সংখ্যা ১৮ || বর্ষ ৫
ফিরে ফিরে আসাও একটা অধ্যায়। এই অধ্যায়ের কিছু সমস্যা হল, অধিকাংশ সময়েই আমরা শুরু করে ফেলি, তারপর লম্বা একটা দৌড়। দৌড়তে দৌড়তে যখন মনে হতে শুরু করবে এই তো সবার আগে এসে গেছি ঠিক তখনই গতি কমে যাওয়া বা দুর্ঘটনা। তারপর বারবার আছি জানান দেওয়ার চেষ্টা। বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। কখনও কখনও যা একা থেকে শুরু হয় মাঝে এসে অনেক সাথী আবার কিছু সময় গতি কমলে অনেকেই হারিয়ে যায়। আমরা হারাইনি, আমরা হারাব বলে কখনও আসিইনি। এসেছিলাম থাকব বলে। কিছু কথা বলব বলে। বলেওছি, মনে হল আবার বলা দরকার। শুধু আমরাই যে হারিয়ে গেছি তা নয়। আমরা যে অন্ধকার সময়ে ডুবে আছি, শুধু ডুবেই আছি এও তো নয়, সময়ের সাইকেলে চড়ে পেছনে থেকে গেছে অনেক বন্ধু, অনেক গাছ, আশ্রয় দেওয়া ছায়া, ঘর, বাড়ি। স্বপ্ন দেখার মন। স্বপ্ন দেখার আকুলতাটুকু। স্বপ্নের থেকে কিছু নুড়ি কুঁড়িয়ে স্বল্প সাশ্রয়ে স্বপ্নের কাছাকাছি আবার আসাটাও একটা নিজগুণে সাফল্য। কথায় আছে আশা ভরসা স্বপ্ন দেখার চাহিদা ছাড়া মানুষ স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে না। কিন্তু আমাদের তো আশা আছে, এখনও রয়ে গেছে। এই যেমন বর্তমান সময় আমরা কাটিয়ে উঠব, আমরা প্রকৃত যোগ্য মেধাবীদের দেখতে পাব তাদের সাফল্যের শেষ হাসিটুকু হাসতে। মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম রসদটুকু পেতে। খুব অবাস্তব স্বপ্ন হলেও, স্বপ্নের জন্য বেঁচে থাকার আদর্শ টুকু বুকের মধ্যে ধারণ করে রাখি। কবি সন্দীপন দত্তের উস্কানিতে শেষমেশ ফিরতেই হল। এক বছরেরও বেশি সময়ের পর। আমরা বিশেষত আমি ব্যক্তিগত স্তরে স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিলাম। স্বপ্ন দেখলাম আবার। চচ্চরি লেখার সময়ে সঠিক পরিমাণের উপাদানগুলোকে আবার তুলে এনে সঠিক জায়গায় রেখে দেওয়ার। উত্তরবঙ্গ থেকে আবারও ধ্বনিত হবে ওয়েব ডুয়ার্স-এর নাম। হয়তো অবান্তর কিন্তু অসাধ্য কিছু নয়। কবিতা কী এবং কেন! এই সবে আর যাব না। ঢাক ঢোল পিটিয়ে কোনো আধুনিক পুনরাধুনিকের ব্রেকফাস্ট টেবিলেও বসব না। নির্বাচিত কিন্তু জনসমক্ষে থেকেও আড়ালে থাকতে ভালবাসা লেখাদের নিয়ে এই সংখ্যা। আর তাদের লেখা ছাড়া বোধহয় ফেরার কথা কল্পনাই করা যায় না। আমরা তো তুচ্ছ মাত্র। এতটুকুই পরিশেষে বলার স্বপ্ন দেখুন, প্রাণ ভরে দেখুন। একটা স্বপ্ন ভাঙলে সময় নিয়ে আরেকটা বিকল্প স্বপ্নের দিকে তাকান। স্বপ্ন দেখা ভালো, পূরণ হলেও না হলেও। স্বপ্ন ভাঙার আওয়াজ পাওয়া না গেলেও তার ধ্বংসাবশেষ থেকে কিছুটা ছাই রেখে দিন। কাজে দেবে। পরিশেষে ভালো থাকুন, ভালো রাখুন। এই সংখ্যার লেখাগুলো পড়ে মতামত দিন। আমি ক্যাজরা পছন্দ করি, তাই চাইলে ক্যাজরাও করতে পারেন…
এই সংখ্যায় যাঁদের লেখা পড়াতে চাই :-
লেখকের নাম দেখবেন তারপরেই লিঙ্ক খুলবেন! লেখক সূচি না খুঁজে নিচে স্ক্রল করুন। স্যাটিসফেকশন পাবেন, বাংলা কবিতায়, বাংলা সাহিত্যে কী লেখা হচ্ছে জানতে পারবেন…
মণিশংকর বিশ্বাস
পাঞ্জাব স্টেট লটারি
বাপ্পা দত্ত মাঝে মাঝে লটারি কাটে
বাপ্পার কাছে শোনার পর থেকে
আমি অকেশনালি লটারির টিকিট কাটাকে সমর্থন করি
বাপ্পাও আমার মতোই (এক স্কুলে পড়তাম), একদমই সফিস্টিকেটেড নয়
আধ্যাত্মিক দিক থেকে খুব একটা উন্নত নয়—
এখন ধরা যাক, বাপ্পা ১০০ টাকার একটা পাঞ্জাব স্টেট লটারি কাটল
কেটে? তারপর, কী ভাববে বাপ্পা?
বাপ্পা আমাকে বলেছে, ও জানে যে, কোনোদিনও ও লটারি পাবে না
কিন্তু তবু কাটে
লটারির ১২ কোটি টাকা পেলে কী করবে—
ঘুমোতে যাবার আগে তার লম্বা লিস্ট বানায় বাপ্পা
আর আনন্দে ওর ঘুম এসে যায়!
বাপ্পা বলে ও লটারির টিকিট কাটে না—
মানুষ, সিনেমার টিকিট কাটে, আর ও স্বপ্ন দেখার টিকিট
ঋতু তোমাকে আজও যে কত ভালোবাসি…তুমি আমার লটারির টিকিট
আমার কথা
মায়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না আজকাল
দিন দিন অভিমানী হয়ে উঠছে মা
পা-ফুলে উঠেছে জল জমে গেছে
কাল সারারাত জ্বরে ঘুমোতে পারেনি
অথচ রাতে কিছুই জানায়নি আমাদের
রাস্তায় বেরিয়েই মনে পড়লো বাপ্পার কথা
বাপ্পার অনেক কনট্যাক্টস, তুরন্ত একটা ভালো ডাক্তারের খোঁজ
আমাকে পেতেই হবে।
বাপ্পাদের বাড়ির গেটে পৌঁছতেই দেখি বাপ্পা একটা ট্যাক্সি ডেকে
ওদের বাড়ির গেটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে
ওর পেনশনার মা-র ১০৪ জ্বর গতরাত থেকে কিডনি ফেল করেছে
গত দু’দিন থেকে কিচ্ছু খাচ্ছে না, কথাও বন্ধ—
বাপ্পার চোখে-মুখে, “মাকে এ যাত্রায় ফেরাতেই হবে…”
ঈশ্বর, ওগো বাপ্পা দত্ত, এভাবেই আমার কথা
আমি কোনোদিন বলে উঠতে পারিনি
অবিশ্বাস
বিগব্যাং-এর প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর পর প্রথম আলো বা ফোটন কণাগুলি দৃশ্যমান হল। এর অনেক আগেই কিন্তু জগতের সমস্ত পদার্থ অর্থাৎ বর্তমান মহাবিশ্বের সব ইলেক্ট্রন প্রোটন নিউট্রনগুলি তৈরি হয়ে গেছে। এমনকি আদিতে কসমিক স্যুপে আটকে বাইরে বেরুতে না পারা ফোটন কণাগুলিও। এখনও আমার তোমার শরীর জুড়ে সেইসব ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পুরনো কণাগুলিই ঘুরছে, নেচে বেড়াচ্ছে, গান গাইছে। এখন যদি বলি, তোমাকে যে পাওয়া হল না, আমার কেবলই মনে হয়, সেই অন্ধকার—মহাবিশ্বের প্রথম আলো আবির্ভাবের আগের অন্ধকার! আমার শিরার ভিতর, নাড়িতে, সুষুম্নাকাণ্ডে, আমি স্পষ্ট টের পাই এ কথা— কেউ কী আর আমাকে বিশ্বাস করবে!
কতদিন আগেকার অন্ধকার! আলোর ধারণাই ছিল না তখন। সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড যে তখনও অবিশ্বাসের অন্ধকারে ভরা।
শিল্পী
আজ সাবওয়ে থেকে বেরোবার মুখে দেখলাম এক পথশিল্পী গিটার বাজিয়ে গান গাইছেন। সামনে গিটারের খোলা বাক্স, তার ভিতরে ছড়ানো ছিটোনো কিছু কয়েন, অল্প কিছু কাগজের নোট। না-দাঁড়িয়ে যেতে যেতে যেটুকু শুনলাম, কী যে অপূর্ব গান ও গায়কী! অন্য দিন হলে নিশ্চয়ই আমিও ছুড়ে দিতাম সামান্য অর্থমূল্য, কিন্তু আজ দেরি হয়ে গেছে! ভাবলাম, থাক না এখন। অতঃপর অতকিছু না ভেবেই হাঁটতে থাকলাম গন্তব্যের দিকে।
অর্থাৎ দিতে পারতাম কিছু একটা কিন্তু দিলাম না। না, এর ভিতর কোনো গভীর ভাবনা বা যুক্তিশৃঙ্খলা নেই, মনস্তত্ত্ব নেই…
কী জানি এই যে সোমলতাকে পাইনি আমি, এও হয়তো এমনই। জগত-সংসারের এতে কোনো উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল না কোনো গোপন অভিসন্ধি।
শুধু মাঝখান থেকে আমি নষ্ট হয়ে গেছি, এইটুকুই যা।
সন্দীপন দত্ত
বনভোজনের লেখা
জানুয়ারির রবিবারগুলোয় পুরো শহর উচ্ছন্নে চলে যেতে চায় একত্রে। আমিও সেসবে থাকি। আবার কিছুতেই থাকি না। আমিও কিছু পলিথিন নিয়ে রেখে আসি জলে-জঙ্গলে। কিছু গানের আওয়াজ কমিয়ে দিতে চেষ্টা করি। এই দ্বিচারণ, এই স্বভাব ও সংকট— শহর থেকে কিছুটা বাইরে গিয়ে শহরে ফিরে আসলেই নিজেকে খুব স্নান করানোর মতো— কোনও একটি বাতাসে টিকে থাকা হল না। জানুয়ারির রবিবারগুলোর মতো প্রাণপণ আনন্দিত থাকতে চাওয়ার বিকেলদের দিকে হতাশ তাকাই আর নিজেকে উচ্ছন্নগামী ম্যাটাডোরে তুলে দিই। ক্রমশ বাতাস ফুরিয়ে আসা বেলুনগুলোর মতো কৌণিক চুপসে থাকি। পেটভর্তি আদিমতা, কানভর্তি আর্তনাদ— জানুয়ারির রবিবারগুলো বিরহকাতর শ্রীরাধিকার মতো চেয়ে থাকে— এসব থেকে মুক্তি খোঁজে, বেলেল্লা চিল্লায়— ঝিম খায়। এসবে আমিও থাকি। কিছুতেই থাকি না। আমার ভেতর কখনও কখনও এরকম জানুয়ারির অলৌকিক রবিবার জেগে ওঠে— আর তুমি— রাধিকার ছদ্মে— যাও কাঁচাবাজারে। মদমাংসতেল কেনো। শুধু ভুলে যাও লবণ নিতে।
ম্যাডোনা-হোর: বিনির্মাণ
১.
কেউ শরীরে যৌন
কেউ মগজে যৌন
তুমি শরীরে যৌন
তুমি মগজে যৌন
২.
এরপর সমস্ত সংলাপ
সন্দেহের চোখে দেখা হবে
৩.
চোখের বিপরীতে
কথা রোচেনি মুখে
৪.
হাঁ করে আছি
মুখে নেব
মুখ দিয়ে সব কথা গিলে নেব
দুর্দান্ত লিঙ্গ হয়ে ওঠো
যৌনলেখা
সঙ্গমের পর দুপুর ভাগ করে খাওয়া জলের মতো পবিত্র চিন্তায় আটকে রাখতে চাইছি জরিমানা ও প্রায়শ্চিত্তের শরীর। ক্লেদ যেখানে জমে সেখানে বহু অনুশীলন প্রয়োজন তৈলাক্ত বাসন মাজার প্রস্তুতি যেন। একহাতে অপরাধ অপর হাতে স্বস্তি দুহাতে অসম দুই স্তন। সকল চিন্তাই যৌন— কর্কশ ও মৃদু, পাতালে ভয় তবু প্রবেশেই আলো। অনির্দিষ্ট ব্যথার মুখোমুখি বিন্দির সজ্জা কপাল বদলের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। লেখার ভেতর স্থাবরজঙ্গম সত্তা সত্য হয়ে প্রকাশ প্রত্যাশী। কী দেখাব? মতামত ও মনোরঞ্জন সকলই ঐশী শীৎকার। আমার ফুরোচ্ছে না দেখা ও দেখতে চাওয়া রমণঅস্থির ফুলের শান্ত অচল ঘুম।
ত্রিবিন্দু
এখনও লিখতে ইচ্ছা করে
তোমায় শেষবার দেখতে চাওয়ার মতো
সব নিরর্থক
মনে হওয়া একটি যৌনভার
খিদের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেওয়া যায়
কিছুদিন ছিল কিছুদিন আছি
কিছুদিন আছে
তবু ভাবতে ইচ্ছা করে
রথীন্দ্রনাথ সাহা
খেতে খেতে লেখা
ক।
এতো কাজ পড়ে আছে
কোনটা আমার
জানি না তাই
আলু ছোলার কাজ নিয়েছি
আলুর খোসায় চাড়া গাছ
যেন হলুদ শার্টের সবুজ বোতাম
আলু ঝিরি করার কাজটা তুমি করো
তাতে কাছাকাছি চুড়ির ঝাঁকুনি শোনা যাবে
ধামাচাপা একটা কথাও যদি পড়ে যায়
তোমাকে কাদায় যে পেয়াজের মতো
খ।
কোথাও থাকবো না
তাই পাশে এসে দাঁড়িয়েছি
এবার মনে করো আর উচ্চস্বরে হাসো
'হা হা হা' করে ভড়াট হোক নর সিংহের মাঠ
ঝনঝনিয়ে উঠুক ক্লাসরুমের দরজা জানলা
অতিষ্ট করে তোলো শিবমন্দিরের সব লোককে
শিশুটি দাঁড়িয়ে আছে
মাথা ঝাঁকাও কদম পড়ুক
গ।
এরপর কি খাবো
সুন্দর করে বলো
টক ঝাল মসলা মাখানো কোন বাসনা
এনেছো মুঠোর ভেতর
সব জল, সব উল্লাস শেষ হয়ে যাবে
সব বড়োলোকি চাল নিমেশেই গিলে নেবো
মায়ের আঁচল থেকে যত্নে এনেছো যে মুদ্রা
ছুঁয়েও দেখবো না
ঘ।
ভালোই তো কথা হয়েছে
তোমার আমার
মেয়ে কথার ছেলে কথার বিয়ে
আর বৌ-ভাত খেতে বসে
সে এক হাসির কথা
কোন এক গানের কথা
কোথাও কার পুত্র-সন্তান হয়েছে
একটা আমার মতো
দেখতে মানুষের কথা
সৌরভ মজুমদার
সাইক্রিয়াটিস্টের চেম্বারে বসে
সেশন ১
হলুদ বাল্বের আলোর তলায় বসে চোখ বন্ধ করে ভাবছি
একটি মেয়ের চোখ।
তার চোখের ভেতর অল্প আলো হয়ে ভেসে থাকবো দু চার দিন- মসৃণ কিছু মুলাকাত থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করবো অর্ধমৃত
সংকল্প।
তারপর চিৎকার করে বলবো-
আমি কোনদিন কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানকে টিটকারি দিয়ে গটগট করে বেরিয়ে যাব কেবিন থেকে।
সেশন ২
প্রেমে সত্যি সত্যি কেউ কোনোদিন পাগল হয় না বলে আমার বিশ্বাস। আমি পাগল নই তাই ভালো করে জানি
খুব কষ্ট পেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়।
ও আমাকে দিয়েছিল গুডবয় অভিশাপ। এত ভালো কোন কাজে লাগে জানলে চেষ্টা একটা থাকতো।
এখন স্লিপিং পিলস চমৎকার।
দেখো শূণ্যে ভেসে আছি।
হোল্ড অন,
মৃত্যু।
সেশন ৩
ম্যাডাম, মেয়েটি আচমকা একদিন বললো কথা বলতে না। বয়ফ্রেন্ডের ভয় থেকে এসব করলো।
আমাকে কেউ কোনোদিন ভয় পেল না কেন?
না হারানোর ভয়, না ফেরানোর ভয়।
ওর স্লিভলেস মেরুণ ব্লাউজের গোপনে দাঁতের শিলালিপি।
সমস্ত আগুন বরফে গলিয়ে-
লিখে দিলাম স্নেহ।
প্রত্যাখানের জবাব চুমু হয় না কেন!
আমার কী এই অপমান মাথা পেতে নেওয়া উচিত?
সেশন ৪
বলছি আমার কোনো সন্তান উৎপাদনের ব্যাপার নেই।
বরং আমি প্রেমিকার সন্তান হতে রাজি।
এসব কথা এখন গুরুত্বহীন জানি।
সেই বহুকাল পুরোনো শরীরের ঘ্রাণ বয়ে আনা স্মৃতি। কোলের ওপর পায়ের পাতা রেখে ব্যান্ড এইড লাগাচ্ছি। সেদিন একবার জড়িয়ে ধরলে আমি বাবা হয়ে যেতাম,
বিশ্বাস করো।
বাংলা মিডিয়াম স্কুল। স্কুলের শেষে নাচের ক্লাস।
পঙ্কজ ঘোষ
ফেরা
" যে যায় সে দীর্ঘ যায়..." ( শক্তি চট্টোপাধ্যায় )
কোনো কোনো যাওয়ার
আর ফেরা থাকে না
দুয়ার খুলে রাখে কত কে
বিছিয়ে রাখে কত কথার পথ
তবু ফেরে না কেউ কেউ
কী ভীষণ ভারী হয়ে আসে সব স্মৃতি!
কিছু হাসি মনের গভীরে লেগে
বেঁচে থাকা কঠিন এলোমেলো করে দিয়ে যায়
মনে হয় সুতীক্ষ্ণ রাতের শেষে
ভোরের আলোর মতো ফিরে আসবে সে
পাখি ডাকে পাতা জাগে
তবু ফেরে না কেউ কেউ
কিছু যাওয়া দীর্ঘ হয় ফেরা হয় না আর
ভ্রম
দূরে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে
এসব ভাবতে ভাবতে একদিন সব পুড়ে যায়
এত সবুজ, এত নদিভর্তি জল
সবই
বিবর্ণ রাতের মতো চুপ হয়ে আসে
প্রহরের পর প্রহর ভিড় থেকে হঠাৎই
স্তব্ধ হয়ে আসে
সব পাল্টে গেলেও শুনি
কেউ নাম ধরে ডেকে যায় আজও
দূরে গেলে সব ঠিক হয়ে যায়
এমন ভাবতে ভাবতে সব পুড়ে গেছে
তবু পড়ে থাকা ছাই
বৃত্তাকারে গভীর শূন্যের মতো
দীর্ঘতম অসুখ লিখে যায়
প্রিয়তম অসুখ
দরজার ফাঁক দিয়ে আসা সূক্ষ্মতম আলোয়
তোমাকে দেখছি
আর তীব্রতম শূন্যতাকে লালন করছি সযত্নে
জটিল সূত্রের ভুলভুলাইয়ার ভেতরে
নিজের ছায়াকেও রাখছি স্পর্শহীন
তুমি দূর থেকে দেখছ এসব
আমার ভাবনার ভেতর কিছু দৃশ্য
আমাকে আজও বাঁচিয়ে রাখে
জানি , এখন তুমি আমার প্রিয় কোনো জায়গাতেই নেই
দখিন দুয়ার খুললে
এখন কোনো উত্তর আসে না
রাত্রি ধারণ করছি
ছড়ানো ছেটানো অন্ধকারের ভেতর
আর নিজেকেই নিজে সন্দেহ করছি অবিরত
এই যে প্রিয় হাওয়া ও আত্মার ভেতরে ঢুকে যাওয়া 'বরিষার রাত'
সবই মৃত শহরের পুনর্জন্মের মতো নিপুণ একটা ভ্রম
অথচ দুয়ার আটকে রাখছি ভীষণরকম
আর বলছি, আমাকে সারিয়ে তোলো প্রিয় অসুখে।
শূন্যের ভেতর সবুজ
এইসব মেঘরাত্রির ভেতর
আমাদের কথাদের মনে হয়
কোনো এক দূর মাঠের রাখাল বালকের গান
ভালো লাগে তবু এক স্পর্শহীন গোলাপি বিভ্রম
আমাদের কথারা এখন কোনো এক নির্জন অরণ্যের ভেতর
ঝরাপাতার গভীর চুপের মতো মাটি ছুঁয়ে থাকে
কোনো এক দ্বীপের ভেতর
আমাদের সবুজ আজও
ভীষণ ভীষণ বেঁচে আছে
সারারাত একা একা হাঁটি
গাঢ় কুয়াশার মতো তোমার মুখ মনে পড়ে
প্রতিটি নষ্ট স্বপ্নের ভেতর তোমাকে আলো ভাবি
অথচ জানি,
আমাদের সমস্ত কথা ও স্বপ্নেরা
শূন্য দিয়ে ভাগ হয়ে গেছে
তিতীর্ষা জোয়ারদার
ফ্রয়েডিয়ান কমপ্লেক্স
১
পিতার তোমাকে হত্যার প্রচেষ্টা ,
আমার পিতাকে হত্যার প্রচেষ্টা ,
এর পর তোমার আমাকে হত্যার প্রচেষ্টা
অনেকটা সাইবেরিয়ান বরফের মতো তীব্র
২
প্রতিটি মায়েদের পুত্র প্রেম থেকে
আসলে না পাওয়া যৌনতার গন্ধ
গোসল ঘরে মিলিয়ে যায়
৩
কোনো এক প্রেমিক, প্যান্টের পকেটে
প্রেমিকার প্রতি ক্ষোভ লুকিয়ে রাখে
আদরের ফাঁকে গুঁজে দেয়
বাকিরা রম-কম ভেবে হাততালি দিয়ে ওঠে
৪
সন্তানের মতো ভালোবাসা
মেয়েটির প্রাপ্য ছিল বলেই
অন্ধকার শহরের গলিতে গলিতে
কেউ কেউ রেখে গেছে
পিডোফিলিয়ার রডোডেনড্রন গাছ
স্যাডিসম্
নিজেকে খুব নিপীড়িত ভাবতে হবে,
ভাবতে হবে আপনার প্রেমিক স্যাডিস্ট
আপনার বিছানাকে হতে হবে কফিন
রেললাইনে মাথা দেওয়া লোকটার প্রতি প্রায়ই সহানুভূতি এসে যাবে
এইসব ভাবতে ভাবতে
কেউ আপনাকে ফুল দিয়ে যাবে
ফুল নেবে? ফুল?
সহানুভূতি, প্রত্যাশা দিয়ে যাবে
কতকিছু ভালো হয়ে যায়
চোখ বন্ধ করে রাখুন
ভোরবেলা মনে হবে কবিদের সব কথা ভুল
চোখ বন্ধ করে রাখুন
অসুখ কথা মালীটার কথা ভাবুন
ফুলের মধ্যে বারুদ, অজস্র জানালা,
ঝাঁপ দিলে মাটি
ওপরে আকাশ
মাটির কাছাকাছি থাকুন।
নত
স্বাধীনতার এই ভার
তোমার হাতে দিলাম
আমাকে শেকল পরিয়ে দাও
এখনো আমার চোখ
কাপড়ের মাঝে লুকোতে চায়
বেঁধে দাও
যৌনতা নয়
পরাধীনতা দিয়ে যায় সুখের অন্তিম অহংকার।
ত্রপা
আমাকে চিনে ফেলে
পুরোনো প্রেমিকার কাছে ফিরে যাওয়া যায়
দু বাহু দিয়ে
কবিতার মাঝে অপরাধ খোঁজা যায়
তৃতীয় বাহু কাছে টেনে নিলে
বলে ফেলা যায়,
ভ্রান্তি সহজ নয়
কবি কি প্রেমিকা হয়?
ডিজাইন: বিশ্বজিৎ মাইতি |
রাজা
পর্ণাকে যা বলা হয় না
এবার শালিকের মনখারাপি গোধূলিতে প্রবেশ করা যাক। তথাকথিত ভাবনারা অপ্রয়োজনীয় এখন। একটি মলিন দশ টাকার নোট ক্ষণিকের সঙ্গিনী হয়তো। এবং কিছু অপ্রকাশিত নিরাকার। যে সব অনটনের দিন এখনো শেকড় মনে করায়। যে সমস্ত খুনের দৃশ্যে ভরা প্রেম কাহিনীতে মুখ্য চরিত্র ছিলো আমার। তোমাকে বলা হবে না কখনো। বলা হবে না, প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে শহরের নৈঃশব্দ্য ও চিৎকার। মাফিয়া গার্লফ্রেন্ডদের আকাঙ্খা। আমি বহুবার ধরা পরে গেছি শপিংমলের জাঁকজমকের। কত কত দগ্ধ ঘুমের গহীনে আতকে উঠেছি নিজস্ব চিতায়। আমার চোখে জাগ্রত উন্মাদ দেখে প্রিয় সখা ফিরে গেছে গ্রামের বাড়ি। উদাম শরীরে দাঁড়িয়েও কাঁদতে পারিনি ঝর্নায়। তোমাকে বলা হবে না, মঞ্চ থেকে সরে এসে যখন আমি একা, সটান কবি। নিজেকে সাধারণ প্রমাণের চেষ্টায় অসাধারণ অহং'এর কারসাজি আছে। বলা হবে না, লেখা ছেড়ে দিয়েছে' এ স্বীকারোক্তি কি ভীষণ মিথ্যে। অন্তর জানে, লেখা ছেড়ে চলে গেছে
শুভময়দাকে যে লেখা দিতে পারিনি
…সুতরাং প্রতিটি যতি চিহ্ন থেকে মুখ লুকিয়ে ফেরিওয়ালার ভূমিকা বেছে নেওয়া আবার। অভাব পাক্কা খিলাড়ি, ইচ্ছেমতো নাচিয়ে নেয়। এবং কালো নিয়তি। হাভাতে দুপুরের সঙ্গে নিদারুণ বোঝাপড়া। মুখোশ, বালির ঘড়ি আরও নানান পসরা সাজানো থাকে পিঠে। স্থানীয় সংবাদপত্রে লেখা হয় না মগজের কিলবিল। আজগুবী হাঁটে ফুটপাত। আমার শহর, আমাদের শহর টাকা ওড়ে। লুফে নিই সুদর্শন প্রেতাত্মা সমাগম। কলার টিউনে হাসতে থাকে অসুখী সূত্রধর। শহর ডার্ক গ্রে। এ শহরে প্রকৃত কবি ভেঙে ফেলেছে কলম। এ শহরে প্রুফ রিডারের লাশ খুঁটে খায় ধূর্ত কাক। প্রতিটি চরিত্র উলঙ্গ, হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে একে অপরের চোখে। হিজরের লজ্জা, মেকি মুখাবয়ব। মদ মাংস মাগি, আমারও খিদে পায় আশ্চর্য রকম। তিনটে সিঙ্গারার ঠোঙ্গা নিয়ে ভুতুড়ে দাঁড়িয়ে থাকি হাসপাতাল গেটে, মরদেহের গন্ধ শুঁকি। ঘন বান্ধবীরা তখন ফ্লাইওভারে বিরক্তিকর জঞ্জাট। আকাশে খসখসে মরা চাঁদ। আমি যে চোরা বাই লেন ধরে ফেরার চেষ্টা করি, সেখানে আধ জলা লিফলেট ও অপঘাতে মৃত লিটল ম্যাগাজিনের বসবাস। আমি যে লটারি বিক্রেতার দারিদ্র অনুধাবনের চেষ্টায় থেকে, তাকে ধাওয়া করে মোহনায় পৌঁছতে না পারা নদী। তেষ্টা নেই, ঝাপসা দৃষ্টি। ট্রাফিক সিগন্যালে ভিখারি মেয়েটির কাছাকাছি ভাগ করে নেওয়া রবীন্দ্র গান। ভীষণ দাবদাহ। মুখ পোড়ে, ডানা পোড়ে। শহুরে ফুল গুলোকে ভুল মনে হয়। বোকা বোকা সেলসম্যান হাতড়ায় শূন্যস্থান, ছেঁড়া ঘুড়ি। আবহাওয়া, কোকিলের অসহনীয় হাহাকার। সান্ধ্য অনুষ্ঠানে একটু একটু মুছে যেতে থাকে আমার সব নরম নাম। আদতে বৈশাখ বুকে আরো কিছু তপ্ত পাথর পুড়ে নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়
শিরোনামহীন ১
জাদুকর পারেন নিজেকে প্রকাশ না করেও জাদু দেখাতে। ঝুলি থেকে বের করে আনতে পারেন স্মৃতি রঙের রুমাল। রুমাল কখনো খরগোশ হয়, কখনো বা ছেলেবেলার ড্রয়িং খাতা। প্রতিটি শো শেষে জাদুকর পথে নামেন। তখন মোড়ের মাথায় চায়ের দোকান, ভ্যানওয়ালা এমনকি চৌকস পাগলও তাকে অন্য পাঁচজনের মত মনে করে। জাদুকর বিস্কুট খায়, বিড়ি ধরায়। চা পাতা ও দুধ কিনে বাড়ির রাস্তায় পা বাড়ান। চোখে উজ্জ্বল, ঠোঁটে লুকোনো তৃপ্তির হাসি। তিনি জানেন, তার সত্যিকারের ম্যাজিক শেখা হয়ে গেছে।
আমি এই জাদুকরকে খুঁজছি বহু জন্ম ধরে। তিনি ধরা দেন না। শুধু একটা ঘোলাটে আকাশ বিদ্রুপ করে। অবিশ্বস্ত সূত্রে খবর, জাদুকর এখন অন্য ডাইমেনশনে ঘাঁটি গেড়েছেন। অতএব আমার কিছুই শেখা হয় না। আমি কাব্য লিখি, মঞ্চে উঠে নেশা আওড়াই। ভীষণ আলোতে ঝলসে যায় হাতের পাতা। তেস্টা পায়, শহরে জলাভাব। চাঁদের উল্টো পিঠে ছুটতে থাকি। ছুটতেই থাকি বমি বেরিয়ে আসা পর্যন্ত। তারপর হয়তো বা ঘুম, স্বপ্ন। স্বপ্ন বলে দিতে নেই। সাদা কালো তে মনে রাখতে হয় কেবল। স্বপ্নে ভাসিয়ে দিতে হয় যাবতীয় লেখাজোখা। যাতে করে স্টেশন বাসস্ট্যান্ড ভিড়, ও সমস্ত সেলফি কোলাহল আমাকে পাশ কাটিয়ে যায় অনায়াসে। এইসব কবিতা দিবস,উৎসব লঘু হয়ে আসে। স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাহাড় কুয়াশা। যার ভেতর পর্ণার খোলা চুল কেমন ম্যাজিক মেশাচ্ছে হিমেল হাওয়ায়। আমার ব্যথা করছে না আর
দেবপ্রিয়ার জন্য শেষবার
প্রাচীন ছাদের নিচে এমন মায়াবী এসে দাঁড়ালে, বেহিসেবি প্রবণতা বাড়ে। দেহতত্ত্ব এলোমেলো হয়ে যায়। অপূর্ণতা বোঝো? পাপ? আমি পাপের মাহাত্ম্য চিনি। সংযত হওয়া ধাতে নেই। যদি শুদ্ধ বাঁচতে চাও, এখনই গুমখুনে বিলীন করো এই তুষ আগুন শরীর আমার। নাহলে ভেতরে এসো, খুব ভেতরে। বহুদূর অনন্ত নিষেধ পেরিয়ে এসেছি। অনেক অসুখ গাঁথা মাড়িয়ে ডানা মেলেছি আবার। এত সহজেই হেরে যাই কি করে! আমার সামান্য আয়োজন। ব্লু জিন্স, অ্যাশ টি-শার্ট। তোমাকে পুরোনো শহর ফিরিয়ে দেওয়া একরোখা জেদ। শত শত নেভিকাট পুরোনো হৃদ, অব্যক্ত নরম। আমাদের যা-কিছু হওয়ার ছিল, আমাদের যে-সমস্ত হল না আর, সবই তো মোহনাবিহীন নদীগল্প। মাঝির কুয়াশা। না-দেখা গল্পের ভাঁজে আমি আতর বিক্রেতা, মেঘলা ওড়নার অপেক্ষায়। ঘুমের পরতে পরতে আজন্ম জেগে থাকা। আমি নিরুদ্দেশে জাদুকর, এখনও শেষ ম্যাজিক আগলে বুকে। ছুঁতে দাও প্রথমবারের মতো। আশ্চর্য ঘটুক। আমাদের জীবনী থেকে হাসপাতাল গন্ধ পালাক। ছুঁয়ে দাও, দারুণ এলোমেলো হোক বিধান রোডে আবার। ছুঁয়ে দাও আগের মতো
শাশ্বত...
শুভ্রদীপ রায়
অপূর্ব রন্ধনশালা
(শবরী দি কে)
রাত বাড়ে। দিন হয়। গোপন কুটির থেকে ভেসে আসে মশলার সুঘ্রাণ।
কেউ বোধহয় সুসংহত ফোঁড়ন দিচ্ছে।আলুনি এই দুনিয়ায় কে সেই মহান রাধুঁনী? সমস্ত শহরের অলিতে গলিতে তার সুখ্যাতি। হাতে ঈর্ষনীয় মোহমায়া অথচ এমন নম্র জাদুকর কোনদিন দেখেনি শহরবাসী। অন্য শহর থেকে এসে তিনি হাতে ধরে রান্না শেখালেন বাকী 'মিশেলিন স্টার শেফ' দের। আমার তো বাকিদের ঔজ্জ্বল্যে চোখ ধাঁধিয়ে আছে বহুকাল। সম্ভাবনার সমস্ত পথ জুড়ে অজস্র কীলক, তাই আমার কোনো সুষ্ঠু রান্না করে ওঠা হলনা।
অথচ আমার অদূরেই তিনি অসামান্য খোশবাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন সমস্ত চরাচর জুড়ে। বাগানঘেরা সেই কুটিরে সকাল বিকেল কত শত তরুন রাধুঁনি আসে আর যায়। শিলনোড়া চালানো শেখে,মশলা চেনে,কষানোর পদ্ধতি আওড়ায়। জানি এরা সবাই একদিন বড় রন্ধন বিশেষজ্ঞ হবে। হবেই।
আর প্রাজ্ঞ রাধুঁনি মিটিমিটি হাসেন,তার জর্দার মায়া মিশে যায় প্রতিটি রান্নার আত্মার সাথে, যেন ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই একটি দেহ পেয়ে যায় নিগম-আগম জ্ঞান। আমি কিছুতেই তার পুন্য পাকশালা খুঁজে পাইনা, যেন আমার চক্ষু-কর্ণ- নাসিকার বাঁধন কাটেনি,
এখনও সময় হয়নি সেই অপূর্ব রাধুঁনির স্নেহমাখা রান্না চেখে দেখার।
এ যাবৎ যে সমস্ত মেক শিফট রাধুঁনির রান্না খেয়েছি, চমৎকৃত হয়েছি, প্রত্যেকে তার কাছে পাত পেড়ে খেতে আসে। তিনি কাউকে ফেরান না। আমি জানি তিনি চেয়ারে বসলে তা সিংহাসন হয়ে যাবে, অথচ তার চেয়ারে বসতে চরম অনাসক্তি। মাটিতে বসেই তিনি খালি বস্তায় ভরে দেন বুক ভরা ধান, যেন সাবলম্বী করে দিলেন তাকে। মগ্ন রাধুঁনী নিজের ভেতর নিজেকে জমানোর চাবিকাঠি তুলে দেন তরুন শিক্ষানবিশদের হাতে,অথচ অদূরে থেকেও আমি রান্নাঘরে ঢুকতে ভয় পাই।
'একদিন আসব' : একথা বহুবার বলেছি তাকে। এখনও তিনি ডাক পাঠান নিজের রান্নাঘরে। ভাবি নিজের হাতের রান্না তাকে খাওয়াব একদিন, আমার সমস্ত ঢেলে তাকে তৃপ্তির মৃদু হাসি উপহার দেব। সব্জী কাটতে, মসলা বাটতে, তেল গরম করতেই আমার জীবন শেষ হয়ে এল, রান্না আর করে উঠতে পারলাম কই! তবু তার কাছে যাইনা। অথচ ঢাকনার তলায় ফোস্কা লুকিয়ে তেলের ছিটে বাঁচিয়ে আর কেই বা বোয়ালমাছ রান্না শেখাবে?
শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়
খাদ্যশৃঙ্খল
রক্তগন্ধ মানুষজন্ম কিঞ্চিৎ লঘু করে৷ খুবলে খুবলে ঝরে যায় মাংসপিণ্ড। আদিম যুদ্ধ সংক্রান্ত যা কিছু আমায় অশান্ত করে রাখে। বিধ্বস্ত চেহারায় মেয়েটি শুয়ে যায় মাটির ওপর, আমি শেয়াল চিনি না অথবা কুকুর পুষি না। ক্লান্ত শরীরটি হেলে আছে মটির ওপর, গাছের নীচে, ফুলের আশায়, মেয়েটির নির্বাক দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করে শেয়ালদের হাঁটাকে। নিস্তব্ধ মেয়ে- গা এলিয়ে পড়ে মাটির ওপর। যেটুকু রক্ত যেখানে ছড়িয়ে সব চেটে খায় শেয়াল দলীয় নেতা। খুবলে খুবলে যায় শারীরিক ক্ষত ও সৌন্দর্য। যেকটি দিন যা কিছু রাত নির্লিপ্ত হয়ে যায়। থোকা থোকা রক্ত থালার ওপর পড়ে। ভাত ফোঁটা গন্ধে আতকে ওঠে মেয়েটির মুখ অথচ যা কিছু সঞ্চয় লালে মিশে যায়। খিদে মানে জ্বালায় কাতর - মৃত্যু মানে গন্তব্য নির্ধারন অতএব লুটিয়ে থাকা শরীর আংশিক ক্ষণের। এই যে খাবারহীন রাত অথবা হিংস্র স্বজনদের সমাগম এ ও কী যাত্রার লক্ষ্য নয়?
ভীতু শেয়াল লুটিয়ে যায় মেয়েটির পাশে। ভোজ হয়, ভোগ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে শেয়াল। থোকা থোকা রক্ত মুখে নিষ্পাপ তাকিয়ে থাকে পুরুষ শেয়ালটি। মেয়েটির নির্লিপ্ত চোখ খোলা থাকে না অতএব শেয়াল অস্পষ্ট
এরপর.... তারপর? কিছু একটা হবে -
বৃষ্টি হবে। শীত হবে। বাষ্প হবে
ভিজে যাবে - জমে যাবে - উবে যাবে৷
মিশে যায় ছাল ছাড়ানো দেহ, কিছু একটা দৃষ্টি থেকে যায়,নান্দনিক মরণ কাকে বলে? এ যাবৎ কাটিয়ে যাওয়া একাধিক ফু দেওয়া মুখ তাকিয়ে দেখি - ভিন্টেজ সিনারিতে উষ্ণ পানীয় দেখি। মরণ সবার আসবে। মেয়েটির নান্দনিক মরণকে ঈর্ষা হয়। ওর দেহ থেকে বাকল ছাড়ানো হয় স্লথ গতিতে। ছাল বাকল পড়ে থাকে শরীরটির পাশাপাশি। আমি বুঝি মৃত্যু পরবর্তী জীবন খাদ্য হয়ে ওঠে বৃদ্ধ শেয়ালের অথবা মানুষের। মানুষ মানুষকে সচেতন করতে আসে - মানুষ মানুষকে পণ্য করে যায়। অতএব শরীর ভোগ্য বস্তু। শরীর পণ্য বস্তু। জীবিত কালে অর্থলগ্নি
পরবর্তী দৃশ্যপটে খসে খসে পড়ে ছাল
মূল ছিন্ন হয়ে ছিটে আসে কাল ও পাত্রে
স্থান অলিখিত অতএব খাদ্য যথাক্রমে অনিশ্চিত
শেয়ালটির মুখ শুকিয়ে আছে - তার ডাক ভিন্ন রঙের
পাশ্ববর্তী লাল নদীতে শেয়ালটি থিতু হয়ে। তার লোলুভ দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে রাতটির পাশে
মণিশংকর বিশ্বাস, আপনার 'পাঞ্জাব স্টেট লটারি', 'আমার কথা', 'অবিশ্বাস' ও 'শিল্পী' মিলে যে চতুর্ভুজ তৈরী হল, তার নাম মুগ্ধতাবোধ। সাবলীল তাই গ্রহণীয়, গ্রহণীয় বলেই পলকা নয়...সাড়ম্বর তাই উৎসবমুখর, উৎসবমুখর বলেই অহেতুক নয়...
উত্তরমুছুনএই লেখারা জীবন থেকে উঠে আসা অলীকের মত বাস্তব ছুঁয়ে কী সম্ভ্রান্ত আঙ্গিকে অটুট! শব্দের ব্যবহারে আটপৌরে অথচ স্ব-সংজ্ঞাবাহী! 'আমার কথা'র শেষ পংক্তিতে এসে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে সময়ও। চারটি লেখাতেই এক প্রথাবিমুখ টান টানটান হয়ে জেগে থাকে। চমকে উঠে ভাবি আমারই লেখা লিখিত অন্য কলমে। এই যে এক আনাড়িকেও আপনি কবিতায় স্থাপিত করে তুলছেন....এ লেখারা হয়ত সার্থক হয়ে উঠছে সেখানেই।