প্রথম বর্ষ - দশম সংখ্যা ২০২০ (কবিতা সংখ্যা)
সম্পাদক - অনিমেষ সরকার |
সম্পাদকীয় : -
একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি অন্য দিকে Covid 19 এর প্রকোপ আমরা ঘরবন্দি সবাই। পূর্ববর্তী সম্পাদকীয়গুলোর মতোই এই সম্পাদকীয়তেও লিখতে হচ্ছে কোভিড নাইনটিন নিয়ে । বিষয়টা যে কতটা দুমড়ে মুষড়ে দিচ্ছে বুঝতেই পারছেন। বারবার লিখতে হচ্ছে । এই কোভিড নাইনটিন এখন এই যুগের মারণ অস্ত্র। সূক্ষ্ম অথচ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দানব । যার গ্রাসে লক্ষ লক্ষ প্রাণ।তবে ঘরে বসেও কিন্তু আমরা সৃজনশীল রয়ে গেছি।হ্যাঁ সংকট অবস্থা।মানুষ মরছে না খেতে পেয়ে।তবুও We shall over come , Winter has come . এই মন্ত্র মেনে চেম্বার খুলে বসেছি, একে অপরকে পেস্ক্রাইব করে দিচ্ছি মন ভালো করার ওষুধ।অথচ ঘরে বসেও আগে থেকেই রক্তে ইনজেক্ট করে দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি। অজস্র হামনাভা ,হামদার্দ চারপাশে। ফিসফিসিয়ে চলছে আনচান কবিতার কারবার। যাই হোক সমীকরণগুলোকে কভারড্রাইভ দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠানোর চেয়ে স্টেপ আউট করে যদি লঙ অফের ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে মারতে পারি সেটাই বড়ো কথা। আর ওয়াইড বলে বাই চার রান পেয়ে গেলে তো কথাই নেই।
(২)আম্ফানের কবলে দক্ষিণবঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত । কলেজস্ট্রিটের বইপাড়া দেখার মতো দশায় নেই।করোনা আম্ফানের মাঝে মানুষ প্যারাবোলা হয়ে ঝুলছে। বাইরে বেরোলে সংক্রমণ ভেতরে থাকলে ছাদ উড়ে যাওয়া । এরমাঝেও রাজনীতি ঢুকে গেছে অযাচিত ভাবে মানুষের বেসিক নিডস অন্ন বস্ত্র বাসস্থান এগুলো নিয়ে টানাপোড়েন ।মানুষ ঘরছাড়া মৃত্যুর সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। এইসময়েও কিছু কবি সাহিত্যিকদের আমার অপগন্ড মুর্খ নেতাদের মতোই মনে হয় যাদের মানসিকতা বহুদিন ধরে অপরিষ্কার আন্ডার গার্মেন্টস ব্রেসিয়ার যেখান থেকে দুর্গন্ধ বেরোয় ।।
তবুও সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলি আগে আগে দেখো হোতা হে ক্যায়া ...
আপাতত এই সংখ্যাটি পড়ুন, পড়ান মতামত দিন ততদিনে আশা করি একজন সিক্রেট সুপারস্টার আর ভিজিবল গড-এরা ওষুধ আবিষ্কার করে নেবেন।পৃথিবী একদিন সুস্থ হবেই ...
সম্পাদকীয় অনিমেষ সরকার
সংখ্যা উৎসর্গ : সম্পাদকের স্বর্গগত পিতা শ্রদ্ধেয় শ্রী অসিত বরন সরকার মহাশয়কে।
স্বর্গগত শ্রদ্ধেয় শ্রী অসিত বরন সরকার |
শৌভিক রায়/প্রভাত চৌধুরী/সুবীর সরকার/ তাপস দাস/পঙ্কজ ঘোষ/ সুমন মল্লিক/দীপশিখা চক্রবর্তী /রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় /খোকন বর্মন/সম্পা পাল/ শিপ্রা(লাভলী) /প্রহর / রুবাইয়া জেসমিন /চন্দন খাঁ /বিকাশ দাস(বিল্টু)/ মৌমিতা দাস /শৌভিক বণিক/ মৌমিতা পাল / নীপোবীথি ভৌমিক/ উদয়ার্ণব/অনন্যা দাশগুপ্ত/ উজ্জ্বল/সুকান্ত দাস/সঞ্জয় সোম/অক্ষমালী/অম্বরীশ ঘোষ
ব্লগ অলঙ্কৃত হয়েছে শ্রীহরি দত্ত এবং মৌমিতা দাস - এর অঙ্কনে
চিত্রশিল্পী -মৌমিতা দাস |
প্রভাত চৌধুরী - এর কবিতা
একাকিত্ব-র দুই পর্ব
প্রথম পর্ব
আমি আমার আনন্দলহরিগুলিকে শেয়ার করতে পারি
আমার দুঃখসমূহকে বান্ধবসমীপে শেয়ার করতে পারি
কিন্তু আমি আমার নিজস্ব একাকিত্বটিকে
শেয়ার করতে পারি না
দ্বিতীয় পর্ব
আমার পুবদিকে বসে আছেন দুঃখ
আমার পশ্চিমদিকে বসে আছেন আনন্দ
আমার পুব- পশ্চিমের
ছবিটা অনেকটা এরকম
উত্তর-দক্ষিণের কথা না-ই বললাম
শৌভিক রায় -এর কবিতাগুচ্ছ
শিরোনামে কী যায় আসে?
ঘর বিষণ্ণ হলে
নির্জন, একা
সে
ভালবাসছে ওকে
জীবন আর মৃত্যু
ব্যথা ওদের
সবার মুখে...
************
তোমার চিঠিতে
গোপনীয়তা ছিল
উত্তর দিয়েছি
গোপনে।
***************
লম্ব কিরণ সূর্য ছিল
বার্চ-উইলোর সারি
ছিল সেই মেয়েটি যে
ছোট্ট পায়ের নারী (!)
আলো ঢেকেছে অন্ধকার
বার্চ-উইলো নীরব
আস্ফালনের মুখটা তবু
আজ হবে না সরব!
************
কয়েকটা ছিন্ন বস্তি
হলুদ বুনোফুল,
হঠাৎ থেমে পড়া
ক্রস সিগন্যালে।
দমকা হাওয়ায়
বৃষ্টি ওড়ে,
কোন চৈত্রমাস
বিষন্ন এমনই...
ফিরি আমরা
ফিরতে হয়
ট্যাক্সির কাঁচে শুধু
সেঁটে থাকে কোন মুখ
***************
মায়ের হাত ধরে
কিছু লিখি না আজকাল
মা ভাল নেই
মা হাত ধরলেই
হলুদ গন্ধ
মরা বিকেল
সন্ধ্যা নামে
ভাঙাচোরা গালে
মা ভাল নেই বলে
কিছু লেখা হয় না
আজকাল
মায়ের অসুখ
অসুখ কলমের
মা কেন যেন ভাল নেই
মায়ের হাত ধরে
কিছু লিখি না তাই...
সুবীর সরকার-এর দীর্ঘকবিতা
পুনশ্চ,বন্দুকনামা
এই যে ভাষাপুল ডিঙিয়ে চলে যাচ্ছি আমরা
এই যে হবিগঞ্জে দেখে ফেলা সেই বাংলার
দাঁড়কাক
বিপন্ন আমার ভাষা।আজ লিলুয়া বাতাসে উড়ে
যায়।
কাঠের বন্দুক যদি শিরোনাম ভাবি
তবে মাঠে মাঠে জ্বলে উঠবে আগুন
আমাদের ভয়ভীতি নেই।পাগলের আলজিভ
থেকে
গড়িয়ে নামে লালা।
মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকা ডাহুক পাখি
শুকিয়ে যাওয়া চোখে জল নেই
আপাতত মুদ্রণপ্রমাদের কথাই বরং ভাবা
যাক
মানুষ পালটে যাবে এটাই স্বাভাবিক
খোলা মাঠে আমরা নামিয়ে দেব গানের
আসর
হিরে বসানো নারীর চোখ,তাকাতে পারি
না
গ্যাস চেম্বারের মধ্যে ঢুকে পড়ছে আমার
দেশ
লোকদেবতার থানে ঢাক বাজে
আমি বেলুনসমেত ঢুকে পড়ি
ঘুড়ি ও লাটাই নিয়ে ঢুকে পড়ি
উড়তে শেখা পাখি আমাকে সাইলেন্স
চেনায়
কেউ কি কান্না মুছে দিতে পারো!
দ্যাখো, পুরোন সার্কাসের হলুদ বাঘ আবার
ফিরতে চাইছে
টানেলে টানেলে হিম ঢুকে পড়ছে
হলদিবাড়ির রাস্তায় শুয়ে থাকছে মস্ত
অজগর
জীবন তো কনসার্ট।
সুপুরির ছায়া জড়িয়ে কেবল
বাজে
আমি ঢিল ছুঁড়ে ফাটিয়ে দেব মাটির
কলসি
জলাধারের ছবি তুলে উপহার পাঠাবো প্রাক্তন
বান্ধবীকে
এই বা-হাতি খালের দেশ
এই গান ও বাথানের দেশ
কাঠের বন্ধুকের গায়ে শ্যাওলা জমলে খুঁজতে
শুরু করি
শিকারকাহিনী।
গোপন গানের মত তুমি ঢুকে পড়েছিলে
জীবনে
প্রলাপ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলে দিক ও দিগরের
ভিতর
এখন হালকা জঙ্গলে গান শুনতে যাই
গণকবরের পাশে মুখোশ পরে হাঁটি
শিরদাঁড়ায় কেউ বুঝি মরণ ঢুকিয়ে
দিচ্ছে
প্রবেশ কিংবা প্রস্থানের এই জীবন
এখন অবসর ও অবসাদ একসাথেই
আসে
আমাদের নখে সহজ হয়ে ডুবে থাকা
ময়লা
সেদ্ধ ডিম থেকে খসিয়ে দেওয়া
কুসুম
করমর্দন ভালোবাসি কারণ আমার করতল
মসৃণ
ঘোর চলে গেলে ডেকে আনা হবে ঘোড়ার
গাড়ি
এই অনেক রোদের পৃথিবীতে প্লিজ
পাশ কাটিয়ে চলে যেওনা আর
তুমি।
বিকাশ দাস(বিল্টু) - এর কবিতা
ঘুমহীন রাত ও কবিতা তোমায়
আমাদের খলান বাড়িতে কবিতা হেঁটে বেড়ায়।একা।নিশুতি রাতে কবিতা জেগে ওঠে।রাত যখন স্তব্ধতায় গুমরে থাকে।তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে অনুভব করি কবিতার নাচ।অপ্সরার সাজ।গোলাপী রাতে রাগিনীর স্বর।মেনকার আলতা রাঙা পা।নুপূরের ধ্বনি।রুমঝুম রুমঝুম।
দীর্ঘ নাচ।ক্লান্ত রাত।
কবিতা গুনগুনিয়ে গান ধরে।সুপারি বাগান থেকে ভেসে আসে কবিতার আলতো গলা।মৃদু স্বর।গোয়ালঘরের বকনা বাছুরটির দুধ খাওয়ার লালসার মতো রাত বাড়তেই থাকে।আমি চুপ হয়ে থাকি।গান শুনি।
উমমমম
জানালা খুলে দিই।হুহু করে বাতাস ঢোকে।পূবালী বাতাসে লেপটে কবিতার ঘাম।আমি ঘ্রান নি'ই প্রাণ ভরে।নোনা স্বাদ।টগবগ করে ফুঁটি।
কবিতা জিরিয়ে নেয় আমার উঠোনে।বেনী করা চুল,বেহুলার মতো লাল শাড়ি,নাকে নোলক পড়া কবিতাকে আমার প্রেমিকা ভেবে প্রেমের কবিতায় মজি।দু'ছত্র লেখা হলেই কবিতার মুখোমুখি হয়ে শুনিয়ে দিব আমার প্রেমের কবিতা:"কবিতা তোমায়"
সকাল।ভোরের আলো।
আমার ক্লান্ত শরীরে তখন কবিতার আলো!ঘোরে থাকা রাত কিভাবে সকাল হয়?শালিকের ডাক।লক্ষীর মা'র হাঁক।সকাল।
অনুভব করি কবিতার ফেরার পথ।দুর্বাঘাসে লেগে থাকা কবিতার নিশুতি কাহিনী।পদছাপ।প্রেমিকের জন্য রেখে যাওয়া এক মুঠো তাজা ভালোবাসা!
খলানে খুঁজি,উঠোনে খুঁজি,বাগানে খুঁজি কবিতার দাগ।ঘুঙুর।বেহুলা আলতা।পদছাপ।আমার ভালোবাসা।
কিছু নেই।কোথাও নেই।নেই!একরাশ মুঠো স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষায় থাকি আরও একটি রাতের।
কবিতার
সুমন মল্লিক-এর কবিতা
মুক্তি আদৌ কি খুঁজি
কথা ও ব্যথা দিয়ে আর সাজাই না
বিরহের ফেরিঘাট – পারাপার বন্ধ এখন ৷
ঘুমের শরীরে ফুটে আছে যে বকুলেরা
তাদের কাছে হাত পেতে আর বলি না –
নিয়ে চলো অন্য দেহ-নিসর্গে ৷
এই অসীম আর্দ্রতায় গলে গলে যাচ্ছে
স্বপ্ন, সাধন, সন্তাপ...
এবার ফুরিয়ে আসা ভালবাসায়
কিছুটা বৃষ্টি নামুক, ধুয়ে দিক সব
শিশিরকণার মতো মায়াপ্রপঞ্চ ৷
এতকিছুর পরও মনের চূড়ায় বসে কাঁপছে
আমারই কাঁপা কাঁপা হাতের বিস্ময়
আর তমসামধুর পরশ ও পয়গাম ৷
মুক্তি খুঁজি ; মুক্তি আদৌ কি খুঁজি...
আমার সমস্ত কবিতার জন্ম শেষমেশ
তোমার পায়ের কাছেই তো খুলে রাখি ৷
দীপশিখা চক্রবর্তী - এর কবিতা
স্বাভাবিকতা
প্রচন্ড কষ্টে লবণাক্ত হয় শরীর,
মানুষ কাঁদে,
কখনো আনন্দে আত্মহারা,
চোখ বেয়ে নামে আলো,
এটা স্বাভাবিক;
তবুও কেন যেন আমরা কেউ স্বাভাবিক নেই আর,
বাস্তবতা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে-
ভয়াবহ অস্বাভাবিকতা;
এটাই সত্যি,
সবাই এখন অস্বাভাবিকভাবে স্বাভাবিক!!
রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় - এর কবিতা
পোষাকী মিথ্যেরা
বিস্তৃত উঠোন জুড়ে পোষাকী মিথ্যেরা বকেদের ডানার গোধূলির রং নিয়ে বাসা বাঁধে অশরীরী অসহিষ্ণুতায় ৷ চটে যাওয়া রং, ওপরানো শিকড়, নদী বক্ষে জমেছে পলি ৷ অঘোর আলস্যে চেতনার শবদেহ নিয়ে শুয়ে থাকি ৷ প্রতিটি বুদবুদ কালো রক্তের ফোঁটা ৷ গনগনে পৃথিবীর প্রকোষ্ঠে অবারিত বিচ্ছেদ, অসূয়া জমছে ৷ দূরে যেতে যেতে নিষ্প্রভ সম্পর্ক-বিতানে, কূজন কাকলি শূণ্য ঘাট ৷ কাছিটার বা্ঁধন আলগা হয়েছে ৷ ডুব সাঁতারে হেনেছে আঘাত ৷ উন্মুক্ত ক্ষত চিহ্ন ধীরে ধীরে বড় হয় ৷ বিষাদ স্মৃতির রেশ টুকু নিয়ে উদভ্রান্ত-বিলাসে পৃথিবীর কক্ষপথে আজও আমি ৷ উদবাস্তুর মত নিজের অস্তিত্বকে কাটা ছেড়া করি ৷
দূরে তথন তোমার রাজপ্রাসাদে আরও একটা সর্বনাশ লেখা হচ্ছে ৷
খোকন বর্মন - এর কবিতা
অসুখ
যে অসুখে রোজ বিষণ্নতা আওড়াতে হয়
ট্যাবলেট কিংবা সিরাপেও বিশ্বাস লেগে থাকে কোটেশনের মতো।
পড়তে পড়তে মুখ ভাসলে সলে বুঝতে পারবে -
কতটা স্যালাইন ভিতরে প্রবেশে পুষ্ট হতে পারে স্বপ্ন?
রোগীর সামনে খুলে বলতে নেই সবকিছু
অতিরিক্ত ভালোবেসে প্রেমিকাকে দু চার লাইন মিথ্যে বলতেই হয়।
সম্পা পাল - এর কবিতা
ওয়াইনের সন্ধ্যা
সৌরিনী পার হয়ে মকাইবাড়ি
গন্ধটা রোজ ধুপির হেলানো বারান্দায় ।
ফিনফিনে কাপ, চারিদিকে বনফায়ারের উষ্ণতা
একা সন্ধ্যা ওয়াইনের মতো লালচে
স্বপ্ন আর বাস্তব.... একটু ওম নিয়ে
শীতের ঘুম স্টেশন এখন আর যাত্রীর অপেক্ষা করেনা হয়তো
পশমিনা শাল গায়ে তবু আমাকে সংসার গোছাতে হয়
বরফের আঁচল থেকে কখন যেন শিশিরের শব্দ থেমে গেছে .....
ম্যাপলের পাতা ওড়ার শব্দটাও এখন আর নেই....
চারিদিকে আবছা হ্যালুসিনেশন
কখন যেন চা -কেই
আমি ওয়াইন ভেবে ভুল করে বসি ........
শিপ্রা (লাভলী) - এর কবিতা
কিউবিজম
এখন গ্রীষ্মকাল, মাঝেসাঝে বৃষ্টির শীতে ভিজছে বসবাস
পাখিরা আবার বিচরণস্থানে ফিরছে, তাদের নিজেদের মতো
বসন্তবৌরির ডাকে আজকাল ঘুম ভাঙে
যদিও আকাশ দেখা যায় গ্রীলের ফাঁকে!!
পিকাসোর কিউবিজমে জুড়ছে ক্যানভাস——
মন্থর গতির মালগাড়ি’তে মানবেব দমবন্ধ শ্বাস
ফরাসী থেকে মার্কিন, কমলা সুরাইয়ার বোরখার হেফাজত
সদগুরু এবং ওম ধ্বনির মহাকাল!!
গঙ্গার জল পুনরায় আছড়ে পড়ছে বেলুড়মঠে——
যে যার গতি’তে ঠিক হিসেব কষে নেয়
শুধু ছাদ বা ঘরের চাল, একটা হতে অন্যটায় টপকে যাওয়া
বেদনার আধার , দু’টি পথ কিন্তু কেন্দ্রবিন্দু একটি!!
এ কী আশীর্বাদ না অভিশাপ ——
সব ভাঙছে, শরীর মন সমাজ পরিবেশ
ইতালী খুঁজছে লিওনার্দোর “দ্যা লাস্ট সাপার”
বহুদূর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার আলোয় সেজে ওঠেছে পৃথিবী!!
চিত্রশিল্পী - শ্রীহরি দত্ত |
প্রহর - এর কবিতা
মৃত প্রেম
আমি তোমার প্রেমে পড়ি বারংবার-
যখন তুমি তাকিয়ে থাকো শেষ বিকেলের সুর্যের দিকে, আমি ব্যর্থতায় ভুগি!
তোমার পুরোনো প্রেমিকরা তোমাকে ছুঁয়ে আছে ভাবলেই আমি কেন জানি না হঠাৎ হিংস্র হয়ে উঠি!
নিজের জঙ্গলে তখন নিজেই লাগাই দাবানল!
হঠাৎ মনে পড়ে আমি খুব সাধারণ...
আর প্রেম শব্দটা ঈশ্বরের দত্তক নেওয়া!
প্রতিটা ব্যর্থ প্রেম আমাকে মাতাল করে তোলে....
জানতে ইচ্ছে করে তোমার আমায় ভালোবাসতে ইচ্ছে করে কিনা?
আমি জানি আকাশের গভীরতা শুধু মাত্র মহাজাগতিক নয়।
প্রেম শব্দটাও আকাশের মতোই গভীর।
আমি তাই বারংবার প্রেমে পড়ি তোমার...
বোবা জানোয়ারের মতো আঁতকে উঠি মাঝ সমুদ্রের অন্ধকার আকাশে!
নিজেকে বড় অসহায় লাগে
যখন আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমাকে স্পর্শ করে কিংবা ভালোবাসে....
সে বর্তমান, অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ- যাই হোক না কেন!
আমি অন্ধকার আকাশ থেকে ইরেজার ঘষে তুলতে থাকি নক্ষত্রদের!
কিছুতেই মুছে ফেলতে পারি না আমার "আমি"কে।
তাই আমি প্রেমে পড়ি বারংবার....
তোমার মৃত্যুযোনিতে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে উড়িয়ে দিই
শ্মশানের সান্নিধ্যে থাকা অসংখ্য "আমি"র অজস্র অগুণতি ব্যর্থতা।
আমায় কুরে কুরে খায় উইপোকার মতো "আমি"র উপস্থিতি!
জানি যে আমার কাউকে ভালোবাসার কথা নয়....
কিন্তু যখন তুমি মাঝরাতে অন্ধকার আকাশে নক্ষত্রের ভিড়ে নিজেকে খোঁজো-
আমি বুঝতে পারি তুমি বেঁচে আছো আমার মাঝে!
আর ঠিক তখনই সেই মহাজাগতিক ক্ষণে আমি বেঁচে উঠি আবার....
কারণ তুমি যে, "অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি, তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি..."
রুবাইয়া জেসমিন - এর কবিতা
রাষ্ট্র তোমাকে
টেলিভিশনের পর্দা ফেটে যায় মহামারির শব্দে।
পরিযায়ী পাখি। নাকি পরিযায়ী মানুষ।গা গুলিয়ে যায় জুনের অন্তঃসত্ত্বাদের।
জল, মাটি, নদী, আঁকড়ে ছিল এতদিন যারা।পুতেছে তাদের রাতের অন্ধকারে।
ঘর ছেড়ে এখনো পঞ্চাশ লক্ষ ভিনরাজ্যে।
অথচ রাষ্ট্র জানেনা !
রাষ্ট্র আর তোমার মধ্যে আজকাল কোনও ফারাক করিনা।
যেভাবে প্রতিদিন তুমিও উদাসীন হও।
চন্দন খাঁ এর দুটি কবিতা
অন্যরকম ডাক ঘরের গল্প
ডাকঘরের অমল হয়ে জানালার কাছে
চুপচাপ বসে আছি পনেরো দিন ।
দইওয়ালার কাঁধে দইয়ের বাঁকা নেই
দুটি গাভির দড়ি ধরে মাঠের মাঝখানে
হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
প্রহরী হাসপাতালের গেটে মাস্ক পরে
টানা চোদ্দ দিন নাইট ডিউটি করছে
কতদিন হয়ে গেল ঠাকুরদার কাছে
একটি শিশুর গল্প শুনতে আসেনি
তিনি টিভির সামনে ইতালির মৃত্যু মিছিল দেখে
ধুতির খুঁটে দিয়ে চশমার কাঁচ মুছছেন ।
মোড়লের সব আস্ফালন থেমে গেছে
তাঁর মেয়ে জামাই আমেরিকায় করোনা আক্রান্ত হয়ে
মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে...
রাজ কবিরাজ দিন নেই যাও নেই
বেলেঘাটা হাসপাতালেই পড়ে আছেন
সাতদিন ভালো করে স্নান খাওয়া হয়নি তাঁর ।
মাধব দত্ত বাড়ির চারপাশে
ফ্যাকাশে হলুদ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন
আর ভাবছেন এতসব বিষয় সম্পত্তির কী হবে...
(২)
সুধা এখন আর সকালে ফুল তুলতে আসে না
ভোরের অন্ধকারে নর্দমার ধারে
কলমি শাক আর হেলেঞ্চা শাক তুলছে
এখন সে হাঁটলে
রাডী তা দুটি আর মল ঝম্ ঝম্ করে না
শরীর বেয়ে নেমে আসে না স্বর্গীয় সুগন্ধ
এখন তার সারা শরীরে
শুধু নর্দমার পচা পাঁকের দুর্গন্ধ
পঙ্কজ ঘোষ- এর গুচ্ছ কবিতা
শহর সিরিজ
( ৮)
ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারছি না
কিছুতেই কাটছে না গতরাতের হ্যাংওভার
অজ্ঞাত মন্ত্রধ্বনি অবশ করে রাখে
শহর ছেয়ে যায় পাখি আর হরিণের সমাধিফলকে।
(৯)
পাখি আর হরিণশহরে বাঘ ঢুকে পড়ে
সমস্ত শিকারীরা পাহারা দেয় তাকে
কারা যেন প্রচার করে বাঘ গেছে কমে
অথচ প্রতিদিন পাখি ও হরিণ মারা যায়
আমরা বাঘ পুষে চলি
(১৩)
অন্ধ হওয়া ছিল সবচেয়ে সহজ
তাই পকেটে হাত গুঁজে রাখি
পকেটভর্তি শুন্যতা
শহরজুড়ে চলে শিরদাঁড়ার খোঁজ
আসলে সহজ হওয়া ছিল সবচেয়ে কঠিন
(১৬)
ইস্তেহারে দেওয়াল ভরে যায়
আর আমার পাখিশহর বদলে যেতে থাকে
কয়েকটি মৃত মানুষ খুনি হয়ে
হত্যা - উৎসবে মেতে ওঠে
সারারাত
(১৭)
অন্ধকারের দিকে দ্রুত হেঁটে যেতে থাকি
পেন্সিলে আঁকার মতো শৈশব মুছে ফেলি
স্পর্শের উত্তাপ কমে আসে
আর সেতু ভাঙতে থাকে রাতভর
(২০)
দাঁড়াতে পারে না আর কোনো গাছ
আশ্চর্যজনকভাবে পাখিরা সব চুপ
অশ্রুত মন্ত্রে সব সেতু ভেঙে যায়
আমরা সকলে মিলে গান্ধারী সাজি
মৌমিতা দাস - এর কবিতা
অপরিনত আমি
অন্যায় মেনে নিও চুপচাপ
প্রতিবাদে পাবে চর
সমাজ কেবল হাসে
আমরা আস্ত বর্বর
আঘাতের বদলে আঘাত
প্রেমের বদলে কান্না
মেঘের বদলে বৃষ্টি
শরীর ভিজবে মন,না ।।
সকাল থেকে রাত
ঘুমেও জেগে থাকি
ভালোবাসা আর স্নেহটুকু দিয়ে
মৃত্যুকে ঢেকে রাখি ।।
শৌভিক বণিক - এর কবিতা
আখ্যান
ব্যথার সরণি জেগে ওঠছে
রোজনামচা আখ্যানে
বইছে বাতাস
ব্যারিকেড ভেঙে ভাবতে চাইছো আলো
আকাশে খুঁজছো প্রেম প্রেম সম্পর্ক
পুরাতন অভ্যাসে বদল চাইছে দিন...
যদিও জানো
দরজা একপাশে অন্ধকার আর অন্যপাশে শোক
মৌমিতা পাল - এর কবিতা
শীলিত
আপনার হাতে গড়া রুটিতেই
কাহিনীর বিস্তার ঘটে যায়।
কৌতূহলের কেন্দ্রে পৌঁছানোর আগেই
মাধ্যমের কলাকৌশল।
নিদ্রচ্ছন্ন মাথা পাশের দিকে হেলান।
এক একটা ঘাতক রাতে উঠে আসে
ক্লান্তির কালো।
যে আমাকে ইচ্ছে করেনি
আমি তার।
যে আমাকে ইচ্ছে করে
আমি তার চারপাশে আঁকি ঝুলন্ত ত্রিভুজ।
রাস্তার কুকুরকে জল থেকে তুলে
কাকভেজা বৃষ্টিতে চুষে নিই কঠিন সুরা।
ঝড় , মহামারী - স্বপ্নেরা সাবধান
আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারি স্বপ্নের ছল-ছুঁতো করে।
প্রথম পক্ষের লিভ টুগেদারে তুষ্ট মরণশীল রমণী
আমিও রুষ্ট নই , অসমাপ্ত কবিতা লিখেছি বলে।
সমস্তই ধারণ করতে হয় প্রতিফলনের জন্য।
বেয়াড়া হলেই
একাকী হেঁটে খুলে দাও
চিতা জপ উপাসনার
উদ্যত বঞ্চিত সাহস
যেনবা কশাঘাত
ঋণ রণাঙ্গন
দেয়ালে ঝুলুক মন
অট্টহাসি বিনাশক
শীলিত মধ্যভাগ
মধ্যভাগে পৌঁছানোর আগেই
মাধ্যমের কলাকৌশল।
ব্যর্থ ভেবেছেন যাকে
তার আছে শাণিত জয় জয় জয়।
উদয়ার্ণব - এর কবিতা
উৎসব
স্বাধীনতা ওভাবেই ছিল সংরক্ষিত।
তবে কেন মাটির কাছাকাছি পড়ে থাকা ক্ষত-বিক্ষত অতীত, ভরে উঠেছিল পাপ ?
সমস্ত ভূ-স্বর্গ জুড়ে তোমরা যেদিন মৃত্যু এনেছিলে আমরা দেখেছিলাম তোমাদের প্রভুদের এবং তাদের ঈষদুষ্ণ হাসি, যা আমাদের ক্রীতদাস সাজিয়ে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে চাইছে ভবিষ্যৎ।
নীপবীথি ভৌমিক - এর তিনটি কবিতা
চিত্র
আসলে পাপ বলে কিছুই হয় না
যেমন পূণ্য বলে কিছু নেই...
এই যে হত্যা করি আমি
নিজেকে স্নান করাই নিজের শোকজলে,
অথচ অবয়ব জুড়ে অভিনয় এঁকে রাখি রঙিন সুরায়
আসলে তুমি তো জানো
সবটাই জীবন ;
মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠের ছবি যে কখনই
ভিন্ন নয়।
কুয়াশা
সবটাই মেঘ ছিল। আর মেঘের সাথে উড়ে চলা কিছু সােনাঝুরি বৃষ্টি।
বালি পাড়া থেকে শুরু করে, ছাতিম প্রাঙ্গণ ছুঁয়ে যে বাতাসেরা চলে যায় চিপকুটির দিকে...
হ্যাঁ, সবটাই মেঘ ছিল। পূর্বাভাসে লেখাও ছিল বৃষ্টির ঠিকানা। পথ ভুলে চলে যাওয়া পথিক কি মনে রাখে কোনাে উদ্দ্যেশ্যের ঠিকানা!
অন্ধ
বরং এভাবেই এসো।
যেভাবে চেয়েছ নিজেকে...
খুলে দিয়ে হাত ওই উদাত্ত হাতে,
এভাবেই এসো আজ। আমাকে আমার মতো নিতে চিনে।
হাহাকারে বসে আছে মৃত্যু স্নান
ক্ষুধার্ত পেট আজ, অথচ খিদে নেই ;
মৃত গাছ ছুঁয়ে যায় শকুনের উল্লাস
আর আমি বসে আছি তার খাবার হয়ে
এভাবেই এসো আজ। চিনে নিতে আমাকে
তাপস দাস -এর কবিতা
মাঝরাত
মধ্যরাত দুখিনী মেয়ের মতো
অসুস্থ আমার পাশে বসে আছে
তার কালো চুল কালো মুখের ওপর নেমে আছে
আলাদা কোন সৌন্দর্য দাবি করছে না
একটা সুগন্ধে আমি ভিজে যাচ্ছি
একটা আঁচল আমায় ঢেকে দিচ্ছে
শরীরে খুলে দিচ্ছে আঁচলের ফুল।
অনন্যা দাশগুপ্ত - এর কবিতা
ধ্বংসাবশেষ
•১•
কোথাও পতঙ্গের চলাচল নেই
কয়েকশো বছর পুরোনো দেওয়ালে আঁকিবুকি-
ছাতা না নিয়ে আজ হাঁটা মুশকিল, যদিও রবিঠাকুরকে এখনো সকলে চেনে-
শিউরে উঠে বসে আছি ভোর থেকে,বৃষ্টি থামেনি এখনো...
শুধু একবার
মানুষের দেখা পেলে
অশ্রু লুকিয়ে জাহান্নামে যাব।
*২*
তোমার তো ভাঙা পাঁচিল নেই আশেপাশে, নেই হরিণের চোখ।তাহলে কেন তুমি কষ্ট পাবে বলো? তুমি বরং হেসে গড়াবে দুপুরের আরামের বিছানায়।
অজ্ঞতার চোখ আর খুলি
কাদায় ঢেকে নিয়ে তুমি নিজস্ব পরিধিতে আটকে থাকবে নিজে নিজেই ...
আর যার ভাঙা ছাদ, ভাঙা পাঁচিল চারপাশে, সে তখন হরিণের মত চঞ্চল হবে, কাপড়ের খুটে চোখ মুছে মনে করবে শেষ কবে সে হেসেছিল...!!!
*৩*
বৃষ্টি হচ্ছে,ঝড়ও...
কথা শোনা যাচ্ছে না কারো
রাজার প্রাসাদে বসে
বুলি কপচাচ্ছে মহামহিম
এক শয্যায় মা-সন্তান
নিশ্চিন্তে...
গাছে চাপা দুটো শরীর।
অক্ষমালী - এর কবিতা
প্রার্থনাগীতি
ছা-পোষা মানুষ;
ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠি,
দেখি- পূব আকাশে
বাবা হাঁটছেন।
আর মা
নিচু হয়ে নেভা উনুনে ফুঁ দিচ্ছেন
এক মুঠো চাল ফোটাবেন বলে।
আমি, নিমডাল দাঁতে ধরে
পিছনের বাগানে যাই
ওলের ডাঁটা আর
কুমড়ো ফুল তুলতে।
আজ একটা টুনটুনিকে
পাতা সেলাই করতে দেখে
দিদির মুখটা মনে পড়ছে খুব।
অম্বরীশ ঘোষ - এর কবিতা
সংশয়
চাঁদ কি সেই উনুনে উঁকি দিয়েছিল
যে উনুনে গত তিনদিন আগুন জ্বলেনি
রুক্ষতার সমাহারে সবুজ এখন ইতিহাসবন্দী ঘুম
শুষ্ক পাতার ধূসর পোষাকে বাউল সেজেছে পথ
তারাদের তরবারির ফলাতে ক্রোধ জমেছে
গেরস্থের পুরোনো কবর থেকে চুরি গেছে কঙ্কাল
আমরা আনমনে পেটজুড়ে শূন্যতা লেপে নিয়েছি
সুস্থিতী আর প্রগতিকে ওভারটেক করে
অবক্ষয়ের মুহুর্তেরা দাপিয়ে ছুটছে সব দিগন্তে
পৃথিবীর রংমহলের মরচে সরিয়ে
গোপন ডেরা থেকে আবারও কি উঁকি দেবে ধ্রুবতারা
সুকান্ত দাস - এর কবিতা
অজ্ঞাতবাস পর্ব ২
১.কিছুটা গোপন আর কিছুটা আড়াল হয়ে থাকা এই ইনিংস। ভোরের আশকারায় লেগে থাকে নিবু নিবু ওম। আরো কিছু থাক হাঁটা পায়ের দিন। নহবতের গলিটা আরেকটু চেনা হোক।
২.
আগে দেখা হোত রোজ। বিকেল করে বৃষ্টি হোত খুব। ঝড়ের আগে বাতিদালানে ভিড় জমাতো ঘোড়সওয়ারেরা। মহলবাড়ির বাতিদালানে পিদিম জ্বলে উঠতো। বাইজী যত্ন করে গাইতেন – ‘আজ কুছ বাত হ্যাঁয় যো সাম পে রোনা আয়া ..’
৩.
বইয়ের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে চমৎকার প্রচ্ছদ। ভেতরে পৃষ্ঠা জুড়ে কালো আইলাইনার। উপচে পড়া অভিমান। মানভঙ্গের ভেতর বিপ্লব ঘটে যায়। কলরবের সুরে দানা বাঁধে বিপরীত আঙুল। ভাঁজের অতলে চাপা পড়ে যায় প্রেসকর্মীর অযত্নে ধরার প্রমাণ আর শিকড়ের সোঁদা গন্ধ।
৪.
দুপুর কেটে বেছে স্নেহাশিস তুলে রাখে। পূর্বজন্মের গান আর অসামাপিকা ক্রিয়াদের ছেড়ে দিলেই বড় হয়ে উঠবে জীবন। কালোর ভেতরও অনেক স্ট্রোক হয়। চোখের জহুরী হওয়া চাই। সে দেখার ভিড় করে থাকা মানুষ কম। আহা!-র সমীপে দাগিয়ে দেওয়া হয় না-বোঝার ইতিকথা।
৫.
বিপর্যয়ের দিনে অনেকে শুভেচ্ছা বিলি করেন। হাইওয়ে ধরে শুকনো মুখের ভিড়। শবের দেশে সংখ্যা বড় হচ্ছে। গেটের ওপারে মায়ের ভীত মুখ। সব মায়েরা কিছুটা একই হয়। আমাকে দেখেও না দেখার ভুলে বাইরে বেরিয়ে পড়ে।
মনিমা মজুমদার - এর কবিতা
বৃষ্টি অথবা নদীর গল্প
১
বৃষ্টি পড়ছে বিছানায়,
নদী হতে চাওয়া ঢেউগুলি শুধু
নোনাছোঁয়াতে আছড়ে পড়তে শিখেছে।
বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে বিছানা,
মেঘপুতুলের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখ,
নাকি শুধুই পরিযায়ী কান্না!
২
শ্রাবণ আর আমাদের গল্প তো চিরকালের
কখনও আকাশ ভেঙে পড়ে
কখনও আমাদের বুক
৩
যখনই স্বপ্নে নদী আসে
আমি তার রঙ ধূসর দেখি
এঁকেবেঁকে দাওয়া ঘেঁসে
চলতে থাকে সে ছলাৎছলাৎ
সাদা থান সেই জলে
এঁটো বাসন ডুবিয়ে নেয়
সে নদী পৃথিবীর নয়
সে নদী বিসর্জনেরও নয় কিছুতেই
সঞ্জয় সোম - এর কবিতা
কেনো চুপিসারে
সবুজ হাসছে, ভীষণ হাসছে
চুপিচুপি পায়ের চিহ্ন মানুষ আঁকছে
যাওয়ার তো কোথাও নেই
মলগুলো, ক্লাবগুলো, পাড়ার মোড় সব বন্ধ!
শহর সীমান্ত চুপিসারে ভিড় টানছে .... ।
বাহুবল, লোকবল, অর্থবল সব বিকল
ক্ষুদ্র জীবাণু দেখিয়ে দিল সকল
শিখিয়ে দিল হাত-মুখ ধোয়া
চিনিয়ে দিল মৃত্যুভয়,বন্ধু-শত্রু কেউ কারো নয়
থেকে যাবে বহুদিন যুদ্ধের ধকল ।
উজ্জ্বল বর্মন - এর কবিতা
অসুখটা চিরবিচ্ছেদের সাহু
বহুদিন যাবৎ ঝকঝকে কাচে অহংকার দেখা হয়না...।
পড়ন্ত দুপুরে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকি একদৃষ্টে।
হাঁটতে হাঁটতে ছায়াকে পিষিয়ে মারতে চাই,
অহংকারের পেছনে শুধু ছুটতে থাকি,
ছুটতে থাকি...
শুধু একঝাকড়া চুল চোখে পড়ে...
দেওয়ালের সাথে অহংকারের যুদ্ধ বেঁধে দেই।
অবশেষে নিজেই ক্ষত-বিক্ষত হই,
পরাস্ত হয়ে যাই মায়ের কাছে...।
আবারও ছুটতে থাকি,
ছুটতে ছুটতে মৃতদের মাঝখানে এসে দাঁড়াই!
আমার চোখের একপাশে দাউ দাউ করে কাঠ আর অস্থি জ্বলছে...।
পুড়ছে অজস্র নাম...।
পুড়ছে অহংকার...।
পুড়ছে একটা গোটা দেশ...।
চোখের আরেকপাশে অজস্র টিলা,
মৃতেরা মাটিকে আকড়ে ধরে শুয়ে আছে চিরঘুমে।
আমি নির্বাক পথিক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি...
আমার পায়ে পায়ে অহংকারের ধ্বংসাবশেষ।
অবশেষে আমার প্রেমিকাকে খুঁজে পাই;
সাহুকে খুঁজে পাই...
সেও আমার মতো ভাঙ্গাচুড়া মন নিয়ে বইতেই থাকে..
সাহুর কানে কানে বলি-
মোর বুকের ভেতরটা বড়োই জ্বালাতন করেছে
অসুখের,
অসুখটা চিরবিচ্ছেদের সাহু।
চিত্রশিল্পী - শ্রীহরি দত্ত |
Onek onek valobasa abong shubhechcha roilo
উত্তরমুছুন