ধারাবাহিক উপন্যাস চতুর্থ পর্ব





চতুর্থ পর্ব 



                              বেলাভূমি
                                      জিৎ পাত্র












 
জিৎ পাত্র
      সকালে উঠতে দেরি হলো সুবর্ণের , রাত্রে হঠাৎ সৌরভের বাবার অসুস্থের সংবাদ পায়। সাথে সাথে রাত্রের ট্রেনে ফিরে গেছে সৌরভ ও অনিকেত । সুবর্ণ ও যেতে চেয়েছিল কিন্তু অনিকেত যেতে বারণ করলো ।
স্মিতা এসে সকালে তুলে দিয়ে গেছে সুবর্ণকে।সকালের খাবার খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল দুজন। যাবার সময় রাস্তায় দেবলীনাকে তুলে নিল ।গাড়ির মধ্যে মাঝে মাঝে দেবলীনাকে লক্ষ্য করলো সুবর্ণ, চোখ গুলো ফুলে গেছে মনে হলো, সারারাত ঘুমাই নি দেবলীনা।গাড়ি সোজা শান্তিনিকেতন হয়ে কোপাই নদীর তীরে দাঁড়াল।জায়গাটা বেশ নিরিবিলি কেউ তেমন নেই ।স্মিতা সামনের পাথরের চাইয়ের উপর বসল।এই দিকে দেবলীনা অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল ।আসতে আসতে সুবর্ণ তার কাধে হাত দিতেই সামনা-সামনি ঘুরে দাঁড়াল দেবলীনা।দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে সারা মুখ ভিজে গেছে ।
" আপনি এমন কেন করলেন সুবর্ণবাবু, আমিতো আপনার কোন ক্ষতি করিনি ? "
" কি করলাম আমি? "
" আপনি কোন অধিকারে আমার বাড়ি গিয়েছিলেন? "
" যদি বলি ,তোমাকে দেখার পর ভালোবেসে ফেলেছি দেবলীনা, কোন এক যন্ত্রনা তোমাকে না দেখে থাকতে পারা অবোধ প্রেম ,আমাকে টেনে নিয়ে গেছে তোমার বাড়ি। "
"ভালোবাসা ! আপনাদের মতো বাবুদের ভালোবাসা? "
"আমি খুব সামান্য একজন মানুষ দেবলীনা , বাবু বলে আমাকে অসম্মান করো না প্লিজ। "
"কি জানেন আমার ব্যাপারে ? "
"যদি বলি জানতে চাইনা কিছুই "
"হঠাৎ যদি শুনেন আমি পরিচয় হীন ?"
" ঠিক বুঝলাম না ? "
" যা কোনদিন কাউকে বলিনি,নিজের অন্তর আত্মাকে সান্তনা দিয়ে দুটো মানুষের মুখ চেয়ে নীরব হয়ে থেকেছি , তা আপনাকে আজ বলছি " আমি অনাথ। " 
" আমি শুধু তোমাকে চাই, আর একজন মানুষ হিসাবে আর একজন মানুষের হাত ধরতে চাই, আমি জানি আমরা সবাই  ঈশ্বরের সন্তান কেউ অনাথ নই দেবলীনা ! "
" আমাকে ক্ষমা করবেন সুবর্ণবাবু। "
" এমন আত্মগ্লানি নিয়ে থেকো না দেবলীনা ,পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ভালোবাসতে চাই , তার ভালোবাসার মানুষকে সম্মান জানাতে জানে সযত্নে
। "
"আবারো আমাকে ক্ষমা করবেন সুবর্ণবাবু! আপনার ভালোবাসাকে সম্মান দিতে পারলাম না, আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ , আমার চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে পাবেন আপনি। "
"আমি তোমাকেই ভালোবাসতে চাই দেবলীন। "
" এইভাবে আমাকে অপরাধী করবেন না ,আমার মুখ চেয়ে না বা দেখলেন, কিন্তু ওই দুটো মানুষের মুখ চেয়ে অব্যাহুতি দিন আমাকে , আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। "
" এই ভাবে বলো না প্লিজ , আমি ভালোবাসি তোমাকে। "
" আপনি বাস্তবের মাটিতে নেমে আসুন সুবর্ণবাবু, বাস্তব যে বড়ো কঠিন। "
"আমি ছোটো থেকেই বাস্তব বাদী দেবলীনা , এই জন্য বাবা আমাকে সহ্য করতে পারেন না। "
" আমি চাইনা আমার জন্য আবার আপনার বাবা আপনাকে  খারাপ ভাবুক, উনি কষ্ট পান। "
" আমার পথ আমি নিজেই বেছে নিয়েছি দেবলীনা, তাই আমি জানি বাবা কোনদিন তা মেনে নিতে পারবেন না , আমি সাধারন ভাবে জীবন যাপনে বিশ্বাসী,। "
" আমার জন্য আপনার পথ আরো বিষাক্ত হোক , আমি তা চাই না সুবর্ণ বাবু। "
" তুমি এত স্বার্থপর দেবলীনা?  "
" হ্যাঁ আমি স্বার্থপর , আমার কেরিয়ার আগে , আমার,বাবা-মার সুখ আগে , তার জন্য আমার কাছে সব কিছুই মূল্যহীন।"
" আমার কি হবে দেবলীনা ? "
" আপনি ফিরে জান বাবা, মার কাছে, প্রত্যেক সন্তান কর্তব্য, বাবা,মার ইচ্ছে কে সম্মান করা,  আমি আপনার মত কোন বাবুর প্রত্যাখানের ফসল। "
"এই ভাবে নিজেকে ছোট করো না দেবলীনা। "
" চলুন স্মিতা অপেক্ষায় আছে। "
" আমি কিন্তু আমার উত্তর পেলাম না দেবলীনা ? "
" আমি তো বললাম আমাকে ক্ষমা করুন। "
" এটা কিন্তু আমার উত্তর নয় ? "
" আমি বাধ্য নই আপনার উত্তর দিতে। "
" উত্তর তোমাকে দিতে হবে দেবলীনা , বিনা কারনে তুমি আমাকে রিফিয়ুজ করতে পারো না। "
" আপনাকে ভালোবাসার মতো যোগ্যতা আমার নেই।"
" যোগ্যতা কার আছে কার নেই হৃদয় কি বুঝে। "
" বুঝার প্রয়োজন নেই আমার হৃদয় মরে গেছে অনেকদিন আগেই। "
এই বলে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে চলে গেল দেবলীনা "



বাড়িতে ঢুকতেই ডাইনিং রুমে বাবাকে দেখলো সুবর্ণ!
তাই তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে খাবার টেবিলে এল।
" কোথায় ছিলে সারাদিন "
"শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম "
" আজ বিকেলে মিসেস গাঙ্গুলির বাড়ি যেতে হবে মনে আছে ? "
" আজ যেতে পারবো না। "
" হয়াট, কি বলতে চাইছো তুমি ! আমি ও তোমার মা মিসেস গাঙ্গুলির কথা দিয়েছি , যেতে কেন পারবে না জানতে পারি ?"
" যেতে ইছে করছে না "
" বিকজ , তুমি যাচ্ছো না এইতো ! আমাদের স্পেটিজ বলে কিছুই থাকলো না। "
" কেন যেতে হবে জানতে পারি ? "
" মুখে মুখে কথা বলতে শিখে গেছো!  , তবে শুনে রাখো , মিসেস গাঙ্গুলির মেয়ে রিচা, আমরা দেখেছি মেয়েটি কে ভারি মিষ্টি মেয়ে শিক্ষিতা, সুন্দরী ,তোমার জন্য পচ্ছদ আমাদের। "
" ওই সব আধুনিকা মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না বাবা। "
" শাট আপ রাসকেল , আমি ভাবতে পারছি না তুমি আমাদের ছেলে। "
" তুমি চুপ করো আমি বুঝাবো সুবুকে , বললো মা। "
" না না তুমি এই ছোট থেকে ছেলে এত লাই দিয়ে মাথায় তুলেছ।  "
" আপনি কথা বলাবেন না জামাই বাবু, আমি ফোন করছি মিসেস গাঙ্গুলিকে , বললো মাসিমা। "
" সমাজসেবার নাম করে, যত সব অশিক্ষিত, আনকালচার্ড ছেলে, মেয়েদের সাথে মিশছ তুমি। "
" আপনার ধারনা ভুল বাবা,আপনি মনে করেন আমি যাদের সাথে মিশি সবাই অশিক্ষিত, আনকালচার্ড, আপনি নিজে যা ভাবেন সেটাকেই ঠিক মনে করেন  আমি বড় হয়েছি,আমার কিছু স্বাধীনতা থাকতে পারে। "
" বাঃ অনেক গুন হয়েছে দেখছি , এডভাইজার হয়েছ, নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখে গেছ দেখছি, তলে তলে এত উন্নতি হয়েছে তোমার ভাবতে পারছিনা। "
" তোমরা চুপ করো এবার খেতে বসো,তোমাদের জন্য অন্যরা খেতে পারছে না।বললো মা। "
" তুমি ওকে বলে দাও মায়া ও আজ যাবে দ্যাটস মাই অর্ডার। "
" তুই কি চাস সুবু! আমার পুরানো বান্ধবী ,অনেক বছর পরে বিদেশ থেকে ফিরেছে , তাদের একমাত্র মেয়ে রিচা, অসম্ভব সুন্দরী, স্মার্ট, তাদের স্টেটাস কালচার, আভিজাত্য সব কিছুই ভালো, তাছাড়া ওরা নিজে থেকে চাইছে আমাদের সাথে সম্পর্ক করতে। "
" আমি এখনি বিয়ে করতে চাইছিনা মা?  "
" আমরা তে চাইছি না ,তুই এখন বিয়ে কর ! আগে তোর মেডিকেল কমপিলিট হোক ,অপরুপা মেয়ে এখন মুম্বাই থাকে,মডেলিং এর কোর্স করছে ,আগে ওর পড়াশুনা শেষ হোক , তোরা আগে ভালো করে দুজন ,দুজনকে দেখ, বন্ধুত্ব কর ,তারপর নিজেরাই ডিসিশেন নিবি, বললো মা। "
" আমরা সব কিছুই আলোচনা করেছি সুবর্ণ, তুই ভাবছিস না দেখে শুনে তোর বিয়ে দিচ্ছি, বললো মাসিমা। "
" আমার কিছু মতামত নেই মানি,পড়াশুনা ছাড়া বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে আমি রাজি নই এখুনি। "
"তাহলে তুমি মিসেস গাঙ্গুলির বাড়ি যাচ্ছে না তাই তো ! "
" কথা যখন দিয়েছেন যাব "
খাওয়াদাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে এল সুবর্ণ । সকালে গাড়িতে যেতে সৌরভের সাথে কথা হলো, ও বাবা আগের থেকে অনেক সুস্থ এখন । এই সময় দুই বন্ধু থাকলে সাহায্য পেত সুবর্ণ ।প্রচন্ড মাথা ধরেছে ,সাথে মন টাও ভালো নেই সুবর্ণের।



ধোয়াটে শহর ,সবাই যেন মনে হচ্ছে উচু উচু ইমারতের মাঝে ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যস্ত,আর এই শব্দটি আজকে তার সর্বগ্রাসী মনে হয়,অজ্ঞাত, অদৃষ্ট অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তার সব খেয়ে ফেলেছে। প্রথমে খেল শান্তি, তারপর সুখ, যদিও উচু,নিচু ,গরীব , বড়লোকের মাঝে কালো বিন্দু হয়ে ভেসে আছে স্বপ্ন ।গাড়ি চলতে লাগলো বোলপুর শহরের কাছেই নবনির্মিত ফ্ল্যাটে থাকেন অপরুপ দেবী ও তার মেয়ে । স্বামী বিদেশে থাকেন। সব মিলিয়ে ফ্ল্যাট  খুঁজতে বেগ পেতে হলো না। এপার্টমেন্টের সামনে পর্যন্ত গাড়ি  চলে এল।কিছু-কিছু অচেনা অজানা জায়গায় পৌছানোর আগে মনের মধ্যে তার সম্পর্কে ছবি আঁকা হয়ে যায়।   লিপ্টে করে ফোর-ত ফ্লোরে উঠে গেল দুজন।কলিং বেল টিপতে ই দরজা খুললো বাড়ির পরিচালিকা। রুমে ঢুকতেই সুন্দর, দামি দামি সুন্দর আসবাব পত্রে ভর্ত্তি। দোঁয়ালে ফিদা হুসনের বেশ কিছু ছবি টাঙ্গানো অনেকক্ষণ পরে অপরুপা দেবী বেরিয়ে এলেন ,,সুবর্ণ দেখা মাত্র পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে।বাধা দিলেন অপরুপাদেবী ।
"আমি এই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম ঠিক মতো মানতে পারিনা ডিয়ার. তোমরা আধুনিক যুগের ছেলে মেয়ে হাতে হাত মেলাবে এটাই ফ্যাশন "।
"এক নিমিষেই যেন পালটে যাচ্ছে সবাই, মনে হলো সুবর্ণের অবাক হয়ে চেয়ে রইল সুবর্ণ "
" রিচা কোথায় মাসিমনি ,দেখতে পাচ্ছি না ? বললো স্মিতা। "
"ও রেডি হচ্ছে ডিয়ার জাস্ট ওয়েট প্লিজ। "
" এমন সময় কফি নিয়ে এল সেই মহিলা, দিয়ে আবার চলে গেলেন। "
কফি খেতে খেতে না না ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলেন মিসেস গাঙ্গুলী। বেশির ভাগ নিজের মেয়ের সম্পর্কে ! মেয়ে এই করে সেই করবে । ওর বাবার ইচ্ছে এম,বি, এস পাশ করার পর তুমি বিদেশে যাও । রিচার ইচ্ছে বিয়ের পর তোমরা হানিমুনে ইউরোপ যাবে ! "
" তোমার মা আমার কলেজের বান্ধবী তখন ই আমরা সিন্ধান্ত নিয়ে ছিলাম ,আমাদের বিয়ের পর এই বন্ধুত্ব অটুট রাখবে আমরা নিজেদের সন্তানদের সম্পর্কের জড়িয়ে  আবদ্ধ হবো এক আত্মীয়ের সম্পর্কে "
 এমন সময় রিচাকে আসতে দেখলো মিসেস গাঙ্গুলী
" গুড ইভিনিং মাই সুইট হার্ট "
"" গুড ইভিনিং মাই সুইট মম এন্ড " গুড ইভিনিং এভরিবডি।
হ্যলো সুবর্ণ ,হাত বাড়িয়ে দিল রিচা "
" হ্যলো "
" তোমার প্রশংসা এত আমি শুনেছি মমের কাছে কি বলবো "
"  ও সরি স্মিতা লক্ষ্য করিনি হাই "
" ওকে দি, "
"প্লিজ কিছু মনে করো না"।
" বাট তুমি কি থাকছো  কিছুদিন এইখানে দি, নাকি মুম্বাই চলে যাবে আবার ? "
" আই থিং কিছুদিন থাকবো ,এখন একটি বিদেশি প্রজেক্টে কাজ করি মেডেলিং এর, দেখি খুব তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে ! " ! "
" এসো স্মিতা তোমাকে আমাদের  এপার্টমেন্টের চারিদিকটা দেখাই, মিসেস গাঙ্গুলি "
"আসছি দাদা,তুমি দি সাথে কথা বলো! "
"আসছি সুইটহার্ট তোমরা কথা বলে নাও "
" আপনি চুপ করেন আছেন সুবর্ণ ? এনি প্লবলেম ? "
" না না কিছু নয় ! "
" আমি কিন্তু আপনি বলতে পারিনা ! তুমি বললে অসুবিধে নেই তো ?  "
" না না বলতে পারেন ! "
" ওকে থ্যাক্স "
" মম এর কাছে শুনেছ মনে হয় , তোমার মম ও আমার মমের কি পরিকল্পনা ?  আমার অপত্তি নেই !  বাট এত তাড়িতাড়ি বিয়ের ব্যাপারে ভাবছি না ? সামনে আমার মিস ইন্ডিয়া কম্পিটিশন আছে "
" আমি কখন ই এই ব্যাপারে ভাবিনি "
" ও গড থ্যাক্স , মম চাইছে খুব তাড়িতাড়ি রিলেশেন টা হয়ে যাক , হ্যাঁ বলে রাখি আমি কিন্তু ডিক্স করি, পার্টিতে যাই । "
" দেখুন আপনাকে আগেই জানিয়েছি এই সব ভাবার অবকাশ আমার হয়নি। "
" তবু ও,  হ্যাঁ  বিয়ের পর আপনি সেক্স করতে পারেন , আমি কিন্তু বেবি নিতে পারবো না ? ফিগার খারাপ হয়ে যাবে আমার , চাইলে আপনি কোন চাইল্ড হোম থেকে বেবি নিতে পারেন তাতে আমার আপত্তি থাকবে না। "
" দেখুন ফাষ্ট টাইম আমি বিয়ে করবো না এখুনি আগেই বলছি,তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি একজন নারী প্রকৃতপক্ষে মাতৃত্বের সাধ না পেলে তার নারী জন্ম বৃথা , একজন মেডিকেলের স্টুডেন্ট হিসাবে দেখি রোজ কত মহিলা মাতৃত্বের জন্য আমাদের কাছে আসেন তারা বেশিভাগ আমার,আপনার পরিবারের মতোই ? "
" এই সব বেকডেটেড ,অনেক পুরানো,আমার মতো যারা কেরিয়ার নিয়ে ভাবে তাদের কাছে এর মূল্য নেই। "
" তার মানে বলতে চাইছেন ফিল্মস্টার থেকে আপনাদের মডেলিং এর দুনিয়া আলাদা,আজ সেলিব্রিটিরা যারা বিবাহিত তারা কেরিয়ার নিয়ে ভাবেননি কোনদিন,বিয়ের পর সন্তান হবার পরেও তারা কিন্তু অভিনয় করছেন ? "
" ভেবেছেন হয়তো ! আমি আমার এই জীবন এনজয় করতে চাই ! মডেলিং এর দুনিয়ায় একটা জায়গা করতে চাই ,যেখানে সংসার,বেবি এই সব ব্যস্ততম লাইপ আমার পথের বাধা হয়ে দাঁড়াবে ? "
" তবে আপনি বিয়ে কি জন্য করতে চাইছেন ? "
" বলতে পারো মম এণ্ড ডেডের জন্য ,তাদের ইচ্ছে আমাকে সেটেল দেখে পাকাপাকি ভাবে জীবনের শেষ দিন গুলো বিদেশে থাকতে পারে। "
" একজন ছেলের জীবনের দাম নেই আপনার কাছে ? যিনি আপনাকে স্ত্রী হিসাবে পেয়ে অনেক স্বপ্ন দেখবেন ? "
" তার জন্য তোমাকে সব জানিয়ে দিলাম আর অন্য কেউ হলে তাকেও জানিয়ে দিতাম ! ইচ্ছে হলে আগে থাকেই এগরিমেন্ট করে নিতে পারো এবং পরে আমাকে ছেড়ে দিতে পারে অথবা ডির্ভেস দিতে পারো ? "
" ছেড়ে দিলাম! সোজা একটা শব্দ, আপনাদের কাছে সব জিনিস কত সোজা ! একটা পবিত্র সম্পর্ক মূল্যহীন,ইচ্ছে হলো বিয়ে করলাম, তার সাথে কয়েক  বছর কাঁটালাম,পরে মনে হলো এর সাথে লাইপ কাটাতে ভালো লাগছে না ছেড়ে দি, কিছুদিন পর আবার অন্য আর একজনের সাথে ,ফেলে আসা সেই মানুষ টা আপনাকে ছাড়া কেমন আছে একবার জানতে ও চাইবেন না, আসলে কি জানে যারা ঠকায় তারা যে বেশী ঠকে, সেটা তারা বুঝতে পারে না কারন, ঠকা ও ঠকানো দুটি শব্দ কিন্তু একি ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।"
" মাই লাইফ, মাই চয়েস ।  "
"আমি জানতাম মেয়েদের সতীত্ব মেয়েদের অহংকার, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন দেখি সেটাও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে লোভ, লালসার কাছে"।
" দেখে এখনকার মেয়েরা এই সব ভাবেনা এখন, মস্তি,ইনজয়,পার্টি এটাই জীবন "।
" আপনাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সাধারণ গরীব বাড়ির মেয়েরা আজ,একধরনের মানুষ তাদের লোভের টোপ দিয়ে ভোগ করছে,নিজের স্থার্থ সিদ্ধির জন্য বিভিন্ন আমলা,রাজনৈতিক নেতার কাছে প্রসাধনী হিসাবে সাজানো হচ্ছে খাবার প্লেটে মেয়েদের,এর জন্য দায়ী কারা জানেন আপনাদের মতো ওভার স্মার্ট কিছু স্বার্থপর মেয়েরা,যাদের কাছে নিজের রক্তের সম্পর্কের চেয়েও লোভ লালসা আগে  ? "
"জ্ঞান দিচ্ছো? "
"না সাবধান করছি আপনাদের ,একদিন হিংস্র কুকুরের দল ছেড়ে খাবে শরীর টা তার পর দেখবেন কোন এক শহরে নোংরা হাই ড্রেনে পড়ে থাকবে জীবনের শেষ ধুক ধুক করা দেহ টা "।
" ভবিষ্যৎ আর কে দেখেছে বলো  "।
" ঠিক ব্যস্ততার শহরের চোখে পড়ে না অতীত,যেখানে ভবিষ্যতের পথ তো দুর্গম,তবুও বলবো সম্পর্কে সম্মান করুন, প্রতিটি সম্পর্ক প্রবিত্র। "
"এ গুলো কি আমাকে বলছো? "
" না তাদের বলছি, যারা অমানবিক কিছু মানুষের লালসার শিকার এখনো হয়নি, সেই সব বিভিন্ন ধর্মের ব্যবসায়ীদের যারা ধর্মকে যুদ্ধে পরিনিত করছে অসহায় কিছু মেয়েকে ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে লাভ জেহাদের হাঁড়িকাঠে বলি দিয়ে কিছুদিন ভোগ করে একদিন বিক্রি করে দিচ্ছে নিষিদ্ধ পল্লী ছোট্ট ঘরে তাদের বলছি,  সেই সব সহজ সরল মেয়েদের যারা চোখ থাকতেও অন্ধ তাদের বলছি,যারা এখনও নিজেদের শুধরাতে পারেনি তাদেরও বলছি । "
" বাই দে বাই ছাড়ো এই সব ! তোমার লাইপ নিয়ে কি চিন্তা ভাবনা আছে ? "
" আমি খুব সাধারন ভাবে বাঁচতে ভালোবাসি । "
" মানে ? "
" প্রচুর অর্থ বাবা-মার থাকলেও তাতে আমার বিন্দুমাত্র লোভ নেই । বাবা - মা পার্টি গেলেও আমি তাদের সাথে যাইনি কোনদিন । বাড়িতে গাড়ি থাকা সত্বেও আমি সাধারনত টেক্সি অথবা বাসে যাতায়াত করি । এর জন্য বাবা আমাকে তিরস্কার করেন । তাতে আমার কিছুই এসে যায় না । আমার কাছে মানুষ হিসাবে মানুষের জন্য কিছু করা আসল ধর্ম । "
" মানে ঠিক বুঝলাম না "
" এম, বি, এস পাশ করার পর শহরে না থেকে গ্রামে গিয়ে প্র্যাকটিস করবো  "
" প্রেফেসার অনুরুদ্ধ রায় ও মায়া রায়ের ছেলে গ্রামের গিয়ে সরকারী হসপিটারে চাকুরি করবে ? বেশ ইন্টারেস্টিং। "
" এতে হাসার কিছু নাই মিস রিচা ? আমার থেকে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে মেয়ে আজ মানব সেবায় নিজেকে আজকে বিলিয়ে দিয়েছেন। "
" আপনি কি স্বামী বিবেকান্দ ভাবেন নিজেকে ? "
"এত বড় মহান হবার যোগ্যতা আমার নেই রিচা,তবে তার দেখানো পথ অবলম্বন করতে পারলে আমার এই মানব জীবন স্বার্থক" 
" অনেক ধন্যবাদ তোমাকে সুবর্ণ "
" ধন্যবাদ দেওয়ার কারন জানতে পারি ? "
" এখন নয় ? একদিন একটু সময় দিতে পারবে আমাকে নির্বিঘ্নে তুমি আর আমি ? "
" আমি আর বেশি দিন থাকবো না সামনেই আমার মেডিকেল কলেজ খুলবে তাই বলতে পাচ্ছি না ? "
" প্লিজ বন্ধু হিসাবে একটু সময় চাইছি  এটাও কি পেতে পারিনা ? "
" মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল সুবর্ণের ! একটা মেয়ে এতক্ষন এত সিরিয়াস, সাথে সাথেই এমন নরম , শীতল হয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে পেল না ? "
" আমাকে নিয়ে ভাবছো ? কিভাবে একটা মেয়ে নিজের কেরিয়ার ছেড়ে আধুনিকা থেকে গ্রাম বাংলার সাধারণ মেয়ে হয়ে গেল বুঝতে পারলে না ?
শুধু বলতে পারি তোমাকে আমি পরীক্ষা করছিলাম ? তুমি ফুল নাম্বার নিয়ে পাশ করলে এই পরীক্ষায় । আর বাকি সব প্রশ্নের উত্তর অন্যকোন দিনের জন্য তুলা রইল। "
" রিচার গলায় রহস্যের সুর । আধুনিকা রিচা কেমন যেন রহস্যময় হয়ে গেল । "এমন সময় স্মিতা ও  মিসেস গাঙ্গুলী  রুমের ডুকলেন  । 
"ও মাই ডারলিং কেমন বুঝলে সুবর্ণকে ? তোমার পারফেক্ট তো? "
" ও মম কালকে একটু আমরা বাইরে যাবো প্লিজ এরেঞ্জ করো প্লিজ ? "
" কালকে যে আমার বিশেষ একটা কাজ আছে ! "
" নে মাই সন ,রিচা যখন চাইছে কালকেই কোথাও ঘুরে এসো , আমি তোমার মা ও মিষ্টার রায় কে ফোনে বলে দিচ্ছি। "
" এবার আমরা উঠবো মাসিমনি ? "
"রাত্রে ডিনার করে গেলে ভালো হতো সব রেডি ?
" না না আজকে আমার কাজ আছে অন্যকোন
 দিন হবে। "
সবাই কে অভিবাদন জানিয়ে বেরিয়ে গেল দুজন "




গাড়ি চলছে! পথের দিকে চেয়ে আছে সুবর্ণ মাটঘাট পেরিয়ে গাড়ি ছুটছে নিজের গতিতে  মনের মধ্যে অস্থিরতা 
" রিচার সাথে কথা বলে তোর কেমন লাগলো স্মিতা ? "
" তুমি কি তার প্রেমে পড়ে গেলে দাদা ? "
" না রে এমনি কিছুই নয় ! একটা মেয়ে এত আধুনিক নিজের কেরিয়ার নিয়ে এত কেয়ারফুল,হঠ্যৎ কেমন বদলে গেল ? এক নিমেষেই মনে হলো এই গুলো ওর লোক দেখানো !আসলে ও অন্য কিছু ?।  "
" দেবলীনা আমাকে ফোন করেছিল দাদা ও খুব কাঁদছিল ! বারবার তোমার কথা জিঞ্জাস করছিল তুমি কেমন আছো ? "
" কিছু পাবার আগেই হারানোর বেদনা আমাকে স্থবির করে দিয়েছে, আজ সব কিছু হারিয়ে অন্য এক রমনীর সাথে বসেও নিজেকে বড়ো নিঃসঙ্গ মনে হছিল, দেবলীনার প্রত্যাখ্যান আর রিচার সাথে কয়েক মুহুর্তের কাটানো সময় যেন ঝড়ো হাওয়া,যেন সব কিছুই উলটপালট করে দিল ? "
" ও তোমাকে ভালোবাসে দাদা।কিন্তু ওর বাস্তবতা ওর পথের বাধা ।" 
" আমি ওর কথা গুলো শুনেই বুঝতে পেরেছি স্মিতা, কিন্তু দেবলীনা বুঝতে চাইছে না সময়ের স্রোত সব ছবিকে ম্লান করে দেয় ।"
" ওদের আদিবাসী সমজে অনেক নিয়ম দাদা ? গ্রামের মড়লের অনেক বিধান ,ওদের ধারনা শহরের মানুষজন খুব খারাপ ।"
"এই সব কথা ভাবছিনা স্মিতা,ভাবছি আমি কি খুব খারাপ ছোটে থেকে বাবা-মার সেই ভাবে স্নেহ পাইনি, স্কুলে বন্ধুদের সাথে মিশতাম না কড়া নিয়ম ছিল যার তার সাথে মেশা চালবে না , তাছাড়া আমাকে হষ্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, মেডিকেল কলেজে কেটে গেল এতদিন সেই ভয় আজ ও আমাকে তাড়া করে । "
"এই সব নিয়ে চিন্তা করো না দাদা ! আমিতো আছি ? কাল আমাদের কেচিং আছে ,দেখি কবে আবার তোমাদের মিট করাতে পারি ? "
" আমি আর বেশীদিন থাকবো স্মিতা আমার ক্লাস শুরু হবে আমার ফাইনাল ইয়ার,আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, আমার অনেক কাজ । "
"তুমি একদিন খুব বড়ো ডাক্তার হবে মিলিয়ে নিও । আমার এই প্রিয় দাদাকে সবাই খুব ভালোবাসবে "?
" তাদের ভালোবাসা যেন থাকে বোন ? করুনাময় ঈশ্বরের প্রাথর্না করি আমি যেন সারা জীবন মানুষের সেবা করতে পারি "।





রাত্রে আর ঘুম এলো না চোখের পাতায় । ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আলো-অন্ধকারে আচ্ছন্ন দূরের ওই শহরের দিকে চেয়ে রইল ।ভালো লাগছে না কিছুই ! কেমন সব গুলিয়ে যাছে এই দেবলীনা তো ট্রেনে দেখা সেই দেবলীনা নয় সে তো ছিল সহজ সরল এক গ্রামের মেয়ে আর আজকের দেবলীনা  অন্য যেন এক অচেনা অজানা দৃঢ়, কঠিন,অনমনীয়,মায়াহীন । রুমের মধ্যে এসে আলো জ্বেলে নিজের মুখটা আয়নায় দেখতে লাগলো সুবর্ণ।আমি কি দেখতে খারাপ খুবই খারাপ ?মানুষকে ভালোবাসার জন্য কি মুখটা সুন্দর হওয়া বড় জরুরি ? বিভিন্ন ভাবনা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। কালকে যদি মায়ের বান্ধবীর মেয়ে বিয়ে করতে সম্মতি জানায়। মাথাটা ভীষন ধরেছে ওষুধ খেলেও কমছে না । এই দিকে ঘড়ির কাঁটায় রাত দুটো । ঘুম আর ঘুমের মধ্যে ভেসে আসা অন্ধকার।অন্ধকার আর তার মাথার ভিতর আবর্তিত এই সব গ্রহ,গ্রহানু,নক্ষত্র আর উল্কাপিণ্ড।মানসিক ঝাপিয়ে পড়া ধূমকেতু।এই সব অনন্ত ঘুর্নন,বিস্ফরিত ডিম্ব নিহত, মন একাকী অন্ধকার তুমি কার ।কার বেদনায় তুমি নিজেকে নিমজ্জিত করেছ প্রেম ? নিজেকে প্রোথিত করেছ সমাজের বাধা নিমেষের উপর।কাদের জন্য বিচ্ছেদে নিয়ত ঝলসে যাবে সমাজের ঘুনধরা বানানো নিয়ম, কানুনের বিকিরণে।কাদের ভয়ে তুমি আমার এই করুন প্রার্থনা শুনতে পাচ্ছেনা।কাদের জন্য তুমি ভালোবাসা ছিন্ন করে প্রতিনিয়ত ভেসে যাও দুঃখের সাগরে।হে ঈশ্বর যন্ত্রনা কি তোমার ভিত্তি প্রস্তর? এই একাকী জীবনে তুমিও কি যুগ যুগ ধরে কঠিন পরীক্ষার মাঝে একটুকু আশার প্রদীপ? আমি ভালোবাসা চাই ভালোবাসতে চাই।বৈচিত্রপূর্ন আমাদের দেশে ভালোবাসার অগাধ বিচরন, তবু আমরা জাতি, ধর্ম,উচ্চ, নিম্ন, মাঝেই আটকে যাই এ আমাদের দূর্বলতা। মানুষের ভিতরের শক্তিকে জগ্রত করতে হবে।বুঝিয়ে দিতে হবে মানুষের আসল ধর্ম, মানবতা তার চারিত্রীক ব্যবহার, ন্যায়, নিতি আর্দশ।ভালোবাসার কোন ধর্ম নেই অর্থের লোভ নেই । ভালোবাসা হৃদয় থেকে হৃদয়ের উপলব্ধি মাত্র ।ভালোবাসা মানে বিশ্বাস  ।জীবনের ভালো,খারাপ বিভিন্ন সময় হাতে হাত রেখে বলা এগিয়ে যাও আমিতো আছি।ভালোবাসা প্রেমিক ও প্রেমিকার কাছে ঈশ্বর । তবুও কবি বলে গেছেন ভালো না বাসলেই ভালো! বড়ো কষ্ট গো ভালোবাসায় ।




আজও আকাশ টা পরিস্কার ,সিঁড়ি দিয়ে দুধাপ নামতেই  দেখে বাবা ডাইনিং টেবিলে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছেন।সুবর্ণ দেখা মাত্র নার্ভাস হয়ে গেল ।
" বসো এখানে ,মায়া তোমার ছেলে উঠেছে চা দিয়ে যাও ? "
দেখে মনে হচ্ছে মেজাজ ঠিক আছে আজ ,এই প্রথম ভালোভাবে বসতে বললো।
"তোমাকে দেখে ভালো লাগছে !আর যাই করনা কেন বাড়ির স্ট্যাটাস বজাই রেখেছো । মিসেস গাঙ্গুলী ফোন করেছিলেন ওদের তোমাকে পচ্ছন্দ হয়েছে।  ভেরি গুড আমি খুব খুশি হয়েছি। "
" আমি কিন্তু সেই ভাবে কিছু কথা বলিনি বাবা ? "
" হোয়াট ইজ দিস ? তুমি কী বাড়ির গারজেন ? যে তোমার সিন্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে চলতে হবে । "
" আমি সেই ভাবে কিছুই বলতে চাইনি বাবা "
" তোমার কি মনে হয় তুমি ডাক্তার হবে বলে মিসেস গাঙ্গুলী  তার মেয়ের জন্য তোমাকে সিলেক্ট করেছেন ? নে নেভার ? ওনলি তুমি আমাদের ছেলে তাই,  কারণ তোমার চেয়ে অনেক বড়ো বড়ো ডাক্তার তারা তাদের মেয়ের সিলেক্ট করতে পারেন ? আমাদের বাড়ির স্ট্যাটাস আভিজাত্য ,আর উনি তোমার মায়ের বান্ধবী,এর চেয়ে ভালো মেয়ে তুমি আশা করো ? "
" আমি এখুনি বিয়ের ব্যাপারে ভাবিনি ,এই সব কথ আসছে কি জন্য ? "
" আবার শুরু হয়ে গেল দু জনের বললো মা। "
" জামাই বাবু আপনি বড্ড বেশি শাষণ করেন সুবর্ণকে ? "
" এই ছেলেকে  বিশ্বাস নেই অনিমা ? পুরো তোমার দিদির মতো হয়েছে । "
" কী বলতে চাইছো তুমি ? আমি তোমার কথা মতো চলি না ? সারাদিন কলেজে বাড়ি ফিরে সারা বাড়ির কাজ করি ফিরেও শান্তি নেই লেগেই আছে বাবা ও ছেলের যুদ্ধ ।"
" ও দিদি তুই ও আবার শুরু করলি। "
" না রে অপু বাপ আর ছেলে মিলে সারাজীবন জ্বালিয়ে মারলো। আর আজ উনি আমার দোষ ধরছেন ? "
মাথা নিচু করে সব শুনছিল সুবর্ণ  এটা তার অভ্যাস
 বাড়িতে প্রায় শুনে ।
" তুই চুপ কর দিদি , জামাইবাবু আপনি কি যাবেন ওর সাথে ,"
" গেলে ভালো হয় মা আর ছেলে মিলে আমাকে পাগল করে দিবে। "
এমন সময় বাড়ির বাইরে গাড়ির আওয়াজের শব্দ ভেসে এল , গেটের দিয়ে বাড়ির ভিতরে এলো রিচা ।
" গুড মর্নিং আঙ্কেল ,গুড মর্নিং এভরিবডি। হ্যালো সুবর্ণ । "
" হ্যালো "
" সুবর্ণ তুমি রেডি হয়ে নাও। "
" কোথাও যাবে নাকি তোমরা ? "
" হে আঙ্কেল একটু মার্কেটিং এ যাবো।  "
" আচ্ছা যাও ঘুরে এসো। " 
" থ্যাঙ্কস আঙ্কেল , ও আন্টি কালকে মম আপনাকে ফোনে অনেকবার ট্রাই করেছে ? "
" হ্যাঁ এইখানে ঠিকঠাক নের্টওয়াক পাওয়া যাই না। "
" বাই দে বাই আমি কি সুবর্ণকে নিয়ে যেতে পারি ? "
" আরে এটা বলার কি আছে আজ বা কাল তুমি আমার বাড়ির মেম্বার " 
" থ্যাক্স আঙ্কেল এণ্ড  আন্টি ! সুবর্ণ তুমি রেডি হয়ে এসো প্লিজ " 
" দাঁড়ান আমি আসছি। "
" রিচা আমাদের ছেলেটাকে মানুষ করে দিও , আমাদের কথা একদম শুনে না। "
" আঙ্কেল  আপনি আমার উপর ছেড়ে দিন। "
"হ্যাঁ মা সে আমি তোমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি "
" মাসিমনি এখানে স্মিতাকে দেখছি না " 
" না ও নেই কোচিং এ গেছে " 
" কিসের কোচিং ? "
" স্মিতার খুব ইচ্ছে ডাব্লু, বি সি এস.সি দিয়ে প্রশাসনিক কাজ করবো " 
" ভেরি গুড ডিসিশন , একজন মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে নাইস এর চেয়ে ভালো কিছুই হয় না। "
" চলুন আমি রেডি, বললো সুবর্ণ "




একাই গাড়ি নিয়ে এসেছে রিচা আর গাড়ি ও ভালো ড্রাইভ করছে । কালকের সিরিয়াস মেয়ে এক নিমেষেই অন্য রকমের আজ আবার তার অন্য রূপ ,এখন আবার সে অন্য নিজের মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠছে সুবর্ণের  ! 
" কী ভাবছো সুবর্ণ ? "
" তেমন কিছুই না "
" বুঝতে পারছি আর একটু অপেক্ষা করো সেই জঠ টা কিছুতা ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো ? "
" আজকাল অনেক প্রশ্নের উত্তর পাই না । তাই কোন কিছু ভাবার অবকাশ আমার নেই । তবুও বলতে পারেন আপনার ব্যাপারে আগ্রহ আছে । "
" অনেকদিন মনের দ্রহনের কথা কাউকে জানাতে পারিনি একজন বন্ধু হিসাবে কেন জানিনা তোমাকে  জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে, যদি কমে নিজের জমানো দুঃখ, তুমি শুনবে সুবর্ণ আমার কথাগুলো কালকে তোমার সাথে কথা বলার পর খুব বিশ্বাস হচ্ছে তোমাকে ? "
"দেখুন যদি বিশ্বাস হয় বলতে পারেন, অন্য কিছুর আশা করবেন না ? "
" কারো দয়া চাই না সুবর্ণ ! শুধু কথা গুলো বলে একটু মনটা হালকা হতে চাই। "
এভাবে বিশ্বভারতী সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো , গাড়িটা পাকিং করে ভিতরে গেল দুজন 
" চলুন রিচাদেবী ওই ছাতিম তলায় গিয়ে বসি ওই দিকে তেমন একটা ভিড় নেই। "
" সুবর্ণ প্লিজ আমি মহান নই আমাকে দেবী বলে অপমান করো না।"
" আচ্ছা বলুন এবার আপনার কথা ? "
" আমার বাবা-মা বিয়ের পর নিউইয়র্ক চলে আসে বাবা আগেই থেকেই এখানে রির্সার্চ করতেন, নিউইয়র্কে আমার জন্ম , স্কুল, কলেজ বন্ধু-বান্ধব সব কিছুই ওখানে, খুব বাউন্ডুলে জীবন আমার, প্রতিদিন পার্টি,ডিক্স, স্মোক ছিল নিত্য প্রয়োজনীয়, বাড়িতে ছিল সিমিত সময় ,আমার জন্যও  বাবা- মার ও টাইম ছিল না তারা নিজের নিয়ে ব্যস্ত,ছোটে থেকে বাবা-মার স্নেহ পাইনি বাড়িতে আয়ার কাছে বড়ো হয়েছি, বড় হতে হতে তাদের প্রতি রাগ হতো,রাত্রে পার্টি করে বাড়ি ফিরতাম দেখতাম বাবা- মা ডিক্স করে মাতাল হয়ে পড়ে আছে,  আমি খেয়েছি কি খাইনি কেউ খবর নেয়নি কোনদিন,  একদিন কলেজে ইন্ডিয়ার অর্নিবানের সাথে পরিচয় হয়, ওকে বিদেশি দেখে  প্রথমদিন রেগেং করেছিলাম, এবং অনেক আজেবাজে ব্যবহার করেছিলাম  পরে ওই ঘটনার জন্য খুব বোকাবুকি করেছিল অর্নিবান, এমন কিছু কথা বলেছিল যে আমাকে সারারাত ঘুমোতে দেয়নি , আসতে আসতে ওর সাথে বন্ধুত্ব করলাম বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে পরলাম ওর, একদিন জানতে পারলাম ইন্ডিয়ায় ওর অনাথ ছেলে মেয়েদের একটা এনজিও আছে,কিছুদিন পরে পড়াশুনা শেষ করে অর্নিবান দেশে ফিরে এলো,আমিও খুব একা হয়ে গেলাম,পড়াশুনা শেষ করে আমিও  ইন্ডিয়ায় এলাম, আমিও আজ তিনবছর কলকাতায় আছি,ওকে সাহায্য করছি, বাবা- মা জানে আমি মুম্বাইয়ে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করছি,  আমার বিয়ের জন্য মা দেশে ফিরেছে, প্লিজ তুমি এই বিয়েতে রাজি হও না প্লিজ ? "
"আপনি  আমাকে বাঁচালে রিচা। "
"আমি অর্নিবানকে খুব ভালোবাসি সুবর্ণ,  আমি ছাড়া আজকে ওর কেউ নেই, তাই কালকে তোমার সাথে কথা বলার সময় তোমার চোখে চোখ রেখে বুঝতে পেরেছি ,তোমার চোখ অন্য কাউকে খুঁজছে ? "
" ভালোবাসি একজনকে । কিন্তু সে আমার ভালোবাসাকে রিফিউজ করেছে। "
" আমাকে বলতে পারো সুবর্ণ ,যদি বন্ধু ভাবো ? "
" আমি এখানে এসে একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি, এখন সে আমাকে ভালোবাসেনা বলছে কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি তার চোখে ভালোবাসা দেখেছি। "
" তবে আপত্তি কোথায় ? "
" সেটার উত্তর খুঁজছি  "
"তাকে একটু ভাবার সময় দিও , তোমার মত ছেলেকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা করো নেই। "
"জানিনা নিয়তি আমার কি পরীক্ষা নিচ্ছেন "
" তুমি জয়ী হবে,, এটা আমার বিশ্বাস কিন্তু ? "
" কিন্তু কি ? "
"তোমার বাবা-মা এই মেয়েকে মেনে নেবেন তো ? "
"না ! এমিনিতেই বাবা আমার বেশীর ভাগ কাজ পচ্ছন্দ করেন না,তারপর যদি শুনেন একটা অনাথ আদিবাসী মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই তাহলে হয়তে আমাকে বাড়ি থেকে এই বার করে দেবেন ।"
" তাহলে এমনি সিন্ধান্ত নেওয়ার কারণ ? "
" যদি বলি আপনার জীবনের সাথে আমার ও কিছুটা মিল আছে ? আমি ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত । "
"তবুও একবার ভেবে দেখবে ? বন্ধু হিসাবে আমি চাইবো না আমার জীবনের মতো তোমার জীবন হোক ? "
" আমি কিভাবে এই অসহায় মেয়েটিকে ছেড়ে দেব বলতে পারেন ? যাকে এই কিছু দিনে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছি। " 
" তবু কিছু টাকা দিয়ে যদি ওকে সাহায্য করে বুঝিয়ে বলো ? "
" টাকা ! টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনার ক্ষমতা নেই রিচা , আমার কাছে ভালোবাসা মানে ঈশ্বর আর ভালোবাসা কি বলে হয় , ভালোবাসা হয়ে যায় , আমাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের ভালোবাসার অপূর্ণতায়।  "
" তোমাকে সান্তনা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই আমি চাইবো তুমি সুখী হও । "
" অশেষ ধন্যবাদ রিচা ।"
" আমি কাল কলকাতা চলে যাবো,সবাই জানবে মুম্বাই তোমার মোবাইল নাম্বার দাও পরে যোগাযোগ করবো ।"
"আর আমাদের দেখা হবে না রিচা "
" হতে পারে পৃথিবীটা তো গোল ঘুরতে ঘুরতে ঠিক দেখা হবে, মা বিদেশে ফিরে গেলেই আমরা বিয়ে করবো, তারপর আমরা আর কলকাতায় থাকবো না,অর্নিবান মেদনীপুরে একটা নতূনভাবে এনজিও ওপেনিং করছে এবার থেকে আমরা ওখানেই থাকবো। "
" আপনার মা-বাবাকে জানাবেন না বিয়ের খবর ? "
" বিয়ের দিন ফোন করবো জানি অর্নিবান কে জামাই হিসাবে বাবা-মা দুজনেই মেনে নেবে না তাও সন্তান হিসাবে নিজের কর্তব্য পালন করবো ।"
" তবুও আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাবেন ? "
"তাও শৈশবের বাবা-মার স্নেহ না পাবার যন্ত্রনা কি ভুলা যাই ? "
" ঠিক বলেছেন। "
"হে সুবর্ণ  ।"
" চলুন অনেকটা সময় হয়ে গেল ,এবার ফিরতে হবে । "
" আর একটু বসা যায় না সুবর্ণ ? "
" না মনটা ঠিক নেই স্মিতা হয়তো ফিরে গেছে বাড়ি "
" না তবে আর বসবো না তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি চলুন। "
আসতে আসতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল দুজন ।


 আজকের রিচার সাথে কাটানো সময় গুলো স্বযন্তে স্মৃতির পাতায় আবদ্ধ করলো সুবর্ণ ।বাড়িতে ফিরেই স্মিতার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো । মা এসে একবার জানতে চেয়েছিল ডিনার হয়েছে কিনা।
শুয়ে শুয়ে সুবর্ণ দেবলীনার কথা ভাবতে লাগলো ।স্মিতা ও আসেনি! শরীর টাও ভালো লাগছে । বুকের জ্বালা নিজেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কেউ জানে না । এই তিনদিনের মধ্যে একটা সিন্ধান্ত নিতে হবে । সামনে আর বেশীদিন নেই বোলপুরের থাকার জন্য ।আবার যদি বাবা-মা রিচার ব্যাপারে জানতে চায় কি উত্তর দিবে ? এমনিতেই রিচা অনুরোধ করেছে এই রিলেশন টা ভাঙ্গার জন্য । তাই সব দোষ নিজেকে নিতে হবে ?
আবার দূরত্ব তৈরী হবে বাবা- মার সাথে ।
এমন সময় স্মিতা এসে সামনে দাঁড়ায় মনটা খুশিতে ভরে উঠল সুবর্ণের
" কি খবর স্মিতা?  "
"দেবলীনা কালকে একবার তোমার সাথে দেখা করতে চায় দাদা, খুব আরজেন্ট! "
" কখন-কোথায় ? "
"কালকে কেপাই নদীর ঘাটে। ওই দিকের খবর কি দাদা?নিচে শুনলাম ,তোমার বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে ? "
" মিস রিচা এনগেজ, ও আজ সব কথা বলেছে ওর নিয়ে। "
" কিছুই বুঝলাম না দাদা! "
" ওর বাইরের টা লোক দেখানো ভিতরে ভিতরে ও অন্য কিছু! ও একজনকে ভালোবাসে,শুধু মাত্র ওর বাবা-মার জন্য আমাদের সাথে অভিনয় করছিল। "
" যাক বাঁচা গেল ,আমার যেন কেমন সন্দেহ হয়েছিল। "
" একটা অনুরোধ করেছেন রিচা ? "
" কি  ! "
" এই কথাটা আমাকে জানাতে হবে বাড়িতে যে রিচাকে আমার পছন্দ নয় "
"এমনিতেই মেশেমশাই তোমাকে পছন্দ করেন না দাদা এরপর যদি শুনে তুমি রিচাদি কে বিয়ে করতে চাও না ? এইভাবেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে "
"আমি সব জেনে শুনে আগুনে হাত দিয়েছি বোন ,জানি সব কিছুই পুড়ে যাবে আমার, তাও একটা অসহায় মেয়ের ভালোবাসাকে বাঁচাতে পুড়ে ও শান্তি পাবো ,জানি আমার সব কিছু ধংস হয়ে যাবে ,অথবা হয়তো সব কিছু হারিয়ে নতূন ভাবে শুরু করবো ।"
" যদি তোমার এই কূল ও কূল সব যায় ? "
" সব হারানোর যন্ত্রনায় বাঁচবো জীবনের শেষদিন পর্যন্ত । "
" আমার নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে দাদা,কেন যে পরিচয় করালাম দেবলীনার সাথে তোমার ? "
"এটা আমার ভবিতব্য বোন ,তাছাড়া কেন আসবো ছুটিতে শান্তিনিকেতন, এই সব ভেবে তুই মন খারাপ করিস না পাগলী বোন আমার , দেখবি পৃথিবী আবার শান্ত হবে, সামনে আমার পরীক্ষা তারপর ভালো একটা রেজাল্ট করবো , তখন সবার এই অভিযোগ থাকবে না দেখিস "
" আমি সারাজীবন ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করবো দাদা।"
"কালকে তুই কি যাবি বোন ? "
" যাবো দাদা দেবলীনা বারবার আমাকে যেতে বলেছে ।"
" যাক বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল !"
"ও তোমাকে খুব ভালোবাসে দাদা, সেইদিন ওর বাড়িতে যাওয়া, ওর খুব খারাপ লেগেছে, ওর খুব আত্মসম্মান ।"
"সেটা আমি বুঝতে পেরেছি বোন , যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে "
" আজ কোথাও যাবে কি দাদা ? "
"না রে সৌরভ কিছু মেল পাঠিয়েছে চেক করবো একটু আর এই কিছুদিন একটু ও পড়তে পারিনি তাই একটু 
পড়বো "
" আসছি দাদা তুমি তোমার কাজ করো রাত্রে কথা হবে। "










*চলবে...

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সংখ্যা ১৮ || বর্ষ ৫

ফেরার অধ্যায়: -২য় বর্ষ সংখ্যা ১৫

বিষয় - বই আলোচনা-সংখ্যা ১৬ বর্ষ ২