পঞ্চম পর্ব ,ধারাবাহিক উপন্যাস
শুভ জন্মদিন নিরুপা বোস পাত্র |
"আমার এই উপন্যাস উৎসর্গ করলাম আমার সবচেয়ে প্রিয়জন আমার লেখার শক্তি আমার অনুপ্রেরণা আজ তার জন্মদিন আমার জন্মজন্মান্তরের সাথী আমার স্ত্রী নিরুপা বোস পাত্র কে❤"
- জিৎ পাত্র (ঔপন্যাসিক)
পঞ্চম এবং অন্তিম পর্ব
বেলাভূমি
জি ৎ পা ত্র
হালকা ঠান্ডা সকালে বৃষ্টি হয়েছে,গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল সুবর্ণ ,স্মিতা সাথে ড্রাইভার রতন।জানালায় মুখ বাড়িয়ে ঠান্ডা বাতাসে এক ঝলক ছুঁয়ে যায় টেনশনে ক্লান্ত রাতজাগা সুবর্ণ রায়কে ।
আজ দেবলীনা রিসিভ করতে বারন করেছে কারণ এর আগে স্মিতা ও তার দাদার সাথে গাড়িতে বসা নিয়ে পাড়াতে কথা উঠেছে । এমনিতেই দেবলীনাকে সবাই খুব সম্মান করে । বিনাপয়সায় পাড়ার সব আদিবাসী ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা, ভালো মন্দ সব কিছুই দেখে দেবলীনা।
কোপাই নদীর ঘটে সামনে গাড়ি এসে থামলো , নির্জন জায়গা কেউ কোথাও নেই ,চারপাশে নদীর ছোট ছোট ঢেউ ,সামনের ঘাটে একটা নৌকা বাঁধা আছে।
শান্তিনিকেতন মানে রবীঠাকুর , সোনাঝুরি থেকে ছাতিম তলা প্রতিটি স্থানে সবাই মুখরিত কবিতা থেকে গানে।
নদীর ঘাটে বসে কি যেন ভাবছে সুবর্ণ , স্মিতা সামনে যেতেই..
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো,
মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।
"খুব কাছে এসে দেবলীনা ,...........
যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়,
আহা ফুলের বাগান ঘন ঘাসের
পরবে সজ্জা বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।
"অপূর্ব তোমাদের একত্রে গাওয়া গান যেন যুগ যুগ ধরে শুনতে পাই বললো স্মিতা "
মাথা নিচু করে রইল দেবলীনা দেখে মনে হলো রাত্রে ঘুমাই নি ।
আসতে আসতে সামনে এগিয়ে এল সুবর্ণ দেবলীনার মুখে হাত দিয়ে
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেঘের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের 'পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কি না চেয়ে
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
এমনি করে কালো কাজল মেঘ
জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার 'পরে দেয় নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ॥
" আপনার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই সুবর্ণ !"
এই বলে সুবর্ণকে জরিয়ে ধরল দেবলীনা।
"বিশ্বাস করুন আমি অনেক চেষ্টা করেছি আপনাকে ভুলে যেতে পারিনি,যত বার ভুলতে চেয়েছি ততবার ভেসে উঠেছে আপনার ছবি ,প্লিজ তুমি চলে যাও সুবর্ণ ? আমার ভালোবাসা তোমার জীবন কাল হয়ে দাঁড়াবে সব কিছুই তোমার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে ।"
"এটা তুমি বলতে পারলে দেবলীনা ? "
" আপনি বড়লোকের ছেলে কাল দিন খুব বড়ো ডাক্তার হবেন শতশত দেবলীনা থাকবে আপনার পায়ের নিচে, প্লিজ এই আদিবাসী অনাথ দেবলীনাকে পাপের ভাগি করবেন না ? "
"এই সব বলে আমার ভালোবাসাকে অপমান করো না দেবলীনা , ট্রেনে তোমাকে দেখার পর বুকের মধ্যে উত্তাল সমুদ্র ধাক্কা দিয়েছিল , তোমার টানে রয়ে গেলাম জানতাম তোমার ভালোবাসা পাবো। "
" সেই ভালোবাসার কি মূল্য সুবর্ণ যে খানে আমি আর তুমি মাথার উপর কোন ছায়া থাকবে না? "
" আমি যদি বলি সবাইকে রাজী করবো! "
" সেই বিশ্বাসে তোমার ভালোবাসায় ধরা দিলাম সুবর্ণ। "
" আমি জানতাম ,যে বর্ষা আমাদের প্রকৃতিতে, সে বর্ষা আমাদের মনে, পাওয়া- না পাওয়া অনুযোগ-অভিযোগো আন্তরিকতার এক সাক্ষ্য এই কোপাই নদী আমাদের চলার পথ আরো দৃঢ় হবে । "
" তোমার পাশে সব সময় পাবে সুবর্ণ "
"পাশে নয় দেবলীনা সাথে চাই ,আমি চাই জীবনে চলার পথে তুমি আমার শক্তি হও, যেখানে থেমে যাবো আমি তুমি হও সাহস ।"
" থাকবো সুবর্ণ থাকবো সারাজীবন তোমার পায়ের নিচে ফুল হয়ে "
" পায়ের নিচে নয় তুমি আমার হৃদয়ে থাকবে। "
" তোমাদের সব মিটলো ? আমি আর একা দাঁড়িয়ে থাকতে পাছিনা !আমাকে এবার সাথে নাও ?"
" আয় আয় বোন। "
" কি রাগ ভাই তোর দাদাটাকে এত কষ্ট দিতে পারলি ? "
" না রে জানিনা কেন এমন করলাম খুব ভয় আমার বলতে পারিস ? "
" আমার দাদাকে কেমন বুঝছিস ? "
"জানি না যা !"
" চল এবার যেতে হবে ? "
" এত তাড়াতাড়ি যাবি বোন ? "
" হ্যাঁ দাদা মা অনেকবার ফোন করেছে ,তোমার মোবাইল কোথায় মাসিমনি ফোনে পায়নি ওপ আছে বুঝি ? "
" না রে আসার সময় ভুলে গেছি রুমে "
"মা বলছিল মেশোমশাই তোমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছেন কেন জানিনা ? "
" চলো দেবলীনা এবার ফিরা যাক ,কালকে সকালে এসো "
" কালকে কোথায় দেখা হবে আমাদের ? "
" এই কোপাই নদীর ঘাটে , তুমি আর আমি সাথে নদী "
" এই নদী আমাদের ভালোবাসা সাক্ষী "
"কালকে তুমি দাঁড়িয়ে থেকেও দেবলীনা ,একসাথে আসবো "
" সবাই যদি দেখে ফেলে "
" তোমার কি বিপদ হবে দেবলীনা ? "
" না না আর আমার ভয় নেই,আমি তোমার কথা ভাবছিলাম ? "
" আমায় নিয়ে ভেব না দেবলীনা আমি চিরদিনেই বাবা-মার অবাধ্য ছেলে ভয় বলতে নিজেকেই , তুমি এই পারো আমার এই চলমান জীবনকে বেঁধে রাখতে। "
" পারবো আমি পারতেই হবে আমাকে , ভালোবাসা দিয়ে তোমার জীবনের পথ মসৃন করবো "
" চলো এবার ফিরা যাক ,স্মিতা এগিয়ে গেছে "
" চলো "
" চলো কালকে তাড়াতাড়ি এসো , পারলে রাত্রে ফোন করো একবার "
" আমার নিজের মোবাইল নেই সবুর্ণ , তোমাকে চিন্তা করতে হবে না সকাল নয় টায় আমি দাঁড়িয়ে থাকবো "
এই বলে বেরিয়ে গেল সবাই ...
মনটা ভালো আছে সুবর্ণের, বাড়িতে ঢুকতেই গা টা ছমছম করে উঠল! নিচে ডাইনিং রুমে সবাই বসে আছে ৷ সুবর্ণ ধীরে ধীরে সামনের দরজা দিয়ে যেই সিঁড়িতে পা দিয়েছে ৷
" এইদিকে এসো "
" বলুন "
" আমি তোমাকে বসতে বলেছি ইচ্ছে হলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো , তুমি রিচাকে রিফিজ করেছ ? কারণ টা জানতে পারি ? "
" উনার চাল চলন আমার ভালো লাগেনি। "
" হোয়াট ইজ দিস? "
" আপনি জানেন এত হাই প্রোফাইল আলট্রা মর্ডান মেয়েদের সাথে আমি মিশতে ভালো বাসি না। "
" তাই বলে তুমি একটি সাধারণ মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়াবে। "
" মেয়েটি আমার বিশেষ পরিচিত এবং শিক্ষিত। "
"সবাই শিক্ষিত হলে ভদ্র হয় না।"
" এটা আপনার ধারণা "
" তুমি কি মনে করো তোমার আমরা খারাপ চাই ? এত সুন্দরী , ভদ্র, শিক্ষিতা, আমাদের ট্যার্টাস সাথে মিশবে , আর তুমি ? "
" আমি সাধারণ তাই সাধারন ভাবে বাঁচতে চাই "
" তুমি অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা রায়ের ছেলে কথাটা মনে রেখো। "
" আমি ছোট থেকে আপনাদের নামের অপব্যবহার করিনি। "
" যত সব ছোট লোকের সাথে মেলামিশা করে তোমার সভাব টা নিচু হয়ে গেছে দেখছি , তুমি ভুলে গেছ তুমি কে, কাদের ছেলে তুমি ,আমাদের মান সম্মান সব তো আগেই বিসর্জন দিয়েছ ? "
" তার জন্য দায়ী আপনারা ? আপনারা সন্তানের প্রতি কি দায়িত্ব পালন করেছেন জানতে পারি , শুধুমাত্র কম্পিটিশন লাইনে দাঁড় করিয়ে আমাকে নিয়ে জুয়া করেছেন হাই ট্যার্টাস ফেমেলিতে। "
" কি বলতে চাও তুমি ? তোমার প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করিনি আমরা , যা চেয়েছো সাথে সাথে পেয়েছ , তুমি মনে করে তোমার জন্য আমরা অধ্যাপনা ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় তোমাকে নিয়ে ভিক্ষা করলে ভালো হোত ? "
" চুপ সুবু চুপ আমি মা হয়ে কি করিনি তোর জন্য, কলেজে যেতাম বাড়িতে মন পড়ে রইত ,তোর জন্য স্পোশ্যাল আয়া রেখেছি। "
" একজন আয়া মায়ের অভাব পূর্ণ করতে পারে না মা ? "
" তাই বলে আজ তুই তার প্রতিশোধ নিচ্ছিস ? অপরূপার কাছে আজ আমাকে কথা শুনতে হলো "
" কি বলেছেন উনি ? "
"এ ও শুনতে হলো একটা আদিবাসী মেয়েকে নিয়ে তুই দিন রাত ঘুরছিস , অপরুপা নিজের দেখেছে ওই মেয়েটির সাথে তোকে ?আর তুই রিচাকে অপমান করেছিস ,ডাইরেক্ট বলেছিস বিয়ে করবি না ওকে "
" এটা মিথ্যে কথা। "
" চুপ করো ইডিয়েট ,কে মিথ্যেবাদী বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না আমার ,তোমার জন্য আজকে আবার আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। "
"আপনি সত্য জানেন না বাবা ? "
" তোমার সাথে কথা বলতে আমার ঘৃনা লাগছে "
" সেটা আপনার ব্যাপার। "
" দেখ সুবু আমি অপরূপাকে কথা দিয়েছিলাম , আজ মেয়েটা মনের দুঃখে মুম্বাই চলে গেল , অপরুপার মনের অবস্থা শুনে আমার খারাপ লাগছে , বড়মুখ করে বলেছিল তোকে ও মেয়ের জন্য জামাই করবে ,তোকে বিদেশে পাঠাবে। "
" আমি অপারগ মা, তোমার বাধ্য ছেলে হতে পারলাম না। "
" তুই ভেবে দেখ সোনা আমার , রাজি থাকলে আমি আবার অপরুপার সাথে কথা বলবো। "
" আমি উনাকে বিয়ে করতে পারবো না "
" তবে তুমি সেই ছোটলোক আদিবাসী মেয়েটি কে বিয়ে করবে ?"
" আমি নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে কাউকে বিয়ে করবো না , আর যদি তাই ভাবেন তবে বলতে পারি ভবিষ্য়ংতে আমাকে তাকে বিয়ে করবো। "
" সুবর্ণ তুমি একজন ডাক্তার , তোমার বাবার প্রেসার হাই, তুমি চুপ করো, বললো মেশেমশাই "
" আমাকে ক্ষমা করবেন মেশেমশাই আপনাদের বাড়িতে এসে আপনাদের আপমানিত হতে হলো।"
" তবু ও তুমি একবার ভেবে দেখ বাবা। "
" মেশেমশাই আমি আমার সিন্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি ? মনে হয় বাবা- মা এতদিন ধরে আমাকে দেখছেন , তাই এই ব্যাপারে উনারা ভালো বুঝবেন "
" তুই এটা ভালো করলি না সুবু ,তোর প্রতি বিশ্বাস ছিল একটা আদিবাসী মেয়ের জন্য এই তুই প্রতিদান দিলি ? "
" তুমি আর এই ব্যাপারে কথা বলোনা মায়া , এই ছেলের আমি মুখ দেখতে চাই না , এর উপর আমার কোনদিন বিশ্বাস ছিল তা আজ প্রমানিত হলো। "
" আপনি উত্তেজিত হবেন না জামাইবাবু , যা সুবু তুই রুমে চলে যা "
মাথা নিচু সুবর্ণরুমে চলে এল ..
দুপুরের আকাশ মেঘলা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হৃদয়ের এক দিকে বিষাদ অন্য দিকে আনন্দের সুর. দিনের সুচনাপর্বে এমন হলো দিনান্তে বদলে গেল সব কিছুই .আজকে অনিকেতের ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের প্রার্থনা কবিগুরুর কবিতা খুব মনে পড়ছে ।
"বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর পার্থনা
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে- ব্যাথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।"...
জীবনে না পাওয়ার দুঃখ কম, আর পেয়ে পরে হারিয়ে ফেলার দুঃখ অনেক,
জানিনা বেঁচে থেকেও মৃত্যুর যন্ত্রনা অপেক্ষায় আছে কি না।
" তুমি কি আজকেই চলে যাবে দাদা ? "
" হে রে স্মিতা, আজকেই যেতে হবে উপায় নেই বোন "
" দেবলীনার কি হবে দাদা কালকে যে ও তোমার অপেক্ষায় থাকবে ? "
" আমার হয়ে তুই ওকে বুঝাবি বোন এই অবস্থায় এখানে আমি থাকতে পারবো না , বাবা আমার মুখ দেখবে না ? "
" তুমি বুঝ দাদা মেশেমশাই রাগের মাথায় বলেছেন। "
" না রে বোন আমার বাবাকে আমি চিনি ? "
" এমনি করো দাদা প্লিজ"
" আমাকে তুই ক্ষমা করবি বোন প্লিজ রেকুয়েস্ট আর করবি না "
"আমার জন্য তোমার জীবন টা নষ্ট হয়ে গেল দাদা ? "
" দুর পাগল তোর জন্য নিজেকে চিনলাম ,আবার নতূন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবো, দেখবি তোর এই দাদা খুব বড়ো ডাক্তার হবে ,হাজার হাজার মানুষ তোর এই দাদাকে আর্শিবাদ করবে।"
" তাই যেন হয় দাদা।"
" তোর কাছেই একটাই অনুরোধ দেবলীনাকে বুঝিয়ে বলবি আজকের সব ঘটনা। "
" ও যদি তোমাকে ভুল বুঝে। "
" ও আমাকে ভালোবাসে বোন আর ভালোবাসার মানুষের ভুল একদিন ভাঙ্গবে আমি না হয় সেই দিনের জন্যই অপেক্ষায় থাকবো ? "
" দাদা "
" কাঁদবি না রে বোন দেবলীনাকে বলবি শুধুমাত্র একবছর যেন আমার জন্য অপেক্ষা করে আমি ফিরে আসবো ওর জন্য ভালোবাসার জন্য। "
" তবুও তুমি ভালোভাবে থাকবে দাদা, মাঝে মাঝে ফোন করো। "
" আমি ফোন করবো বোন , তুই দেবলীনার খবর নিবি আমাকে মাঝে মাঝে জানাবি বোন। "
" জানাবো দাদা তোমাকে দেবলীনার খবর সব জানাবো। "
" আমার ট্রেনের টাইম হয়ে গেল বোন। "
" তুমি কি বাড়িতে যাবে দাদা। "
" না রে আর ওই বাড়িতে আমি কোনদিন ঢুকবো না , আমি সৌরভের মেসে থাকবো, কিছুদিন টিউশুনি পড়াবো পড়ার জন্য তাও বাবা কাছে হাত পেতে টাকা চাইবো না। "
" দাদা এমনি ভাবে রাগ করো না মাসিমনি কি হবে ভেবে দেখো। "
" অনেক ভেবেছি বোন ,এই সংগ্রাম আমার আর একা আমাকে জিততেই হবে। "
"তুমি জিতবেই দাদা এটা আমার বিশ্বাস "
" তোদের ভালোবাসার হাত যেন আমার উপর থাকে বোন খুব একা হয়ে যাবো আমার পাশে থাকিস যেন শক্তি পাই। "
" আজকে আমি ও বকাবকি খেলাম দাদা মায়ের কাছে
জানিনা কালকে দেখা করতে যেতে পারবো কিনা তবু তোমার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো "
" তোর বিশ্বাসে ছেড়ে যাচ্ছি বোন দেবলীনাকে , কিছু খারাপ ঘটলে সাথে সাথে জানাবি প্লিজ। "
" জানাবো দাদা তুমি ভালোভাবে পরীক্ষা দাও আগে, মনে একদম চিন্তা রাখবে না মনে রাখবে তোমার বোন আছে দেবলীনা আছে তোমার পাশে আর দেবলীনার খবর আমি তোমাকে পরীক্ষার পর দেব আগে তোমার পরীক্ষা হোক ,"
" যদি বিপদ হয় দেবলীনার আমার জন্য ? "
" আমি নিজের প্রাণ দিয়ে রক্ষা করবো দেবলীনাকে , তোমাকে ফোনে জানাবো দাদা এমন যদি হয়। "
" আমি জানি বোন তুই আছিস আমাদের পাশে। "
" দেবলীনার কোন ছবি নেই আমার কাছে যে তোমাকে দেব আর ও ছবি তুলতে ভালোবাসে না। "
" ওর ছবি আমার হৃদয়ে আছে বোন. আমার প্রতি নিঃশ্বাসে থাকবে ওর নাম ,শুধু বলবি আমার দাদা টা খারাপ নয় তোকে খুব ভালোবাসে "
" বলবো দাদা সব বলবো "
" আসছি বোন ভালো থাকবি "
" আমি যাবো দাদা স্টেশন ? "
" না বোন তুই গেলে ওরা আবার খারাপ ভাববে তোকে, এতে বিপদ বাঁড়বে। "
" বাঁড়ুক আমি তাও যাবো একা তোমাকে ছাড়তে পারবো না। "
" একা নয় বোন সাথে রতনদা থাকবেন মেশোমশাইয়ের সাথে কথা হয়েছে আমার, উনি এসেছিলেন রুমে। "
" ভালোভাবে যাবে দাদা , ভালোভাবে থাকবে চিন্তা করো না প্লিজ আমি আছি সারাজীবন তোমার পাশে। "
" এইভাবে কাঁদবি না বোন যাবার সময় তোর কান্না দেখতে পারবো না। "
" আমি আর কাঁদবো না দাদা ভালোভাবে যাবে ? "
" আসছি বোন ভালো থাকবি ভালো রাখবি ! "
" কী ভাবছো সুবর্ণ ? "
" " পুরানো স্মৃতি ভেসে উঠল চোখের পাতায় ! "
" তুমি আবার কাঁদছো সুবর্ণ ? "
" আজ আমার চোখে আনন্দের অশ্রু দেবলীনা । ডাক্তার সুবর্ণ রায় কাঁদতে ভুলে গেছে, বলো তোমার কথা "
" আমার স্বামী মেদিনীপুর একটি হাইস্কুলে শিক্ষক ছিলেন ,আজ কয়েক বছর হলো উনি মারা গেছেন । আমাদের একটি মেয়ে আছে ।"
" কি নাম তোমার মেয়ের ?"
""উড়মি"
"উড়মি"আমার স্বপ্নের নাম ! "
"এবার আমি উঠবো সুবর্ণ ।"
"আজ ও আমাকে একা ফেলে চলে যাবে দেবলীনা ?"
"হ্যাঁ সুবর্ণ আজ আমার আধিকারিক জীবনের শেষদিন , তাই তোমার কাছে শেষ বিদায় নিতে এলাম ,আর আমাদের কোনদিন দেখা হবে না সুবর্ণ,এই পথ দিয়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছি ,প্রতিদিন দেখেছি তোমার দোয়ালে ঝুলানো সাইনবোড"ডাক্তার সুবর্ণ রায়,ভয়ে ঢুকতে পারিনি তোমার বাড়িতে , এই ভেবে তুমি যদি আমাকে দেখে একা থাকার অভ্যাস ত্যাগ করো ,ভুলে যাও নিঃসঙ্গ জীবনে সংগ্রাম ,আমাকে পেয়ে ও যদি আবার হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পারো ।"
"ওগো নারী তোমার প্রতি অধিকার সেদিন ও ছিল না, আজ ও নেই .শুধু ভালোবাসার প্রতিদানে অপেক্ষা নামক শব্দটি ছিল ।"
"এবার আমি আসছি সুবর্ণ । "
"কোথায় যাবে তুমি ? "
"মেয়ের কাছে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে! মুম্বাই ক্যান্সার হসপিটাল ,আমার মেয়ে একজন ডাক্তার অনকোলজি স্পেশালিস্ট ।"
"তোমার ক্যান্সার ?"
"হ্যাঁ সুবর্ণ অপরাধী আমি তাই ভগবান সাজা ঘোষনা করেছেন লাষ্ট স্টেজ ।"
"আজ ও অপেক্ষাকে হারিয়ে ভালবাসা জিতে গেল। "
"আজ আমি চোরের মতো পালিয়ে যাইনি সুবর্ণ, আসছি ভালো থেকো ,আর আমাকে ক্ষমা করো ,আর্শিবাদ করো যেন এই অভাগী চরম শাস্তি পায় ? "
এই বলেই চোখের জল নিয়ে বেরিয়ে গেল দেবলীনা ।
অপেক্ষা নিয়ে অপলক দৃষ্টি দিয়ে চলে যাওয়ার পথে চেয়ে রইল ডাক্তার সুবর্ণ রায় । "
কে বলে ভালোবাসার মানুষ কাছে থাকলেই ভালোবাসা যায় ? ভালোবাসা ,ভালোবাসার মতোই প্রবিত্র দূরে গেলে ভালোবাসার গভীরতা বাড়ে ভালোবাসা মরে যায় না , ভালোবাসা অমর...
* সমাপ্ত *
আশা করি আপনাদের এই ধারাবাহিক উপন্যাস ভালো লেগেছে! মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
Nice
উত্তরমুছুন