থেকে হেঁটে ফেরে বিষাদ।

মায়াবী ডাকনামই স্মৃতিতে রেখে দিও,  
অধরা মাধুরিতে মিশাব ঠিক।
প্রতিটি চুমু ছিল অবিস্মরণীয়,
প্রতিটি তুমি ছিলে অলৌকিক...

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শ ঙ্খ দী প  মা হা ত

জীবন পথ

এক সরু পথ, সরু টানেল,
পথ চলে যায়, বহুদূর।
টানেল বেয়ে নামতে থাকে
আনন্দের অশ্রুজল।

ক্রমশ ভেবে চলি,
আমার রন্ধ্রে কোন্ অদৃশ্য সবুজ পাতা!
সময় কিনেছি, হাসি দিয়ে,
মুহুর্ত মেখে,

তবে কি এখন যাওয়ার পালা?

হতে পারে। যদিও এবার,
সরু পথ, সরু টানেল বেয়ে
নামতে থাকে বিষাদের সুর।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

স ত্তা প্রি য়  ব র্ম ন

শোক

কেউ মরে গেলেই ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে ক্ষতিপূরণের ছলে পুরস্কার ঘোষণা করে যাও
মৃতদেহগুলি বিজ্ঞাপিত দেওয়ালে নির্বাচনের প্রচার চালায়
একটি সিন্ডিকেটের ভাঙনে অন্য একটি দাঁড়িয়ে যায় পুরুষাঙ্গের মত -
আমরাও এমন আত্মস্বার্থী প্রতিবারই মদের গন্ধে ভুলে যাই প্রিয়জনের মৃত্যুশোক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ন ব কু মা র  পো দ্দা র

আফিম

ভয় দিয়েছ পেটে ও পিঠে
প্রাচীন উতসব চেয়ে আছে
হায়নাদের নগরে
দাঁতের সৌজন্যে দৌঁড় বাড়ছে
বিষের গামছা ধুয়ে নেব জলে।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

টু ম্পা  ভ ট্টা চা র্য্য

স্বপ্ন দেখি তাই

কল্পনা আছে বলে
দূরে থেকেও কাছে পাই
কল্পো সীমানায়।

অনুভূতি আছে বলে
অনুভবে ছুঁয়ে যাও অদৃশ্যতায়
কখনো চিন্তায় কখনো মৌনতায়।

ভাবনা আছে বলে
ফিরে যাই অতীতের সেই দিনগুলোই
যেখানে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো খুঁজে বেড়াই।

স্বপ্ন আছে বলে
আজও স্বপ্ন দেখি তাই
হাজারও লোকের ভীড়ে খুঁজে পাব তোমায়
সেদিন অপলক তৃষ্ণার্থ চোখে চোখ রেখে
কথা হবে দৃষ্টির মগ্নতায়।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বি ষ্ণু  চ ক্র ব র্তী

ভালো থেকো ভালোবাসা

তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে
হেরে যেতে থাকি
ভালোবাসা যায়না।
পুড়ে যেতে যেতে বলতে
থাকি, ভালো থেকো।
ভালো রাখতে পারিনি
শুধু মুঠো মুঠো অভিমান
ভারী করেছে রাতের বাতাস।
এবার তবে পল্লবিত হাসনুহানা
সুবাস ছড়াবে বিছানাঘরে?
কোচকানো চাদরে আমার
গন্ধ, ভুল করে মিশে যায় যদি
তাতে রাতটা কি
অভিশপ্ত হবে তোমার?
আমি ছিলাম না কোনোদিন
ভেবে নিও নাহয় ‌তখন,
ডুবে যেতে-যেতে ভালোবাসার বুকে।
মৈথুনে লিপ্ত হতে গিয়ে যখন
চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়বে জল,
আমি তখন চাঁদের আলো।
চুলে তোমার বিলি কাটতে কাটতে
প্রেমিক যখন কাছে টানবে
খাঁ খাঁ করা চিৎকার যদি
ভেসে আসে কানে, উড়িয়ে
দিও ফুৎকারে, যেমন
করেছিলে আট বছর আগে।
ভালোবাসার দাবি নিয়ে
পথিক তখন বজ্রাহত,
ভুলে যেও কখনো কেউ-
গোলাপ দিয়ে তোমায় ছুঁতো।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বি বে ক  চৌ ধু রী

আততায়ী বন্দী হলে যুদ্ধ শেষ হয়

কে জানে যুদ্ধবন্দীরা কি কাজে লাগে!
তবুও, সমস্ত সকাল জুড়ে, সমস্ত রাত্রি ঘিরে
ওঁত পেতে থাকি ভয়ার্ত মুখের খোঁজে;
ওদিকে আমাদের ছায়ার প্রাচীরেই,
অচেনা অন্ধকার ঘুঁটে দিচ্ছিল,
কাঁচা গন্ধ শ্বাসরোধী হতেই বুঝলাম,
আমরাও যুদ্ধবন্দী।

আততায়ী বন্দী হলে যুদ্ধ শেষ হয়।

হয়তো যুদ্ধ শেষ__ ভিতরে ভিতরে,
যুদ্ধের আশ্রয় গড়ছি, নির্বোধ কপাট
কী থাকবে দুর্গের পেটে,
স্বর্ণগাভী, ধর্ম না লোভ?

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শ্রে য় সী  চ্যা টা র্জী

 দরজা 

প্রত্যেক মানুষেরই একটা দরজা থাকা উচিৎ,
যেখানে এসে সে দাঁড়াবে,
হাওয়া নেবে,গাছেদের দেখবে,
পাখিদের দেখবে ।

সে দাঁড়িয়ে কারোর কথা মনে করবে,
অথবা কিছুক্ষণের জন্য,
সব কথা ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশকে দেখবে শুধুই,
একটা সময়ের পর ক্লান্ত হয়ে
হয়তো বসে পড়বে দরজার সামনে ।

তবুও থাকুক একটা দরজা,
সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর জন্য
রোদের সাথে লুকোচুরি খেলার জন্য,
থাকুক একটা অদৃশ্য,কাঠহীণ দরজা,
যেটা পাল্লাহীন হবে।

বৃষ্টিতে জলের ছিটে আসলে
না হয় সরেই যাবো,
আর যাই হোক কাকভেজার মতো ভিজবো নাহ!

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শা ন্তা  মা রি য়া

নেতাজি ফিরে আসবেন

ছোটবেলায় মা বলেছিলেন,
নেতাজি ফিরে আসবেন।
আর ফিরে আসলেই,
সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
মা ফিরে পাবেন,
বালিগঞ্জের বাড়ি, বাক্সভর্তি কাচের পুতুল,
ফেলে আসা শৈশব, অ্যালসেশিয়ান কুকুর।
এরপর, আমিও স্বপ্ন দেখেছি
নেতাজি ফিরে আসবেন।
আর ফিরে আসলেই
সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
সীমান্তে চোরাচালান, ধানক্ষেতে পঙ্গপাল, কাঁটাতারে ঝুলে থাকা লাশ,
কিচ্ছু থাকবে না।
নেতাজি ফিরে আসলেই
হিমালয় থেকে সুন্দরবন
উদ্ভাসিত নকশায়, বালুচরী সংগীতে।
নেতাজি ফিরে আসবেন
স্বপ্নটা আমি এখনও
মাঝে মাঝে দেখি
ভীষণ পুরনো, সাদাকালো ধূসরিত পূর্বপ্রজন্মের স্বপ্ন।
যে স্বপ্নে কাঁটাতারগুলো মুছে যায়, এক হয়ে যায়
ঢাকা-কলকাতা।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

না জি য়া  নি গা র

কাকের খরিদ্দার

কতোটা প্রয়োজনে শেকড় চিবিয়ে খায় কাকের খরিদ্দার!
ভাঙা আয়নায় মুখশশীর কারুকাজে শিকারীর তীর।

কাজলের পানিতে ভেসে যায় শামুকের খোলস।
রক্ষিতার আঁচলে বীর্য মোছে আদম সন্তান
জাতের কাজুবাদাম খায় ধর্মমুখোশ!

পালতোলা নৌকোয় ভাসে জীবনের খেলাঘর
স্বার্থের জান্নাতে বসে দাবার গুটি পালটায়
ঈশ্বরেরা!
না বোঝার ভান করে জগৎ গিলে খায় অন্ধের দল।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সিরিজ কবিতা:-


সো না লী  চ ক্র ব র্তী

পদ্ধতি

১| শুধু আধ পোড়া কাঠিটা জানতে পারে কতটা দহন জমলে আগুন দিয়ে নেভাতে হয়...

২| অপরূপ লাল নদী এক, স্থির। এই এক দোষ, জল যেমত উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বেইমান বয়ে যেতে পারে না...

৩| সামান্য কানকো আর ফুলকাটিকে কী ভীষণ ঈর্ষা হয় শ্যাওলা আঁকড়ে পাথর হয়ে যাওয়ার সময়...

৪| মেঘ আর দেহ জুড়ে অদ্ভুত পাখিয়ানা জাগে ভারহীন তলিয়ে যেতে খাদের অন্ধ আদরে...

৫| শিরায় শিরায় প্লাবন আর হৃদপদ্মে ঝড় প্রবণতা, শূন্য একটি বিন্দুও গরলের অধিক কার্যকরী, চাণক্য বলেননি কখনো...

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কৌ শি ক  জো য়া র দা র

বসন্তের কবিতাগুলি  

বসন্ত ১

জানালা কেন খুলে রাখো পুরনো অভ্যেসে

ভেতরে আগুন, চেনা গান

পোড়া আপেলের গন্ধে পাহারা ভুলেছে পুলিশ

আমার কোনো ফোন-নম্বর মনে নেই

ফিরে এসে দেখে যাবো ভোরের কঙ্কাল


বসন্ত ২

আমি যেখানে থাকি তার দক্ষিণে

কয়েকটা শহর আর অনেকগুলো নদী পেরোলেই

ডায়মণ্ডহারবার

সমুদ্রের হাওয়া আর সস্তায় ভালো হোটেলের গল্প

আমাকে অনেকে বলেছে, কিন্তু

এ জন্মে সেখানে আমার আর যাওয়া হলো না

উত্তরের জানালায় মরা আলো, ঝাপসা কার্শিয়াং

ওষুধ ওষুধ গন্ধে আমি এখন

পুরনো ক্যালেন্ডারে পাখি পুষি, দানা দিই।


বসন্ত ৩

ইস্কুল ছুটি হলে

সবাই বিকেল ধরতে ছোটে

আমি অপেক্ষা করি বিরতির, জেব্রা ক্রসিং

 

তারপর ফুলওয়ালীর দোকান থেকে

কামারশালা পর্যন্ত হেঁটে যাই

একটা গোলাপ রোজ রেখে আসি

হাতুড়ির নীচে

প্রতিদিন বিকেল হয়, প্রতিদিন বসন্ত

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

প ঙ্ক জ  ঘো ষ

শহর সিরিজ


(২২)

আমাদের ঘুম পায় ভীষণ
আমাদের জানালা দিয়ে আকাশ দেখ যায় না
দূরে দূরে কোনও মানুষও দেখিনা
কে যেন মাথায় হাত রাখে
আর মন্ত্রধ্বনি শুনি অবিরাম।

 (২৮)

গাছে গাছে ঝোলানো থাকে নিষিদ্ধ পরোয়ানা
পাতা ডাল শুকিয়ে গাছ বাকল হারায়
চারিদিকে ঘুরে বেড়ায় মন্ত্রমুগ্ধ অসংখ্য পুতুল
শহর বহুদিন ডার্করুমে মরে পড়ে আছে
এ যুগের গান্ধারী সব কাপড়ে ঢেকে মুখ।
  

 (৩৬)

উৎসবে মাতে সমস্ত শহর
ঘুমের আড়ালে খোঁজে শিরদাঁড়াহীন আশ্রয়
চোখ চুরি যায়, খোওয়া যায় হাত
বোবাদের ভিড়ে পথ ভরে ওঠে
আর দিকে দিকে পাতাহীন গাছ পুড়ে যায়।

 (৩৭)

ভাঙাচোরা দিন নিয়ে তবু বেঁচে থাকি
নিজেকে গুটিয়ে নিই শামুকের মতো
আলগোছে তুলে রাখি মুষ্টিবদ্ধ হাত
একা আয়নাহীন ঘরে জীবন্ত শবদেহ
নিজেকে অন্ধ করে নির্বাসিত হই।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


গদ্য:-

পা র্থ সা র থী  লা হি ড়ী

জলপাইপাতার মুকুট  

সমীরদা হঠাৎ উদ্ভ্রান্তের মত চিৎকার করতে করতে যখন ঘরে এসে ঢুকল তখন শুভম ছিল ইনকা যাজকদের ঘেরাটোপে একটা পাহাড়ি গুহায়। তাকে সাজানো হয়েছে সাদা রেশম কাপড়ে, সোনার মালায়, ফুলে আর জলপাই পাতায়। সভ্যতার বিশ্বাস অনুযায়ী সে ইনকাদের ঈশ্বর হতে প্রস্তুত হচ্ছে। ধূপধুনোর আশ্চর্য লেগে আছে তার শরীর জুড়ে। সুগন্ধি মধু সে পান করেছে, এখন ঘুম পাচ্ছে, এই ঘুম তার জীবনের শেষ ঘুম। এই ঘুম তাকে ঈশ্বর বানিয়ে তুলবে। ইনকা যেন শেষ হয় না। এরকম আচ্ছন্ন বসে থাকা শুভমকে প্রায় টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এল সমীরদা, বলল দেখ –


আই টি ইন্সটিটিউটের গেটের সামনে প্রাচীন এক মেহগিনি বৃক্ষ। ছেলেবেলায় কে যেন বলেছিল, এখন আর তাকে মনে নেই, এ-গাছের কাঠ দিয়ে নাকি বন্দুকের বাঁট তৈরি হয়। নারীর মত যে গাছ, যার কাছে চিরকাল নতজানু হওয়া যায় অথচ সেই ছেলেবেলা থেকে গাছটাকে দেখলেই শুভমের অযাচিত মৃত্যুকে মনে পড়ে। একারনেই কি ও এই গাছটাকে এড়িয়ে যায়? এই ফাগুনে প্রতিদিন সক্কাল সক্কাল এ বি পি সি মাঠের ওপারে কাঞ্চনজঙ্ঘা, এবছর যেন আরও কাছে, আরও সোনালী আরও একবার বেঁচে ওঠার তুমুল কিন্তু প্রতিদিন সক্কাল সক্কাল ওই গাছটা, কিছুতেই এড়ানো যায় না। ও একদম ভালবাসত না গাছটাকে। মৃত্যু মনে হত। সোজা শক্ত বিস্তৃত এই গাছটাতেও যখন ফাগুনশেষের হাওয়া এসে লাগে সেও দোল খায়। অদ্ভুত! সেও ফুল ফোটাতে চায়। গা-ঝারা দিয়ে সেও চায় নতুন করে সাজতে। আজকে কি এরকম ভাবছে শুভম না কি অন্য রকম, অন্য কিছু।


সমীরদা বলছে, অবিরাম কেমন পাতা ঝরে পড়ছে দেখ।


অবিরাম, দীর্ঘক্ষণ ধরে পাতা ঝরে যাচ্ছে … অজস্র অপার …


রঙ্গোলী বাতাসে অমলতাস গাছটা দুলছে। ওদিকে একবার তাকায় শুভম,…… সবজেহলুদ ...


পাতাদের ডানা নেই তাই তারা কেউ পাখি না, পাখি হলে উড়ে যেত। যেহেতু পাতারা পাখি নয় তাই ঝরে পড়ছে। মরে গেলে পাখিরাও এরকম খসে পড়ে যায়।


পাতা ঝরছে, পাতা ঝরে পড়ছে, ডানাহীন অজস্র আকাশচারী, … ঝরে পড়ার মধ্যেও তো বিভিন্ন ধরণের ভল্ট থাকে, ট্র্যাপিজ থাকে। আমরা তাকে কি বলে যেন ডাকি? কিন্তু প্রত্যেকটা ঝরে পড়ার ভল্ট বা ট্র্যাপিজ এক একরকমের হলেও খালি চোখে এই দোলনগুলোর ভেদাভেদ ধরা যায় না, কিন্তু দুলছে যে তা বোঝা যায়। এই দোলনটা কমন। সব দোলন তো পড়া যায় না। মনে হয় সবই একইরকম। আসলটা যে কি...!


সাদামাটাভাবে পাতা ঝরছে, ঝরে পড়ছে। একজন রিক্সাচালক, মাথায় নোংরা কাপড়ের পাগড়ী তাতে গুঁজে রেখেছে চেরি ব্লসম, গোলাপি কাগজফুল, গাঁদা … মুখে মেখেছে নানান রঙের আবির। তার রিক্সায় কেউ ওঠে না। কে চায় এরকম এক অদ্ভুত দর্শন মানুষের উপর নির্ভর করতে? মানুষ জন্মগতভাবেই ইন্সিকিওর। সবসময়ই সে নির্ভরতা খোঁজে। মানুষ সাধারণত তার নিজের মধ্যেকার যে লক্ষণসমূহকে দেখতে পায় বা দেখতে চায় তার সাথে মিল না পেলে অপর অন্যজনকে অস্বাভাবিক বলে ভাবতে অভ্যস্থ। জলশহরের রাস্তায় যেখানে যেখানে ডিভাইডার হয়েছে সেখানে সেখানে সেই অস্বাভাবিক বা পাগলা রিক্সাওলাটা ফুলগাছ লাগিয়েছে। সংলগ্ন বাড়ির মানুষদের ডেকে ডেকে বলেছে, একটু জল দিতে পারিস না? স্বাভাবিক লোকেরা হাসে। সেই পাগল লোকটার সাথে একদিন শুভমের দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল অনেক্ষন। বলছিল বেঁচে থাকতে তার চারটা আর চারটা রুটি লাগে, দিনে চল্লিশ টাকা।


পাতারা ঝরছে, পাতারা ঝরে পড়ছে আর সেই পাগল লোকটা তার দুই বাহু ছড়িয়ে খেলছে আনি-মানি-জানিনা …… আহ্লাদে  আকাশের দিকে মুখ বাড়িয়ে দিয়েছে। আকাশ তাকে চুম দিয়ে দেয় এক দোল। তৎক্ষণাৎ যুগান্তের রূপান্তর ঘটে। শতশত জোনাকির নীলনীল আলো আঁধারির সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। মেঘলা মেয়ে, "লপ ডনসেলা"! সেই ইনকা রাজকন্যা, মাথায় জলপাইপাতার মুকুট, সুন্দরী সুলভ রেশমি পোশাক, আজও যা চেনাশোনা নিকটবর্তী গ্রিসীয় ফিনফিনে … ইনকা যাজক বলি বা যা কিছু ওরা, ওদের ক্রূরতা বা বিশ্বাসগুলোকে আজকে যে নামেই ডাকি না কেন সেই ক্রূরতা বা বিশ্বাসগুলোই লপ ডনসেলাকে আরও সুন্দর করেছে। ঈশ্বর আর সুন্দরের কোন পোশাক, আভরণ হয় না। ওরা উদাসীন, উদ্দাম উলঙ্গ। খোদা কসম … পাহাড় চূড়া, চেনা ঘাট, আহা! সম্রাট সহ সহচর রেখে বলেছিল … তোকে ভালবাসি … ইনকার পরিচিত নদীর স্রোত … সাদা ফর্সা রঙের পাল … বৈকন্ঠপুরের ঘুমঘুম আলো ভাসছে নদীতে … ক্রমশ ঈশ্বর হয়ে যাচ্ছে লপ ডনসেলা …   রক্ষা করবে ইনকার ভবিষ্যৎ। 

 
ঈশ্বর আনি-মানি-জানিনা খেলছে … ঝরা পাতাদের সাথে ঈশ্বর! এই খেলাই কি রঙ্গোলী - ঊর্মিলা মাতন্ডকর ......


“হায় রামা ইয়া ক্যা হুয়া
কিউ এইসে হামে সাতানে লাগে
তুম ইতনি প্যায়ারি হো সামন হামে কাবু ম্যায় কাইসে রাহু …
তেরি আইসে আদা পে তো ফিদা হুঁ ম্যায় …”


এই যে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের উপর সমস্ত শরীর রেখে বাহুদ্বয় ছড়িয়ে এইরকম শারীরিক পাকখাওয়াগুলোকেই কি ইন্টারমিজো বলে?


সুগন্ধি মধুর মুগ্ধতা পান করেছে যে সেই তো ঈশ্বর, সে তো মন্ত্রপূত, তার তো ঘুম-ঘুম ঘুম পাওয়ার কথা, ঘুম ভুলে সে কেন ঝরা পাতাদের দলে, পাতাদের ভল্ট বা ট্রাপিজের সাথে দুহাত খুলে দিয়েছে?


-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সু ম ন  ভ ট্টা চা র্য

বিভাজন হারে, ভালবাসা জেতে

সৌদি আরব থেকে ৮০ মেট্রিক টন লিকুইড অক্সিজেন গ্যাস ভারতে নিয়ে আসা হচ্ছে| নিয়ে আসা হচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার জন্য| আনা হচ্ছে গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরে| নিয়ে আসছে কেন্দ্রের শাসক দলের বিশেষ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আদানী শিল্পগোষ্ঠীর জাহাজ| ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফেই আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে এ কথা|

যদি মুসলিম দেশ সৌদি আরব থেকে অক্সিজেন এনে ভারতকে বাঁচতে হয়, তাহলে ভারতের হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে ওঠার কি হবে?

আমাদের কানের কাছে অহরহ বাজতে থাকা হিন্দু মুসলিম বিভাজন রেখার কি হবে?


এই যে এতদিন ধরে আমাদের বোঝানো হল আমাদের যাবতীয় সংকট মুসলিমদের জন্য, ওরা আমাদের সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে, সেই ন্যারেটিভ এর কি হবে? আমাদের গোটা অস্তিত্বে, মননে যে দেওয়াল তোলা হল, তার কি হবে? এই যে ভেবেছিলাম হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে যাবে, হিন্দুরা সবাই চাকরি পাবে, হিন্দুদের জন্য সস্তায় রান্নার গ্যাস আর পেট্রোল ডিজেল থাকবে, তার কি হবে? মুসলিম দেশ থেকে আনা অক্সিজেন এ নিঃশ্বাস নিয়ে যদি কোভিড রোগীদের বাঁচতে হয়,তাও আবার গুজরাটের কোভিড রোগীদের, তাহলে হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণাটা কেমন যেন বিবর্ণ দেখায় না?


এই যে আমাদের মাথার মধ্যে গেঁথে দেওয়া হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন, হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রমাগত ডাউনলোড হতে থাকা অমূল্য সব তথ্য, কোভিড নামক অতিমারী কি সেইসব কিছুকে একটু দূর্বল করে দিয়ে গেল? আবার করে আমরা ভাবব সব মানুষের রক্তের রং লাল, রোগ হলে সবাই মারা যায়....এবং এইরকম অতিমারীর সময় সবার, মৃতদের একইরকম যন্ত্রণা হয়?
নিশ্চিত নই|


কিন্তু এইটুকু বুঝি বিভাজনের একটা লম্বা রেখা খুব টানার চেষ্টা করা হয়| সেটা আসলে রাজনৈতিক কারণে| বা আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে ক্ষমতা দখলের জন্য| নিজের প্রভুত্ব কায়েম করার জন্য| কিছু মিথ্যা, কিছু কল্পিত নির্মাণ আর কিছু অর্ধসত্য দিয়ে আমাদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টা করা হয়| এবং আমরাও কখনও বোকা বাঙালি হিসেবে, কখনও অশিক্ষিত ভারতীয় রূপে, স্বামী বিবেকানন্দ যে ভারতীয়দের কথা বলে গিয়েছিলেন, সেই ভারতীয়রা নিজেদের মগজ ধোলাই হয়ে যেতে দিই| এটা আমাদের দেশের সমস্যা| শিক্ষার প্রসার না হওয়ার সমস্যা, সব মানুষের কাছে রোটি, কাপড়া ও মকান, অর্থাৎ জীবনধারনের জন্য নূন্যতম প্রয়োজনগুলি না থাকার সমস্যা| অর্থাৎ অভাব আছে বলেই আমাদের যুক্তি, বুদ্ধিগুলোকে ভোঁতা করে দিয়ে বিভাজনের দেওয়াল তুলতে আমাদের ব্যবহার করা হয়|


কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন ব্যবহৃত হই? কেন এই বিভাজনের দেওয়াল তুলতে দিই? যাঁরা সত্যিই পড়াশোনা জানেন না,তাঁরা ভুল বুঝলে না হয় সিস্টেমের দোষ বলা যায়| কিন্তু যাঁরা তথাকথিত শিক্ষিত, তাঁরা যখন বিভাজনের এই রেখায় পা দেন,তখন তো প্রশ্ন জাগেই, কেন এবং কেন ? আসলে তাঁরা নিজেদের সঙ্গে নিজেরা একটা অভিনয় করেন| নিজেদের কে বোঝান এই মিথ্যেগুলো বললে, বিভাজনের প্রাচীর তুলে দিতে পারলে লাভ হবে| কর্মক্ষেত্রে লাভ হবে, ব্যবসায় সুবিধে পাওয়া যাবে| এবং হয়তো কবি হিসেবেও সুবিধে পাওয়া যাবে, কাউকে কনুইয়ের গুঁতোয় একটু কাত করে দিয়ে|


এই জেনেবুঝে যাঁরা বিষপান করছেন, তাঁদের নিয়েই চিন্তা বেশি| যন্ত্রণা তাঁদের ও, সমাজের ও...

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বি বে কা ন ন্দ  ব সা ক

সিনেমাকে নিয়ে জড়িয়ে ঘুমোন চিত্র পরিচালক সোমনাথ সেন

সিনেমা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। সিনেমাকে নিয়ে জড়িয়ে ঘুমোন, আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁচে থাকেন। তাঁর প্রেমের, ভালোবাসার, সাধনার জায়গা সিনেমা। শুধু প্রচারসর্বস্ব নয়, মানুষের মনের দরজায় সিনেমা না পৌঁছলে সেই সিনেমা কালজয়ী হয় না, এমনটাই যাঁর সিনেমা সম্পর্কে অভিব্যক্তি তিনি চিত্র পরিচালক সোমনাথ সেন।

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরে জন্ম। বাবা প্রয়াত গৌরাঙ্গ সেন। মা প্রয়াত দেবী সেন। সোদপুর চন্দ্রচূড় হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর পানিহাটি কলেজে কলা বিভাগে পড়াশোনা করেন। স্কুল জীবন থেকেই অভিনয় অন্তপ্রাণ সোমনাথ। ফলে স্টুডিও পাড়ায় কোনও ছুতো পেলেই চলে যেতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নাটকের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। 'জীবনের বৃত্তকোণে', 'চিড়', 'গৃহযুদ্ধ' সহ একের পর এক একাঙ্ক নাটক লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। 'নাগরিক থিয়েটার' নামে নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। প্রায় ২০-২৫ টি একাঙ্ক নাটক লিখেছেন।
 সাধারণ ব্যবসায়ী পরিবার থেকে উঠে আসার জন্য লড়াই, জীবনযুদ্ধ তাঁর পিছু ছাড়েনি।ক্যামেরার পিছন থেকে সিনেমা পরিচালনা করতে গেলে যে দক্ষতা, যে প্রশিক্ষণ, যে গুণের অধিকারী হতে হয়, তার সবটাই পরিচালক সোমনাথের মধ্যে ছিল বলেই ধাপে ধাপে তিনি সাফল্যের সিঁড়ি টপকেছেন।
২০০০ সালে 'হাসির ফোয়ারা' নামে ধারাবাহিক  দিয়ে কেরিয়ারের উন্নতির প্রথম ধাপে পা রাখেন। চিন্ময় রায়, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, নিমু ভৌমিক সহ একাধিক তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী সমন্বয়ে ধারাবাহিক পরিচালনা করেন। তারা বাংলায় ধারাবাহিকটি সম্প্রচার হয়। তারপর 'প্রজাপতি' সহ বেশকিছু ধারাবাহিক পরিচালনা করেন তিনি।

  বড় পর্দায় তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি 'স্বার্থ'। সেই সময় যখন রোম্যান্টিক, অ্যাকশনধর্মী ছবিতে বাজার জমিয়ে রেখেছেন অন্যান্য পরিচালকরা, তখন 'স্বার্থ' ছবির মাধ্যমে পরিচালক সোমনাথ সেন সমাজের অবক্ষয়, অবিশ্বাসের ছবি তুলে ধরলেন। 'বেলাশেষে' ছবির মাধ্যমে শেষজীবনে মানুষের কী পরিণতি হয়, তা দেখিয়েছেন। 'সীমান্ত পেরিয়ে' ছবিতে মানুষের সঙ্গে মানুষকে মিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সীমান্ত তুলে দেওয়ার বার্তা দিতে চেয়েছেন। কখনও স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ, কখনও নেশার কবলে সমাজ কীভাবে নষ্ট হচ্ছে বা জীবনের দুর্বিপাকে পড়ে একটি মেয়ে নিষিদ্ধ পল্লিতে কাটানোর পর মূলস্রোতে ফিরতে গেলে কী সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাকে, তা নিয়ে তৈরি করেছেন ছবি। এভাবেই পরিচালক সোমনাথ সমাজ সচেতনতামূলক ছবি তৈরি করে সমাজকে বার্তা দিতে চেয়েছেন।
  তাঁর বেড়ে ওঠার মধ্যে যেহেতু সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, রাজেন তরফদার, বিমল রায়ের সিনেমা প্রভাব ফেলেছে, তাই অন্যধারার ছবির দিকেই তাঁর বরাবর আগ্রহ ছিল। তাতে অনেক ক্ষেত্রে বড় ব্যানার, বড় হাউস পাওয়ায় বেগ পেতে হয়েছে। তাতে কী? নীতির ক্ষেত্রে তিনি বিচ্যুত হননি। 'সবুরে মেওয়া ফলে' এই প্রবাদ বাক্যটি কিন্তু তার জীবনেও সত্য হয়ে উঠেছিল। 'বেলাশেষে' পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনার মাধ্যমে কেরিয়ারে যে টার্নিং পয়েন্ট এলো, তারপর আর পিছন ফেরেননি তিনি।

১৯ বছর ছবি পরিচালনার কাজে ডুবে রয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি, ৭০-এর কাছাকাছি টেলিছবি,  ২০-২৫ টি ধারাবাহিক পরিচালনা করেছেন। জীবনের শুরু থেকে কবিতা লেখা যার মজ্জায় ঢুকে গিয়েছিল সেই মানুষটি প্রকাশ করেছেন বেশকিছু কাব্যগ্রন্থ। গীতিকবিতায়ও সমধিক পরিচিত। রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে কুমার শানু,বাবুল সুপ্রিয়, মিস জোজোর মতো অনেক নামী দামি সঙ্গীতশিল্পীর জন্য গান লিখেছেন। এমনকী উত্তম দাসের কমেডি গানের বেশকিছু গীতিকবিতা তাঁর লেখা। তাই তিনি অনায়াসে গানের সঙ্গে চলচ্চিত্রের। চলচ্চিত্রের সঙ্গে কবিতার সংযোগ সৃষ্টি করতে পারেন। তাঁর শিল্পে কবিতা আর চলচ্চিত্র একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। তাঁর  শিল্পে প্রতিটি শব্দ জুড়ে যেমন পঙক্তি হয়, তারপর কবিতার জন্ম হয়, তেমনি প্রতিটি শর্ট জুড়ে দৃশ্য। একাধিক দৃশ্য জুড়ে একটি সিনেমা। কবিতা, গান হোক বা সিনেমা সহজ সংজ্ঞা দিয়ে তাঁর উপলব্ধির জগৎ। এই বৈশিষ্ট্যে সোমনাথ থেকে পরিচালক সোমনাথ সেনের জার্নি দর্শকের মনের দরজায় কড়া নাড়ে।



সোমনাথ সেন পরিচালিত সিনেমার পোষ্টার 

সোমনাথ সেন পরিচালিত সিনেমার পোষ্টার 


সোমনাথ সেন পরিচালিত সিনেমার পোষ্টার 

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ম হি বু ল  আ ল ম

প্রবাসে ফিরে দেখা স্বদেশ

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের শীতকালটাকে ঠিক শীতকাল মনে হয় না। শীতকালটা আসি আসি করেই চলে যায়। অথচ দীর্ঘ দেড়যুগ নিউজিল্যান্ডে বসবাসকালে আমরা যথার্থই শীতকাল পেয়েছি। ওখানকার দক্ষিণ দ্বীপের প্রায় প্রত্যেকটা শহরেই শীতকালে তুষারপাত হয়। কোথাও কোথাও তুষার জমা হয় প্রায় পনেরো-বিশ ইঞ্চির মতো। উত্তর দ্বীপেও কোনো কোনো শহরে তুষারপাত হয়। তবে উত্তর দ্বীপের যেসব শহরে তুষারপাত হয় না, সেই শহরগুলোতে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলে দেখা যায়, বাইরে হাল্কাস্তরে বা পুরুস্তরে বরফ জমে আছে। ঘাসের উপর হাঁটতে গেলে জুতার নিচে বরফ ভাঙে মচমচ শব্দ তোলে। এছাড়া শীতকালে সমস্ত পাতা ঝরে সারি সারি ম্যাপল গাছ বা ওক গাছগুলো দাঁড়িয়ে থাকে কেমন শুভ্র রমণীর মতো। তখন প্রকৃতিতে কী এক অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।

কুইন্সল্যান্ডের গোল্ড কোস্টে বসবাস করছি প্রায় ছয় বছর হলো। গোল্ড কোস্ট নিঃসন্দেহে একটা অপূর্ব সুন্দর শহর। অসংখ্য হ্রদ, শহরের উপকূল দিয়ে বয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটা ঝর্ণা ও নদী এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দীর্ঘ সৈকত। শহরটা যেন সাজানো হয়েছে স্বপ্নের মতো করে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সেই শীতকাল এবং ঘন কুয়াসায় বা তুষারপাতের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা পাতাঝরা ম্যাপল গাছ বা ওক গাছের শুভ্রতা এখানে মোটেও পরিলক্ষিত হয় না। তারপরও শীতকাল তো শীতকালই। আর সেই শীতকালে বিভিন্ন উৎসব হবে না, এটা তো হতেই পারে না। যেখানে যাই, যতদূরেই যাই, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে যে জড়িয়ে আছে বারো মাসে তেরো পার্বণ।

কিন্তু সেই বারোমাসে তেরো পার্বণের গল্প লিখতে গেলে এই নির্দিষ্ট পরিসরে তো শেষ হবে না। তাই এই পার্বণ বা উৎসব নিয়ে ছোট করে দু-একটা কথাই লিখি। এই তো সেদিন ব্রিসবেন গেলাম এক বন্ধুর বাসায়। সেখানে বেশ বড় করে ভর্তা উৎসব হলো। কত রকমের ভর্তা যে, শেষপর্যন্ত গুনে পঁচিশ পদের ভর্তা পেয়েছিলাম। একটা মজার ব্যাপার হলো, দুই যুগ আগে নিউজিল্যান্ড যখন আসি, আসার পরপর এক বাসায় নিমন্ত্রণ করেছিল। ওখানে পোলাও-কোর্মার সঙ্গে কয়েক পদের ভর্তা দেখে তো আমার চোখ চড়কগাছ! পোলাও-কোর্মার সঙ্গে ভর্তা কেন? পরে দেখি, এই পোলাও-কোর্মার সঙ্গে ভর্তা শুধু কারও বাসায়ই না, রীতিমতো উৎসব করেই আয়োজন করে। অথচ ছোটবেলায় জানতাম, ধনীরা খায় পোলাও-কোর্মা আর গরিবরা খায় ভর্তা আর মোটাচালের ভাত।

এখানে শীতে পিঠা উৎসব হয় বেশ জাঁকজমকভাবে, বেশ বড়সড় আয়োজন করে। এখানকার প্রতিটা শহরেই বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠন আছে। মূলত ওরাই বিভিন্ন কমিউনিটি হল ভাড়া করে পিঠা উৎসব, ভর্তা উৎসব, খিচুড়ি উৎসব, পান্তা ভাত উৎসব বা ঝাউভাত উৎসব করে থাকে। আমাদের বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস মতো জাতীয় উৎসবগুলো তো আছেই। এছাড়া পুজো, ঈদ, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, চৌদ্দই ফাল্গুন ইত্যাদি।

আমি পিঠা উৎসবের কথাই বলি। এসব উৎসবের আয়োজনটা আরও ভালো লাগে আমাদের গিন্নিদের রঙ ও বাহারের আধিক্য দেখে। টেবিলের পর টেবিল সাজানো থাকে পিঠা আর পিঠা। এত হরেকরকম পিঠা যে, কোনটা ছেড়ে কোনটা খাব, খুবই বিভ্রান্ত হয়ে যাই। বাংলাদেশে কখনও একত্রে এমন হরেকরকমের পিঠা দেখিনি। আমার মনে আছে, শীত-পার্বণে পিঠা খাওয়ার জন্য আমরা নানারবাড়ি চলে যেতাম। ওখানে নানিরা একেক সময় একেকরকমের পিঠা বানাতেন। সেইসব পিঠার মধ্যে প্রধান ছিল ভাঁপাপিঠা, চিতুইপিঠা বা পাকানপিঠা।

আমাদের নানারবাড়ি ছিল একেবারেই অজপাড়াগাঁয়ে, রসুলপুর। যে গ্রামে নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদ্যুৎ যায়নি। নানারবাড়ির উত্তরে ছিল একটা ছোট্টনদী, বুড়ি নদী। নদী পেরিয়ে উত্তর থেকে বয়ে আসত সাপের শিস দেওয়ার মতো হিন হিন বাতাস। রাতভর ডাহুকের ডাক-  কোয়াক কোয়াক, কোয়াক কোয়াক। আর শরীর হিম করে পেঁচা ডাকত- টুউব, টুউব, টুউব।

শীতকালে আমরা সবাই দলবেঁধে নানারবাড়িতে যেতাম। একই বয়সী মামাতো-খালাতো ভাইবোন মিলে আমরা দশ-পনেরোজন হতাম। আমাদের নানারা ছিলেন সম্পন্ন গৃহস্থ। ওঁদের রান্নাবান্নার জন্য আলাদা পাকের ঘর থাকলেও সবার বাড়িতেই ছিল বড় বড় খোলা হেঁশেল। সেইসব হেঁশেল মূলত বানানো হতো ধান সিদ্ধ করার জন্য। কিন্তু শীতকালে আমরা যখন নানারবাড়িতে যেতাম, তখন নানি বা খালার ওসব চুলায় পিঠা বানাতো।

রাতে যখন পিঠা বানানো হতো, তখন সবাই হেঁশেলের ধারে গোল হয়ে বসতাম। মুরুব্বীরা পিঠা বানাতো বলে ওঁরা বসতেন চুলার মুখের দিকে। আর আমরা আগুন পোহানোর জন্য দু’হাত মেলে দিয়ে উল্টোপার্শ্বে বসতাম। আগুনের লকলকে ধাঁচ, মাঝেমধ্যে উত্তরের বাতাসে উড়ে আসা ছাইকূট। মাথার উপর শীতের কুয়াসা। চিতুইপঠা বা ভাঁপাপিঠা বানানোর সময় মা-খালারা ভাগ্য পরীক্ষার জন্য আমাদের একেকজনের নাম নিতেন। যার ভাগ্য ভালো থাকত, তার নাম নেওয়া পিঠাটা ভেতরে সিদ্ধ হতো। কিন্তু যার ভাগ্য খারাপ ছিল, তার নাম নেওয়া পিঠাটা বরাবরই ভেতরে কাঁচা থেকে যেত। সে এক অদ্ভুত খেলা ছিল। একেকটা পিঠা বানানো হতো, আর আমরা উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। আমাদের ভেতর থাকত উৎকণ্ঠা। পিঠার ভেতর সিদ্ধ হলে আমরা খুশিতে আটখানা হয়ে যেতাম। আর পিঠার ভেতর কাঁচা থাকলে আমাদের চেহারা কীরকম পাংশু হয়ে যেত! কিন্তু হেঁশেলের উল্টোপাশে বসে নানি বা মা-খালার হাসতেন। ওঁদের সে-কী দিঘল হাসি!

আজ আমরা একদেশ থেকে অন্যদেশ, কোথায় থেকে কোথায় এসে থিতু হয়েছি! কিন্তু আমাদের সেই বাল্যকাল, সেই উৎসব-পার্বণ! এই বিদেশবিভূঁইতে পিঠা উৎসব বা ঈদ-পুজো-পার্বণে আমরা যেন সত্যি একটুকরো বাংলাদেশ হয়ে যাই। সেই শ্যামলিমা গ্রামের মতো বাংলাদেশ। 

গোল্ড কোস্ট শহর



-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ত ন্ম য়  ব সা ক

একটি বাঘের রচনা

ছোপছাপ ধর্মাবতার।লেজ ওয়ালা মিছিল।সুতরাং আমাদের পসরাগুলি ম্যানুফেস্টোর  মতো ঝুলন্ত।শীতকালীন ভালোবাসা নিয়ে আমাদের অরৈখিক মূল্যায়ণ।
রাগ থাকতে নেই মানুষের।নির্দিষ্ট করে এক বা একাধিক মনও থাকা বারণ।
হ্যাঁ ধর্মাবতার,সর্দার করে রাখা হয়েছে মানুষের মস্তিষ্কের বিপরীতে কঞ্চি হাতে এবং রাজ্য বা দেশে রামধনু হোক বা সাদাকালো কঞ্চির দাগ মাটিতে পড়বেই।
আমাদের একটা শহর আছে,মানে ল্যাম্পপোস্ট।আমাদের একটা গ্রাম আছে,মানে প্রজাপতি।আমাদের সেলাম আছে,বার্তায় ভরা পেট আছে,প্রতিবন্ধী চোখ আছে,চুম্বনে সেলাই করা ঠোঁট,সুড়সুড়ি দেওয়া হাত,চাকা লাগানো পা।সবটাই আপনার ধর্মাবতার।নাতিশীতোষ্ণ তৈলাক্ত জলবায়ুগুলি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,মতালম্বী নজর যেন অঘ্রানের গ্রাস,পৌষের ফ্যাতারুর মতো চিৎকার করে বলে ধর্ম্রাজ্যের রাজত্ব।বাতাস তখনও পতাকাওয়ালা,বাজি রাখা ভবিষ্যৎ থেকে আমরা এখন স্বপ্ন দেখি এল.ই.ডি স্ক্রিনে।

ভোর আসছে।পাখিরা ডাকবে খানিকটা ডালে বসবার জন্য।আপনি ব্রিফ নিয়ে নামকরা মঞ্চে উঠবেন।আমরা চিল,শকুন,কাক হয়ে উঠবো।দেশ বাঁচান ধর্মাবতার।কাসর-অস্ত্রাধারী ঘন্টা থেকে বাঁচান।গলার নলি দিয়ে তৈরী হচ্ছে কাগজ,আগামী মেঘ যাচ্ছে বেড়ে।অস্থির সূর্যদয় রাত হয়ে ফিরছে।আপনি আছেন ধর্মাবতার জেগে,এই জহ্লাদের মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশে।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কবিতা:-

কু হে লী  রা য় 

ব্যবধান

কি ভীষণ অহংকারে তুমি পাশ কাটিয়ে যাও,
একটার পর একটা সমুদ্র লুপ্ত হতে থাকে।
তুমি জানো না,
গাছের গায়ের রোদ্দুরটুকু ঠিক কতখানি দামি?
কতটুকু হাঁটলে চাঁদ ও সূর্যের ব্যবধান কমে আসে?
পারস্পরিক নিবিড়তাকে বাজি রাখা অতটা সহজ নয়,
ঠিক যতখানি কঠিন সুখ ও ঈশ্বর এর মধ্যে সম্পর্ক গড়া।
এযাবৎ দর্শন পাইনি কোনো অলৌকিকতার,
তবে তোমার মুখ অন্ধকারে ভেসে উঠেছে বারংবার।
নিদারুন উত্তাপ স্থিমিতো হয়ে গেছে,
স্তবগানও ভাষা হারিয়েছে।
কণ্ঠের সাথে তাল মেলেনি আর,
কাটাকুটি খেলায় শুধুই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বি দু ষী  পা ল

বৃষ্টি

আসলে বর্ষাতে আমি  মৃত কঙ্কাল দেখতে পাইনা
বর্ষার ভেজা আবহে আমি বাতাসের গন্ধ পাই ....
তাতে শুধু মিশে থাকে ছাই আর ছাই,
আর আকাশ জুড়ে ধূসর মেঘ।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সো ম না থ  গু হ

হিসেবের পাতা

আমি বললে যে কথা গুলো বলা হয়
আমরা বললে ঠিক সেগুলো হয় না
কিন্তু তারপরও আমাদের দাঁড়িয়ে থাকা
দাবী আদায়ের পিছে
মিছিলের পিছে
ধর্নার পিছে

সবকিছুর পরে বিকেল হওয়ার কথা
ভুল বোঝা গুলো ঘাড় থেকে নামার কথা
কিন্তু তা হয় না

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

তৌ ফি ক  জ হু র

বেড়াল

চারপাশের সব জানালাগুলো খুলে দেই
আসমান দেখি জমিন দেখি তারপর চোখ পড়ে
সাদা তুলতুলে বেড়ালটার উপর
মনে পড়ে, আমার বন্ধু বেড়াল নিয়ে লিখেছে ঢের

বেড়ালটা হাঁটছে বসন্তের বাতাস পাশে নিয়ে
সকালের একগোছা রোদ তার লেজে ঝুলছে
আমার চোখ বেড়ালটাকে অনুসরণ করে
বেড়াল এগিয়ে যাচ্ছে লাইব্রেরি পথে, অথচ
মহল্লার কুকুরগুলোর গুন্ডামিতে
এ রাস্তায় কখনো বেড়াল দেখিনি আমি।

রাস্তা পার হয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকে গেলো বেড়ালটা
আমি ধীরপায়ে লাইব্রেরিতে গেলাম
থরে থরে জ্ঞানের মশাল জ্বলছে
আমার চোখ বেড়ালটাকে খুঁজে পায়
একজন অধ্যাপকের সঙ্গে বসে বইয়ের পৃষ্ঠায় ডুবে আছে
তিনি  কি যেন বলছেন আর বেড়াল লেজ নাড়ছে

ধূলোপড়া শেলফগুলো সহসাই চকচক করতে লাগলো
লেজে করে বয়ে আনা গুচ্ছ রোদের আলোয়
অধ্যাপক সাহেবকে চিনে ফেলেছি
তিনি সান্ধ্যভাষায় কবিতা লিখেন
তাঁর কবিতার বিষয় বেড়াল ।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ধৃ তি রূ পা  দা স

আরশোলা-ভোটার

আরশোলারা উড়লে হঠাৎ সংসারে
মন বসে না কাব্যে তখন মন বসে না
সংসারী মন নিঃস্ব ছায়ার অন্ধকার
বুঝবে কেন? ভূত পাওয়া যায় চৈত্র সেলে!

আরশোলা আর ভূতের মধ্যে যোগ আছে
যোগ ভোটারের, অন্ধকারের টিপ-বোতাম
পক্ষহীনা ঈশ্বরে তাই মিশলো নাকি?
মধ্যে নদী মধ্যে সমান চৈত্র মাস!

দেহের কিন্তু দল রয়েছে বিশ্লেষণও
ঈশ্বরে মাছ ধরতে পারার দুরন্ত লোভ
একক সুরের একটি বোতাম টিপতে পেরে
মোক্ষ এবং মোক্ষ চাটবে যে পরজীবী

আরশোলাদের সঙ্গে সমান চৈত্র মাসিক
ভাগ করিনি অন্ন রাজার সংসারে।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


গদ্য:-


শৌ ভি ক  ব ণি  ক

অরণ্য গাঁথা অথবা শোকের আখ্যান পেরিয়ে..

আমি সময় অসময় বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াই ভালো লাগে আসলে আমার এই অরণ্য ভ্রমণ ভ্রমন নয়, আমার যাপন বন-জঙ্গলের সাথে আমার এই সখ্যতা কবে, কিভাবে হয়েছিল? সে একটা বিস্মৃতির গল্প হলেও অরণ্য আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে নিয়ত এক অদৃশ্য হাতছানি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় যাকে অবজ্ঞা করা আমার পক্ষে সাধ্যাতীত

বসতি জুড়ে এখন শুধুই মুখোশের আবরণ আর সেনিটাইজারের গন্ধ। প্রিয় মানুষের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরে -তারে। এই আবহে জমে ওঠা শোক পেরিয়ে, কংক্রিটের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে থাকি এক অনন্ত জীবনের দিকে। অরণ্য স্পর্শে আমার অবুঝ মন সবুজ হয়ে উঠে। আমি ভুলে যা- বিগত শোকগাঁথা

ডুয়ার্সের এই অরণ্য বড়- মায়াবী। অদৃশ্য জাদুকরের যাদুকাঠি- স্পর্শ লেগে আছে বিস্তীর্ণ সবুজের সমারোহে। এই জঙ্গল একাধারে  যেমন ভয়ংকর তেমনি সুন্দর

নির্জন অরণ্যের অদৃশ্য চোখ সবসময় কিন্তু ঠিক নজরে রাখে, আমরা তা জানতেও পারিনা। প্রত্যেকের জীবনে যেমন রয়েছে নিজস্ব স্পেস। তেমনি জঙ্গলেরও আছে। আমরা যখন সেই অপরিচিত আলো অন্ধকারের ভিতরে যখন ঢুকে পরতে চাই ঠিক তখনই ঘটে বিপদ। 

 বৈচিত্র্যময় আয়োজনের ডালি সাজিয়ে বসে আছে ডুয়ার্স। অরণ্য তো আছেই পথের দু'ধারে। আরও দীর্ঘ পথ জুড়ে আছে চা-বাগান। পাহাড়ি নদী-দের মিছিল। ঝোড়ার ঐক্যতান আর গাছেদের সারিবদ্ধ গান। আমার প্রাপ্তি- ঝুলি পূর্ণ করে। উজান বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পার্থিব সুখ। ভুলে যাই দুঃখ, নৈরাশ্য আর শোকের আখ্যান

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শু ভ্র দী প  রা য়

অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ 

যে অলৌকিক টেবিলের তিনপাশে বসে আমরা স্কটিশ রূপকথায় মজে  যাই   -- তার নাম কোজিনেস। তিন ভূতগ্রস্ত পুরুষ যেন   হাতে হাত ছুঁইয়ে বসেথাকি সেই উইকা বোর্ডে।হোয়াইট ওয়াকার+অ্যাবসোলিউট জিরো  টেম্পারেচারে থেমে থাকা একটু সোডা-- এই কম্বিনেশনে জমে ওঠে নেশা। জেগে ওঠে কবিতারা।

অথচ বাকি দুই মানুষের  IQ এর সাথে আমি সঙ্গত দিতে পারিনা। সেই আলো আঁধারী  টেবিলে বসে আমি বাদাম চিবোচ্ছিলাম। হঠাৎ চরম মোহমায়াময় ভেনাস হাজির হলেন। তার ঠমকে গমকে আমি নির্বাণের হাতছানি দেখলাম। বাকীসব fade out! সুভাষ- অরণ্যদেব স-অ-ব! " বাহো মে নেহী ভরনা,মুঝে দিল মে উতরনা হ্যায়"-- এমত আউল বাউল আহ্বানে উঠে দাঁড়াই। বুঝতে পারি আমার কবিকলম থেকে কামনার লাভা  নিঃসরণ হচ্ছে। যে আঁচল ভেনাসের বুক থেকে খসে  যায়, তার দিব্যি সাঁই,আমি বারো ক্লাসে একবার মরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এতটা পাপে হাত ডোবাব বলে সে'দিন ব্লেড চালানো হয়নি।

আমি জানি অতিকথনের প্রতি আমার প্রবল ঝোঁক। তাই যখন কেউ বলেন সংযত হও,তখনই আমার খন্ডিত সত্তা বলে বিশালে আয়,গল্পে থাক। এই "to be or not to be" এর ফাঁদে পড়ে আমি নিঃসঙ্গ দ্বীপে বসে ছিপ ফেলি অল্প কথায় বিশাল গল্প ফাঁদতে।সেসব গল্প কেউ বোঝেনা ভেনাস। আজ আমার কাটগ্লাসে অ্যাবিসিন্থ কম পড়বেনা। অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ--মদ আর সিম্বলে  অরণ্যদেব কার্পন্য করেননা। তুমি থেমোনা ভেনাস।  The show must go on...

যখন আমার শহর শিলিগুড়ি ভেসে  যাচ্ছে ছাপোষা বৃষ্টিতে,তখন টলটলে '' beaker full of hypocrine" এ ডুবে  যাচ্ছে আমার অসফল কবিসত্তা। এও কি ভেবেছিলাম ছাই( সাঁই)! এত সুখ আমি কোথা পাব আর? এ আমাকে কোথায় এনে ফেললে  অরণ্যদেব? বেশ তো সাহু আর তত্ত্বকথা নিয়ে ছিলাম। আমার যাপনে তোমার হাত ধরে ভেনাস ঢুকে পড়ল,সন্ত্রস্ত গান স্যালুট ঢুকে পড়ল,আর ঢুকে পড়ল উঁচু তারের  'চিয়ার্স'। তোমাকে 'আর কি ই বা দিতে পারি' বল, হে হাওয়ার চেয়েও দ্রুত ছুটে চলা মানুষ? একটা মজে  যাওয়া নদী আর এককাপ বাউলাঙ্গিক লাল চা বাদে? সেইসব বুকপকেটে রেখে সাততলা হাইরাইজের সহজিয়া রাইটিং টেবিলে বসে তিনটি গ্লাস ঠোকাঠুকি করে নিও কমরেড! দেখো ব্যাকগ্রাঊন্ডে ঠিক বেজে উঠবে- " বাহো মে নেহী ভরনা,মুঝে দিল মে উতরনা হ্যায়"।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বি কা শ  দা স (বিল্টু)

একটি রাত ও রাতের আকাশের একটি তারা  

অবশিষ্ট শুধু এই একটি রাত এই একটি রাতেই আমাদের সম্বল এরপরদিনেই হয়ত চেনা পৃথিবী, চেনা জগৎ ক্রমে ফ্যাকাশে হতে থাকবে ধূসর হতে থাকবে তোমার আকাশে দেখা ' আমার তারাদের ' ঊষা আসবে, গোধূলি আসবে, তারারা থাকবে অন্ধকার রাতও থাকবে শুধু ওই একটি তারাই তারাদের ভিড়ে ভিনদেশী তারা হয়ে যাবে

আদতে আজকের রাতটা ভয় দ্বন্দ্বের। আমাদের গুপ্তপ্রেমের উপসংহারের। বোঝা পড়ার। কথনের। এই কথনগুলোর কথাই বারবার এড়িয়ে গেছ তুমি। আজ অন্তিমে এসে তুমি কি সেই পুরানো ইতিবৃত্ত টানবে! না নতুন করে ভাববে? তোমার সাড়া, সোহাগ, তোমার হাত আজ আমার রাতের পুরো নায়িকা। আমি তো উপলক্ষ্য মাত্র

এখন গভীর রাত। একটু ভয়ও হচ্ছে। আঁধার গিলে খাচ্ছে ক্রমে। কি ভীষন রকম উদ্দীপনায় বসে আছি। তুমি আসবে! আমাদের এই আসা-যাওয়া গুলো রাত হলেই বাড়ে। মাধুরী ঠিক জানে। কত রাত আমরা এইভাবেই মজেছি নিজেদের। প্রেম সোহাগের ছেলেখেলায়। এভাবেই তো কাটিয়ে দেওয়া কয়েকটি ' পরিচয়হীন বসন্ত ' নিবিড় পাঠে কোনোদিন আমি শ্রোতা তুমি পাঠক কিংবা তুমি শ্রোতা আমি পাঠক

হ্যাঁ, একটি মাত্র ফোন! আসেনি। সারারাত ধরে তাকিয়ে থাকা মোবাইলের স্ক্রিনে। মাঝে বেশ কিছু পুরানো মেসেজও দেখেছি। ছবির দিকে অপলকে তাকিয়ে তাকিয়ে গুমরে গুমরে কেঁদেছি।

 এখন ভোর। অথচ এই ভোরেই আমাদের ভাসার কথা। নৌকো ঘাটের পরান মাঝিকে কথা দেওয়া। তুমি আসবে! তুমি এলেই ভোরের প্রথম আলোর স্পর্শ একটি মায়াবী গন্ধে মায়া ভরা চোখে স্বপ্ন দেখার কথা। আমাদের যাত্রা শুরু

খুব কাঁপছে বুকটা। আমার সম্মুখে একটি বিশাল আকাশ। তারাহীন। সব তারাই নিভে গেছে সেই কখন। ভোরের আলোতে একটি অভিশপ্ত দিন ওৎ পেতে।  তোমার সানাই বাজবে। আমি সানাইয়ের সুর হবো। তোমার কাঁকনের স্বর, আমি হেরে যাওয়া ' তোমার ঈশ্বর '

নিস্তেজ হয়ে গেলাম। এখন আর কোনো ভয় নেই। ওই তো তুমি। তুমি নববধূ। আলতা রাঙা পা, ঘোমটা ঢাকা মুখ চিবুক ছুঁয়ে গত রাতের ক্লান্তির ছাপ। ঘুম হয়নি একটুও। তবুও তোমার ' অকৃতজ্ঞ লাজুক মুখে ' কি দীপ্তিময় হাসি। নাকের নোলকে আমার অলিখিত ঈশ্বরী।
  আমি দেখছি চৌকাঠও ডিঙিয়ে গেলে আবশেষে। নতুন বরের পাশে, পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে। উলুতেউলুতে মুখরিত পাড়া।
- শেষ হলো তখন' আমার রাতের কথন।
  যদি'বা কখনও ফুরসৎ মেলে, সময়ের অবকাশে দেখে নিও সন্ধ্যার আকাশকে। মিটমিট করে জ্বলতে থাকা পূব আকাশের ওই তারাটির দিকে। একটিই তারা। নামহীন। আমি!

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

পাঠ প্রতিক্রিয়া:-

স ব্য সা চী  ম জু ম দা র

যেভাবে তৈরি হয় আগামী কবিতা

কোথায়,আমি তো নয়ন পথগামী বা মৌচুষি যায় ছাদনা তলায় হারিয়ে ফেলিনি! হারিয়ে ফেলবোও না বাংলা বাজারে একটা ফর্মা কেন্দ্রিক তর্ক আছেএক,দুই না চার?কারোর কারোর অভিমত এক-দুই ফর্মা হারিয়ে যায় আবার কেউ কেউ পুরষ্কার পাওয়া যায় না বলেও তত্ত্ব খাড়া করেনমোদ্দা কথায়,এক দুই ফর্মায় বিপদ প্রভূত অন্তত বাজার সংরক্ষণের ব্যপারে তবে ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত হলো, আরে শেষ পর্যন্ত তো কবিতাই থাকবেচারফর্মার অনেক নির্মাণকে ইচ্ছে করেই হারিয়ে ফেলেছি আবার মণীন্দ্র গুপ্ত,গৌতম বসু,জহর সেনমজুমদার,দেবারতি মিত্রকে আগলে আগলে রেখেছি

এই ভূমিকা আসলে দুটি পুস্তিকার জন্য নির্মিত হলো।সায়ন রায়ের 'নির্বাণ তবু নির্বাণ নয়'আর সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের 'জন্মকুটীর' আমার বিশ্বাস পুস্তিকা দুটি রয়ে যাবে কবিতার জোরে।আপনি মিলিয়ে দেখুন আপনার পাঠষ্ক্রিয়ার সাথে।
সায়ন রায়ের লেখালিখি শুরু নব্ব দশকের শেষ দিকে হলেও তাঁকে শূন্য দশকের প্রারম্ভিক কবি হিসেবেই দেখতে পছন্দ করবো। কবিতা অভিযাত্রার কুড়ি বছর অতিক্রম করে সায়ন লিখছেন,"জ্ঞানহীন চক্ষুহীন নিরাকার অন্ধকার মুছে নিচ্ছে ঘর।জীবনের রং। প্রাণবায়ু থরোথরো।কাঁপা কাঁপা হাতের প্রদীপ। এইখানে খসে গেল হাতের মুদ্রাদোষ।"() শিরোনামহীন কবিতা গুলোয় সায়নের রং কালো। দৃশ্য এবড়োখেবড়ো, ঘর্মাক্ত,ক্লান্তি চিন্হে জারিত আত্মহননেরা ঘোরাফেরা করে তাঁর কবিতার ডাইনামোতে। বাংলা কবিতার ভুবনে যে সমস্ত রচনা প্রক্রিয়াকে 'বিশুদ্ধ কবিতা'বলে চিন্হিত করা হয়েছে,তার ধারণাটা পাল্টে দিয়ে সায়ন লেখেন,"শঙ্খ আর শঙ্খলাগা এক নয়। এলোমেলো বাতাসের ঢেউ কেটে যাওয়া। উপলব্ধির ব্যাপার যাপন বড় আলাদা।দম লেগে যায়,হাঁপ ধরে আসে,গা-বমির মধ্যে থেকে জেগে ওঠে হিংস্রতা।পেলব কোমল একটা বিছানা শুধু তাড়া করে ফেরে। মৃত্যুর অলীক।"()সমবাস্তবতায় আন্তরিক ভাবে নিজেকে প্রোথন করতে করতে কবি নামেন সামগ্রিক অনাদের সম্ভাবনায়। সেখানে থরথর করে অনাঘ্রাত ইতিপ্রসবী নেতি--"প্রেম নেই। প্রেমের ছেনালিটুকু পুঁজি করে সিঁদ কাটিকঠিন শিলায়।পাথর ফাটানো জল।বরফ গলানো জল।বালি খুঁড়ে তুলে আনা জল।এত সব জল আমার সঞ্চয়।"লক্ষ্য করুন,নেই থেকে সঞ্চয় পর্যন্ত যাত্রাটুকু।তারপর পড়ে ফেলুন আলোক সরকার প্রণীত 'জীবনানন্দ'।আর নেপথ্যে কিন্তু বাজবে জিয়াঁ মহিউদ্দিন ডাগর। বাজবে ভৈরবী। মাত্র এক ফর্মায় শেষ পুস্তিকাটি অগ্নিস্রাবী,"সাদা পাতার বুকে কলমের নখ দিয়ে আঁচড়ে আঁচড়ে বার করি বদরক্ত।বদজন্ম। হাজার বছরের অন্ধকার।আমি কবি এইটুকু সার নিয়ে জেগে আছি সস্তার পাউডার, লিপস্টিক আর গোপন অসুখে ভরা এই তপোবনে।"(১১)আলোচনার অবকাশ কম। কিন্তু পুস্তিকা একটা অবস্হার মুখবন্ধ বলেই বিশ্বাস করি। অপেক্ষায় রইলাম সম্পূর্ণ নাদের জন্যে"শুধু কালো এসে ঢেকে ফেলেছে মন মেধা আত্মার ওম।এক জীবনেই সব জীবন এই বোধটুকু আলগা করে দিচ্ছে হাড় পাঁজর কাঠামোর বিন্যাস।বায়ুভূত হতে হতে এক দীর্ঘশ্বাস শুধু জেগে থাকে আবহমণ্ডল জুড়ে।"(১২)

এরপর যে গ্রন্থ পাঠের দিকে এগোবো--জন্মকুটির। মননশীল,আপনি শূন্য দশকের অন্যতম শক্তিশালী কবি সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের রচনা সম্পর্কে পরিচিত।এই সপ্তম কাব্য প্রয়াসেও সে তার টোন বজায় বাংলা কবিতাকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা দান করেছে বৈকি!
দুই ফর্মার পুস্তিকার মোট পাঁচটি অংশ--কারিগর। রয়েছে পাঁচটি রচনা।কথা মুখে আছে পাঁচটি।মুঠো-তে পাঁচটি।শাপগ্রস্ত ক্রিয়াকর্ম- সাতটি করে। নিপুণ বুনোনে রহস্য ত্র্যম্বকে একের পর এক পদ রচনা করে সুদীপ একটা কালীকে পর্বের অবস্থান বিন্দুকে গাঢ় করলেন,"শুধু মিহিন ধারালো ডাক/বিকেলের রক্তপালক /পড়ে আছে মনে--এভাবে গোধূলি নামে/পৃথিবী ত্রিকোণ হয়ে ঘুরে চলে/দেহ ডোবে তার এক কোণে"(কারিগর-) এখানে শেষ হলো প্রথম পর্ব। ঠিক এখান থেকেই শুরু করলেন দ্বিতীয়ের আলাপ,"আর কীভাবে যে শুরু হয় সেগুন শালের জঙ্গল/তুলোর নীরবতা ওড়ে চারিদিকে/তোমার উষ্ঞ কফিমগ থেকে/একটানা বেরোতে থাকে পাখি/ঝুলন্ত জামার গায়ে কেবলই ঠোক্কর মারে/লেগে থাকে নাছোড়"(কথামুখ-)

সুদীপের রচনায় একটি যুগলবন্দী আছে।গ্রন্থের নামকরণ লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন অতীন্দ্রিয় চেতনার একটা পেলব দ্বন্দ্ব মিশ্রিত একটা ঐক্য ভর করে আছে ফের্দিনা তত্ত্ব ব্যাতিরেকে বাংলার নিজস্ব গীতলতায়,"বৃক্ষের বানান থেকে নিদারুণ বেরিয়ে এলে তুমি/বেরিয়ে এলে টাটকা ঈশ্বর থেকে/তখন নৌকো গুলো উড়তে উড়তে /সটান নেমে আসে মাটিতে/বৃষ্টি থেকে বৃষ্টির ভেতর তৈরি হয় পথ।"(মুঠো-)

সায়ন আর সুদীপকে পর পর পড়তে গিয়ে একটা ব্যপার কিন্তু হে প্রাজ্ঞ বুঝতে পারছেন,তাত্ত্বিক পরিকাঠামো থেকে বিনীর্গমন শেষে জীবন বাংলা ভাষার নিজস্ব গীতি প্রবণতার কাছে প্রজ্ঞার বিসর্জন ছাড়া কবিতা কালসীমা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়। আমার স্বপক্ষে রাখলাম এইটুকু,"দেখার নিয়তি ছিল,সেই বুঝে অন্ধ হয়েছি/এখন ভাষার কাছে এলে ভুল হয় রঙে/দূরতর,দূরতম--এইসব রোমাঞ্চ গল্পে এসেছে/তবুও তো শীতকাল,নিরীহ খোলসটুকু দেখে/আমাদের ঘুম এল,শিথিলতা এর"(শাপগ্রস্ত-; সুদীপ চট্টোপাধ্যায়)"ফুটিফাটা জামা গায়ে ভালোবাসা উঁকি দিয়ে যায়।তাকে ঘিরে থাকে জীবনের ঘ্রাণ"(১১;সায়ন রায়)

আপনারা নিশ্চয়ই যুগলবন্দীশে শুনতে পাচ্ছেন সিন্ধু ভৈরবী।বাংলা কবিতার আগামীর দেহ তৈরি হচ্ছে।সত্তরের পর আশির পর নব্ব--তিনটি লগ্নস্বর যে শরীর দিয়েছে বাংলা কবিতাকে, শূন্য তাকে অতিক্রম করে লিখল-"আত্মহত্যা এক উপায়।আততায়ী ঘাতক বাহিনীর আত্মরক্ষার কৌশল।"(;সায়ন রায়)"আরও একবার নির্দিষ্ট ঘড়ি থেকে /বেরিয়ে এসেছ তুমি/কাঁটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আর একবার /লাফিয়ে পড়লে উত্তপ্ত বালির ওপর/তোমার মাথার ওপর তিন রঙের সমুদ্র/তার ছায়ার নীচে মতামতের গ্রাম"(ক্রিয়াকর্ম-; সুদীপ চট্টোপাধ্যায়)

আলোচনা একান্তই নিজস্ব প্রতিক্রিয়া। সংক্ষিপ্ত শব্দ সংখ্যার কারণে অনেক না বলা রয়ে গেল

হে অনিবার্য ধাত্রীমূর্তি,আপনি পুস্তিকা দুটি সংগ্রহ করে অসম্পূর্ণতা পূরণ করতে পারেন। অপেক্ষায় রইলাম

নির্বাণ তবু নির্বাণ নয়:সায়ন রায়:পাখিরা: প্রচ্ছদ-দেবাশীষ সাহা: তিরিশ টাকা
জন্মকুটীর: সুদীপ চট্টোপাধ্যায়:প্ল্যাটফর্ম:প্রচ্ছদ-অর্পণ:ষাট টাকা







-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সম্পাদক - অনিমেষ সরকার
সহ সম্পাদক মন্ডলী - মৌমিতা দাস,উজ্জ্বল বর্মন , সত্তাপ্রিয় বর্মন
প্রচ্ছদ - মৌমিতা দাস
ব্লগ সজ্জা - অনিমেষ সরকার
Web ডুয়ার্স  যোগাযোগ - ফোন/হোয়াটসাপ  ৯৭৩২১৬৬৩৩২
ইমেইল - bongboystoursandtravels653@gmail.com
সম্পাদকীয় দপ্তর : -
চালসা,জলপাইগুড়ি , ৭৩৫২০৬


মন্তব্যসমূহ

  1. কবিতা ও গল্পের সমন্বয়ে এই ওয়েব পত্রিকাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু কবিতা মন ছুঁয়ে গেল। সেই সঙ্গে ভিন্ন স্বাদের একাধিক গল্প পড়তে পেরে এই অবরুদ্ধ সময়ের ভার থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়া গেল। আমি ভালোবাসা জানাব সব্যসাচীকে, সায়ন রায় এবং আমার কবিতার বই নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। ধন্যবাদ জানাই এই ওয়েব পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সদস্য এবং সম্পাদককে

    উত্তরমুছুন
  2. কবিতা ও গল্পের সমন্বয়ে এই ওয়েব পত্রিকাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু কবিতা মন ছুঁয়ে গেল। সেই সঙ্গে ভিন্ন স্বাদের একাধিক গল্প পড়তে পেরে এই অবরুদ্ধ সময়ের ভার থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়া গেল। আমি ভালোবাসা জানাব সব্যসাচীকে, সায়ন রায় এবং আমার কবিতার বই নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। ধন্যবাদ জানাই এই ওয়েব পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সদস্য এবং সম্পাদককে

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সংখ্যা ১৮ || বর্ষ ৫

বিষয় - বই আলোচনা-সংখ্যা ১৬ বর্ষ ২