কলমে কলমে তিন দশক - নবম সংখ্যা
প্রচ্ছদ শিল্পী- সায়ন্ত বণিক |
সম্পাদকীয় : -
" কলমে কলমে তিন দশক"
সময়ের উপর দিয়ে হাতুড়ি পেটাতে পেটাতে থমকে গেছে চাকা।প্রকৃতি আবার নিজের রূপে ফিরছে ।বাতাসে নেশা, গাছপালা সবুজ, পাখিদের ডাক। মানুষ ঘরবন্দি।কিন্তু লক্ষ্য করুন এই কিছুদিনে কীভাবে প্রকৃতি সেজে উঠছে।সেই সঙ্গে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, ভূমিকম্প ও হচ্ছে। তাহলে! এতদিন যত অত্যাচার করেছেন প্রকৃতি কি তার বদলা নিচ্ছে! হয়তো তাই হয়তোবা না।
Web ডুয়ার্স তার এই নবম সংখ্যা সাজাতে চলেছে " ৯/০/১ম " এই তিনদশকের কবিদের লেখা নিয়ে।আর শুধুমাত্র এই তিনদশক নয় আটের দশকের কবির লেখাও এই সংখ্যায় রয়েছে। অভিজ্ঞ কবিদের সাথে সাথে রয়েছে প্রথম দশকের একদম নতুন কলমচিরাও। সবাই একসঙ্গে এক পাতায় লিখেছেন আপনাদের জন্য ।
আমরা এখন সময়ের দিকে তাকিয়ে কবে কতদিনে সবকিছু ঠিক হবে। অপেক্ষায়। আবার সেই গতে ধরা মঞ্চ জীবনযাপন ।সবকিছুই আবার শুরু হবে। চলুন না অঙ্গীকার করি এই সময়টা ঘরে থাকবো, নিজের জন্য পরিবারের জন্য দেশের জন্য। চলুন অঙ্গীকার করি , পরিপূর্ণ ভালো মানুষ হয়ে উঠবো।প্রকৃতির উপর অনাচার করবো না।অপেক্ষা করুন ততদিন। নিজেকে বুস্ট আপ করুন। লিখে যান,সাবধানে থাকুন , ভালো থাকুন।
Web ডুয়ার্স পড়ুন, পড়ান। আমরা অঙ্গীকার বদ্ধ ভালো লেখা আপনাদের কাছে তুলে ধরার।
"কলমে কলমে তিন দশক" ধরা দিলো আপনাদের কাছে। সবশেষে নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা, শুভকামনা ।
সম্পাদক - অনিমেষ সরকার
"কলমে কলমে তিনদশক " সংখ্যায় যারা কলম ধরেছেন আমাদের জন্য
:
শৌভিক রায়, প্রবীর রায়, সন্তোষ সিংহ , অমিত কুমার দে, আফজল আলি, সঞ্জয় সোম , সর্ভানু দাশগুপ্ত ,
শুভ্রদীপ রায়, উদয়ার্ণব , সন্দীপন দত্ত, অনন্যা দাশগুপ্ত , রানা সরকার ,অমিত দে , সত্তাপ্রিয় বর্মন, সম্পিতা সাহা , সায়ন্ত বণিক , শুভদীপ আইচ, নির্মাল্য ঘোষ, উদয় সাহা ,নীলাদ্রি দেব, রতন দাস , স্বদেশ মন্ডল ,সৌমাল্য গরাই ,আশীষ মাহাত, মনোজ পাইন,পঙ্কজ ঘোষ,রুবাইয়া জেসমিন।।সুলগ্না বাগচী।।
সাদা লেখা
প্রবীর রায়যে অংশটায় তুমি ভালবাসার কথা লিখেছিলে
নির্জন চিলেকোঠা সেইখানে পৌঁছোবার সিঁড়ি
তার পরের অংশটা জটিল
ছাদ ও পাশের বাড়ির আরো উঁচু সামান্যগুলি
যে বাক্য রচনা করল
তা এক সমূহ অভিযোগ
ছিন্ন কবিতা
শৌভিক রায়' ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্
নায়ং ভৃত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীর।'
১
জল শব্দে
অতল এঁকেছি,
হাতে মেখেছি
ছাই রং
২
পড়ে রইল
বসতবাড়ি,
দেওয়াল-ছবি,
এক্কাদোক্কার বিলাসী উঠোন,
মোরগ ফুলের দল
৩
যায় সবাই
ফিরে আসবে ব'লেই
৪
রাত বাড়লে
দমকা হাওয়া,
ছেঁড়া পাতায়
একা রবীন্দ্রনাথ,
শীতল স্পর্শে
তাকিয়ে দেখা
দাঁড়িয়ে আছেন
মা সবার...
সনেট: মৃত্যুর শাসন
সন্তোষ সিংহমৃত্যুর সহস্র যোনি আজ উন্মত্ত কামে
কোটি কোটি মৃত্যু প্রজননে ক্লান্তিহীন
ইথারে ইথারে তারা, যেন রাত্রি দিন
গড়ে তোলে বসবাস ধুলো পাতা গ্রামে !
কোথায় প্রাণের বীজ চির ভদ্রাসন
শুধু দেখি মৃত্যুপুরী শেষ ভস্মগুলি-
পথে পথে মোড়ে মোড়ে হাড়িগোড় খুলি
হানাদার হয়ে আছে মৃত্যুর শাসন ।
ওই দেখো জেগে বন, নদী ও সাগর
তির্যক তাকায় আজ মানুষের প্রতি
বিদ্রুপে কাঁপায় বিশ্ব , উজ্জ্বল উদ্ধৃতি
মুছে ফেলে সভ্যতার উৎস ও আকর
নব জন্মে ধ্যান-বুদ্ধ , স্রষ্টার বিক্ষোভে
মৃত্যুর অধিক এক মহাগ্রহ ছোঁবে
এ আমার স্বাধীনতা স্বাধীন তরঙ্গে
স্বদেশ মন্ডল
আমার জন্ম রহস্য উঁকি দেয় দূর থেকে মৃত্যুকে চিনবো চিনবো বলে.....
পীড়িত জীবনের যতোকিছু মৌনব্রত
সর্বক্ষণ ছায়াসঙ্গী একান্ত আমার..... এ আমার স্বাধীনতা
এখানে এতো আগুন এতো আগুনে দহন-পীড়ন
জন্মের ভিতর লতাগুল্ম জড়িয়ে খুঁজি..... প্রতিটি জন্মের ধুলোয় প্রতিটি মৃত্যুর ঘুলোয়
তথাপি....
আমার মৃত্যুতেও খুঁজি মৃত্যুর পর আরও এক জন্ম
জন্মমৃত্যু এক নিজস্ব দর্পণের স্বাধীন তরঙ্গ স্বাধীনতার পাঠ....
গতকাল ঠিক এভাবেই রাত নেমেছিল
আফজল আলি
গতকাল ঠিক এভাবেই রাত নেমেছিল
আমি বৃষ্টির পাখনাগুলো উড়িয়ে দেখি
মানুষ কীভাবে মারা যাচ্ছে
মানুষ মারা যাওয়ার আগে পৃথিবী জ্বরের ঔষুধ খাইয়েছিল
দূরবর্তী আকাশে ধোঁয়ার গন্ধে যখন শ্বাস রুদ্ধ প্রায়
যখন পরিবেশ থেকে তোমরা চেটেপুটে নিচ্ছিলে সব
বিনিময়ে দাওনি কিছুই
খুন করছিলে , বোম ছুঁড়ে , ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলে বসবাস
ক্ষমতার নামে জেনোসাইড ঘটিয়েছো
বিমান নয় , যুদ্ধ বিমানের ভয়ঙ্কর আওয়াজ
ওদের জন্য নিরাপদ রাখোনি কোথাও
উজাড় করে দেওয়া এই পৃথিবীই ছিল না পৃথিবীর নিজের
এখন সন্ধ্যার আগমন দেখতে দেখতে ভাবি
রাত্রিরও নিজস্ব রক্ষাকবচ থাকে , পৃথিবীরও থাকে কিছু অভিমান
সে পাগল রাষ্ট্রনেতাদের অত্যাচার সহ্য করবেই বা কেন
কবিতা একটি ভাবগত বিষয় , যা পৃথিবীর শান্তির পক্ষে এক সমাচার
ভালোবাসার পক্ষে বিবৃতি
তবু মানুষ কথা শোনে না
মানুষ অনুধাবন করতে শেখেনি ,মানুষ অবুঝ রয়ে গেল
একা দেউলিয়া চাঁদ
দুঃখের ঝোপে আগুন লাগল যখন
পুনরায় চেয়ে দেখলাম আমাকে
বিকল্প ক্ষত বিক্ষত
বুঝি নির্মম হয়ে উঠেছে মানুষ
কোথায় কে কাকে গোপনে ছুরি মারে
বিকেলের বারান্দায় তারা দাঁড়িয়ে ছিল
আমি ভুল করেছিলাম তখন
মানুষের পাশে মানুষ থাকবে বলে
বুঝেছি এখনো বাকি আছে অনেক
অনেক কিছু অমিলের
মিত্ররা শত্রু হবে , শত্রুরা বসাবে কামড়
আজ সারাদিন বন্ধু খুঁজেছি শুধু
গ্রাম থেকে গ্রামে , শহরে নগরে
সুযোগ নাই মিলিয়ে নেবার অসফল সফলে
তারা ছিল মানুষের মতো
তারা মানুষের আচরণে সম্পৃক্ত মানচিত্র
তারা ছিল ভয়ানক ভিতরে ভিতরে
গভীর রাত্রে বিছানার এক ধারে
বুঝেছো , গভীর রাত্রে বিছানার এক ধারে
একা দেউলিয়া চাঁদ মনোসংকটে
সব অপমান নিবিড় বসন্তকাল
ভালোবাসা উধাও আজ ভরসার ভাড়া ঘরে
বেদুইন কষ্ট রেখো না
অমিত কুমার দে
হয়তো কথা হল না
হয়তো দেখা হল না
হয়তো স্পর্শ থাকল
সীমানার ওপারে
তবু অনেক বড় অক্ষরে
ভালবাসাই লেখা থাকে
ভালবাসাকে ভালবাসার দিকেই ফেরাও
ভালবাসার গভীরে বেদুইন কষ্ট রেখো না
হয়তো গোলাপ থাকল না
হয়তো রক্তলাল হল না গোপন
হয়তো বাজল না
নরম সিম্ফোনি
তবু কড়ি ও কোমলে
ভালবাসাই বেজে ওঠে
ভালবাসাকে ভালবাসার পাশেই বসাও
ভালবাসার কোটরে ভুল কোন ছোবল রেখো না
হয়তো রঙ রঙ শুভেচ্ছা থাকল না
হয়তো কর্ণিয়ায় বিদ্যুৎ খেলল না
হয়তো দুর্নিবার হল না
কাঙ্খিত প্লাবন
তবু না দেখা ক্যানভাসে
ভালবাসাই ফুটে ওঠে
ভালবাসাকে ভালবাসবার সুন্দর শোনাও
ভালবাসার ভেতরঘরে শ্বাসরোধ জমিয়ে রেখো না
দাগ
পথ চলতে চলতে
কিভাবে কখন একটা দাগ
সাদা জামাটায় এঁটে বসল
লোকটা জানতেই পারল না
একটা পুরো ঝরনা কিনে এনে
রবিন ব্লু-তে গুলিয়ে
একখানা পাহাড়কে শুইয়ে
তার ওপর জামাটা ঘষতে লাগল সে
ঘষতে ঘষতে দিন গেল
বিকেল এসে জুড়ে গেল জামার বুকে পিঠে
সন্ধ্যা এসে ঘন হয়ে বসল জামার কলারে
তারপর রাত্রি এসে জামাটাকে অন্ধকারে ঢাকল
কালো দাগটা কিছুতেই উঠল না!
দেশ
পঙ্কজ ঘোষএই ভুল ও ভ্রান্তির দেশে
আলো জ্বালানোই কঠিনতম কাজ
শতাব্দীপ্রাচীন একেকটি গেছে ছায়া
ক্রমশ কাটা যেতে থাকে
আর নদীর থেকে প্রতিদিন চুরি যায়
জলের ধ্বনিরা।।।
বিষাদজল
সন্দীপন দত্ত
১.
তুমি অন্তত আমায় জলজোছনার গল্প বলো। মায়ারাতের স্বপ্ন বলো। পারস্যদেশ দেখব, আমায় নিয়ে চলো। 'খত' একটি মাসুম শব্দ। 'ক্ষত'র কাছাকাছি। 'ক্ষত' একদিন 'ক্ষেত'-এর কাছে ছিল। 'ক্ষেত' এখন 'খেত' হয়েছে। 'খেত' একটি জালিম শব্দ। 'খত'-এর কাছাকাছি। এরকম গল্প হবে। কফির ভেতর ধোঁয়া হবে। তোমার ভেতর আমি হব। আমার ভেতর... আমার ভেতর বিষ। তবু তুমি অন্তত আমায় বলো স্বপ্নসম্ভব। পাহাড় কোনও প্রহেলিকা নয়। বলো বৃন্দাবন তুমি চেনো। 'সায়াহ্ন' মানে জানতে চাইলে চুল খুলে দাও। আমার তো ক্লান্ত লাগে। এসব দৌড়ঝাঁপ। বয়স হচ্ছে। ঘরে ফেরার। আমি ফেরার।
২.
নাদান নিশান ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। পথ বেঁকে গেছে৷ পথ নেই? আছে। বেঁকে গেছে। আমরা আর হাঁটব না মানেই যে পথ নেই তা তো নয়। তুমি তো বলে ফেলতে পারো নির্মম দক্ষতায় বাস্তবের কথা। আমি কোনওকালে তেমন মাটিতে থাকিনি। হাওয়ায় হাওয়ায় কাদের গুলাল ভাসছে। ভাসছে রক্তগন্ধ। মৌসম বদলে যাচ্ছে মেয়ে। বাড়ি চলো। চুল ভিজে গেলে কেলেংকারি হবে। ভেজার কথা নয় যে রাতে সেই রাতে তুমি সিক্ত দুর্বা হয়ে শুয়ে আছো। বলো না এসব কথার কোনও দাম আছে? কোনও ভাঙা মেলায় আমরা কি খুঁজে পাব রান্নাবাটির দোকান? একটা মাটির হাড়ি কিনে তাতে অল্প জল ভরে ফেলে দেই সন্তানশোক। কম আঁচে 'সিদ্ধ' হোক স্মৃতি।
৩.
কাটা ধানগাছ পড়ে থাকতে দেখার দৃশ্য খুব অশ্লীল মনে হয়। মনে হয় কেউ পৃথিবীর গর্ভপাত করিয়েছে বলপূর্বক। মাটি আলগা হচ্ছে। মাটি দাওয়া, উঠান, ঘর। আলগা হচ্ছে পা। কোথায় যাব? কোথায় পাব সুবাতাস? প্রিয়নাম সংকীর্তনে ঘুচবে এই পাপ? এই জন্মবধির সভ্যরাজ্যে হাহাকার মানে শূন্য। তুমি অর্থে শূন্য। আমি অর্থে শূন্য। এখন সব মিলিয়ে একটা বিকাল। এখন সব মিলিয়ে একটা বিকল। গোঙানির শব্দ আসে আল ধরে হাঁটলে। গাছ দেখলে কাঠ মনে হয়। পাখি দেখলে মাংস। মানুষ দেখা নিষেধ এখন। তুমি ভালো আছ? এমনিই। ভেতরে ব্যথার দলা পাকাচ্ছে। তাতে জলসেচ। তাতে বেড়ে উঠবে মৃত্যু নদীর চর। শবসাধনার দিন কাছে এল। শুয়ে পড়ো মেয়ে। আমি আসছি।
অন্যরকম এক স্তব্ধতা
আশীষ মাহাতবুকের ভিতর মুহুর্মুহু ফুটে উঠছে সন্ধ্যার ঘন অন্ধকার
ধীরে ধীরে বুজে যাচ্ছে সূর্যের আলো,
ইচ্ছে করে কেউ দেখেনি ঢেকে রাখা গোপন স্তব্ধতা
কিছু কথা চেপে রাখা ভালো
না হলে নিশ্চিত পূর্বপুরুষের মতো গুপ্ত কিছু কথা
হাওয়ার ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে
ফতুর হয়ে যাবে অন্যর কাছে প্রকাশিত দুঃখ
পড়ে থাকবে উদ্বাস্তু খাঁকি শূন্যতার বধ্যভূমি
ঘুম
অনন্যা দাশগুপ্তবড় বড় চোখে তাকাতে পারিনা বহুকাল,
দেখভাল করেনা বহুদিন ধরে প্রিয় কেউ,
মহড়া বন্ধ,
কার্ফিউ জারি শহরে-
চোখ বুজে আছে
প্রিয় বলি যাকে আজ সেও।
মরছে মানুষ জ্বলছে শহর
জ্বলতে জ্বলতে আগুন ছড়ায়
শীত নেমে আসে কাটাকুটি খেলে অবসর,
বহুকাল ধরে থেমে আছে
প্রিয় ডাকনাম-
পাইনি কোনো চিঠি
পাইনি কোনো খবর।
শীত করে আজ-
ঘুমহীন এই বিছানায়।
কিছু কথা
রানা সরকারহাঁটতে হাঁটতে ছিঁড়ে যাচ্ছে অলৌকিক চপ্পল
ফোস্কা পড়ছে পায়ে আলকাতরার গরমে ;
কাগজের পাখায় বিশ্ব ঘুরে ঘুরে
স্বপ্নগুলো বালুস্তূপে ধামাচাপা হয়ে যায়।
অতঃপর
কোথায় প্রেমিকা? কোথায় প্রতিশ্রুতি?
কোথায় তুমি-আমি? কোথায় নিরাময় বৃক্ষ?
পৃথিবী অসুস্থ! সবার অসুখ! ঘুমায়না কেউই!
আমিও দু-চার দিন শোকে কবিতা লিখি
কিন্তু
আমারও যে খিদে পায়!
রাষ্ট্র আমার ভাত কই?
মেটামরফোসিস
সৌমাল্য গরাইসময়ের ঘড়িগুলি খুলে গেলে
সময় পেরোতে পারে না কিছুই
পাখিরাও ভুলে যায় বয়স কোটর
জন্মপুরে মৃত্যু শুয়ে । হাই তোলে ভারহীন চিতা
চিতার শিয়রে ঘুম, কান্না শোনে নিদ্রাতুর পিতা
আকাশ দুবেলা মেঘ, সূর্য কোনও সহচরী দিন
সংসার ভেঙেছে রোদ, রাত তার গুপ্ত আলাদিন
এভাবে সাজানো ঘর, ভেঙে দাও মিথ্যে প্রতিবার
স্পন্দন আসলে এক ঘড়ি, দুপাশে ছড়ানো কাঁটাতার
অপেক্ষা জমাতে থাকে আঙুলের চারপাশ
এত এত মিথ্যে হাত, মিথ্যে রঙ, ধূসর গোলাপ
কখনো দেখেছ ঢেউ জমে- জমে মাছ, কীভাবে সাঁতার দিতে- দিতে
পেরোতে পারে না জল, পেরোতে পারে না ডাঙা
ধরা পড়ে লুইজালে, আর জল জমে- জমে কঠিন বরফ
উঁচু হতে -হতে পাহাড়ও ভুলে যায় গোপন প্রণাম নদীর নরম আলিঙ্গন
ঝোঁক
শুভদীপ আইচএখনো কিছু বিন্ধ্যাচল
উদ্বৃত্ত যা কিছু যৌবন
জমা রেখে আসি রাতের কোটরে
মুহূর্ত এক ঘনীভূত ঋণ
অপার সংশয় পেরিয়ে
বারবার তোমার কাছে ছুটে আসে ।
(দীর্ঘ কবিতা)
আরণ্যক
সত্তাপ্রিয় বর্মননাগরিক
আমার বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে
একটা অরণ্য আছে
সেই অরণ্যের দিকে কোনো দিনই আমি ফিরে তাকাই না
যদিও এক দুর্বার আকর্ষণে প্রতিবার আমার পাঁজর ভেঙে যায়
সে বড় করুণ ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,
ভয় করে অদম্য কৌতুহল যদি কোনো দিন
আমায় পথ ভুলিয়ে
সেই অন্ধকার অরণ্যে নিয়ে যায়
তবে বাড়ি ফিরব কিভাবে?
পরদিন আবার অফিস ছুটব কোন পথে,
তারপর বাড়ির লোক ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী আর
সর্বোপরি শহরের মানুষজন আমাকে নেবে তো!
আকর্ষণ
সেদিন অরণ্যদেব আমায় ভয়ংকর ভাবে ডেকেছিল
ঠিক যেন মধ্য সমুদ্রে মেঘের গর্জন -
আমাকে শেষ পর্যন্ত নাবিক হতে হল
একটা সিনেমার পর্দা ঝুলে গেল আমার যাতায়াতের পথে
ছুটে গেলাম খোলা দরজার দিকে।
অরণ্যদেব আমায় ডাকছেন
আমাকে আর নাগরিক হতে দিল না।
ঘুম
ওভাবে আর ডেকো না আমায়,
ওই নিবিড় প্রেম আমায় চিরকালীন রহস্যে ঘেরা
অরণ্য শরীরে ডেকে নেয়,
সময়ের গলা চেপে ধরে কদম গাছের তল।
চোখের ওপর ওড়নার ছায়া ফেলেছ তুমি তন্দ্রা দেবী।
রূপান্তর
ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি জলফরিং হয়ে গেছি,
নরম মাটির ওপর হলদে রোদ ছায়া ফেলছিল
আমি স্নেহের মত নরম ঘাসে চুমুক দিচ্ছিলাম
আমার শরীরে বয়ে যাচ্ছিল একটা পাহাড়ি নদী।
অকস্মাৎ শিমুল গাছের কোটরে ঘুমিয়ে থাকা কুনো ব্যাঙের আক্রমণে
আমি লেজ তুলে গাছের ওপর গিয়ে বসলাম -
তারপর শিমুল গাছ থেকে মেহগনি
মেহগনি থেকে নিম
এভাবে গাছের পর গাছ লাফিয়ে লাফিয়ে
কখন আমি বাঁদর হয়ে শূন্য আকাশে
নিজেকে মেলে ধরে নিশ্বাস নিতে নিতে
আর এক চোট ঘুমিয়ে নিলাম।
আকাশ আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল
অরণ্য থেকে অরণ্যে…
ততক্ষণে আমি পাখি হয়ে গেছি -
আমার পিঠে ধপধপে সাদা দুটি ডানা,
আমি অরণ্য ছেড়ে পাহাড়ের দিকের ছুটে যাচ্ছিলাম
আর পাহাড়ি নদীর জলে ভেসে ভেসে জল পোকা তুলে নিচ্ছিলাম
নদী আমায় নিয়ে চলল গভীর থেকে গভীরতর
প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর পৃথিবীর দিকে…
রাত ও পাখিজন্ম
সূর্য তখন চিরহরিৎ অরণ্যের পেছনে মাথা নামিয়ে
ভাঙা শহরের দিকে উঁকি দিচ্ছিল,
ঠোঁটে খরকুটো নিয়ে আমি
ফিরে আসছিলাম ডুমুর গাছের কোটরে
সেখানে লুকিয়ে ছিল নরম মাংসল দুটি সন্তান
অভুক্ত ক্লান্ত দুটি ঠোঁটে নেমে এসেছে দিনান্তের ঘুম।
অরণ্যে নেমেছে গভীর রাত -
শুকনো ঘাসের ওপর মাথা রেখে নক্ষত্রের পানে চেয়ে
মহাকালের শীতল ছায়ায় আকাশের সামিয়ানা তলে
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ঘুম আমার।
চিত্রশিল্পী- মৌমিতা দাস |
কবিতা
বিরহ পরবর্তী
রতন দাসমঞ্চ আর আলো আসলে কুহকিনী মায়া।
মাটির কথা লিখবে বলে কলম ধরেছিল যে কবি
তাকেও গ্রাস করেছে সে চোরাবালি।
মানুষের কথা বলতে বলতে ওরা মানুষের ভাষা ভুলে যায় একদিন,
কলমের ডগায় লেগে থাকে শুধু সিঁড়ির শব্দসংকেত।
কবিতার পিছু পিছু ছুটে এসে
সরলতা হারিয়ে ফেলে একদিন ওরা
কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে সতীনের মত।
প্রেম লিখতে চায় ওরা ডাকাতির স্বরলিপি প’ড়ে।
কবিতার নন্দন-কাননে এইসব অহরহ চলে
আর ‘স্বর্গ আসলে একটা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়’
একথা ভাবতে ভাবতে ক্রমাগত মূর্ছা যাই আমি, এক অক্ষর-কাঙাল।
সেই থেকে দীর্ঘ বিরতি।
মাঝে কতবার দরজায় করাঘাত করে ফিরে গেছে জাদু-অক্ষরমালা,
আমি শুধু চোখে হাতচাপা দিয়ে অন্ধ হলাম।
উপহারে বেশকিছু অস্থির মুহূর্ত, বিনিদ্র রাত, চাপা দীর্ঘশ্বাস, বুকফাটা চিৎকার পেয়েছি।
এখন ক্রমাগত নিঃস্ব হতে হতে বুঝেছি
অক্ষরমালার কাছে নতজানু হওয়া ছাড়া গতি নেই।
এই যে দীর্ঘ বিরহ,
তাতে এই পৃথিবীর কিছু যায় আসে না।
কিন্তু যেদিন এই বিরহকালীন স্তব্ধতা থেকেই
ছিনিয়ে আনব একটুকরো স্বর্ণরেণু
সেদিন পৃথিবী অন্তত একটা কম্পন টের পাবে।
তুই
সঞ্জয় সোমতুই হলি জীবন্ত লাশ, জড় পদার্থ
ভাঙা আয়নার কাঁচের ওপাশ
যেখানে নেই কোনো প্রতিচ্ছবি
নেই কোনো ক্যানভাস।
তোকে আঁকব ভেবে হাতে রং তুলি নিই
কিছু ধোঁয়াশা আঁকা যায় মাত্র
সমস্ত রং হয় উদ্বায়ী বাষ্প।
তুই একটা ছবি মাত্র, নির্বাক ছবি
প্রিয় রং গায়ে মেখে আবেগ বান বিদ্ধ করার মূর্তি
তুই এক জীবন্ত লাশ,স্পন্দনহীন বুকের বামপাশ।
তবুও তোকেই এঁকে যাই নীরবে ...
ঈশ্বর খুঁজে পেলে
একলা ঘরে যাও ,চোখ বন্ধ করো,
একটু ধৈর্য্য ধরো,
নিজেকে একলা করো প্লীজ
চোখ বন্ধ করো প্লীজ, একটু ধৈর্য্য ধরো প্লীজ।
যদি এতটুকু পারো, আর একটু পারবে নিশ্চয়ই
আমার জন্য নয়, কেবল তোমারই জন্য ।
তুমি প্রস্তুত? নিজের জন্য?
এবার, সুখ-আহ্লাদ- চাওয়া-পাওয়া সব ভুলে গিয়ে কিছুক্ষণ একাকীত্ব আনো, আনো প্লিজ ।
আনতে পেরেছ নিশ্চয়ই।
মনে মনে ভাব শুধুই বর্তমান ভয়ঙ্কর প্রাণনাশী ত্রাস করোনা ভাইরাসে তুমি আক্রান্ত, তুমি হাসপাতালে একা আইসোলেসনে, ভীষণ শ্বাসকষ্ট ।
কেউ ছুঁতে চাইছেনা তোমায়
তবুও বাঁচাতে চাইছে গুটি কয়েক ঐশ্বরিক হাত
কৃত্রিম অক্সিজেনে তোমাকে,
ভীষণ জ্বালা ও কষ্টে অবসর নেই ডাকার তোমার ঈশ্বরকে
কোনো মতে দেখতে পাচ্ছ সম্মুখে ডাক্তার-নার্স ও সহ কর্মীদের
তবুও চিনতে পারছনা জল জ্যান্ত ঈশ্বরকে !
অগ্রন্থিত কবিতা ৭
সর্ভানু দাশগুপ্তকালো মেয়েদের রূপ মুগ্ধ করে আমাকে। দেখতে সুন্দরী না হলেও ভুলতে পারি না সেইসমস্ত মুখ। স্বপ্নে, শয়নে, কবিতায়, বিদ্রোহে সেই তাদেরই স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করে। এ যেন এক অদ্ভুত অন্ধকার, মনে হয় এরাই যেন আলোকিত করে রাখে আমাকে।
গায়ে বোঁটকা গন্ধওয়ালা সেই মেছুনী, নিউটাউনে আলাপ হওয়া সেই বানজারা দম্পতির একমাত্র মেয়ে... রানিহাটির বাসে প্রায় একঘন্টা আমার গা ঘেঁষে বসে থাকা সেই সবজি-বিক্রেতার বৌ...প্রেমিকাদের স্পর্শ ভুলে গেলেও এঁদের ভুলতে পারবো না কোনোদিন।
ক্ষণিকের সেইসব আশ্রয়ে হয়ে উঠি গন্ধরাজ...
গন্ধরাজ
ফুলটার নাম জানি না—
একটা অবিশ্বাসের গাছ সবুজ হাত পা মেলে
আমাকে টেনে নিয়েছে মৃতপ্রায় কোটরে
তোমার সাথে ঝগড়া হলে
বিকেলের শেষ লক্ষ্মীপেঁচাটাও উড়ে পালায়...
বিষণ্ণতা ছেড়ে পালায় বিষণ্ণ মানুষকে
দেখি আত্মহত্যার শেষ রাস্তার সামনে—
প্রিয় বন্ধু খুলে বসেছে আতরের দোকান।
তুমি লিফলেট ছাপাও আমার নামে
যে মহিলাদের শরীরের গন্ধ আজো ভুলিনি আমি
তাঁরা কেউ আমার প্রেমিকা ছিল না!
উত্তর
সায়ন্ত বণিক"রাম রহিমের রক্তের রং?"
মরচে পরা তলোয়ার জিগায়।
"রাম রহিমের বয়সের গড়?"
ভাঙ্গা ইমারত উত্তর চায়।
উত্তর দিতে উত্তরসূরি
অঙ্কের শুরু ব্যস্তানুপাতে।
ভগ্নাংশের মান নির্ধারণে তার,
মাথা কাটা যায় সরলানুপাতে।
(২)
কালের কঙ্কাল
মায়া মৃগে মারিতে বান
মায়ারে করো প্রণাম।
আসল মায়া আঁখিতে,
বুকের জ্বালা ঢাকিতে
দেবতুল্য দেবরে তুমি দিয়াছো কতো গাল।
কি করি নিস্তার সতি
ভাগ্য তব যেমতি
অলক্ষ্যে হাসেন ওই কালের কঙ্কাল।
স্লোগান
উদয়ার্ণবস্লোগান তুলে রাস্তা পার হওয়ার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছিল কিংবা আনন্দ। যে জায়গা গুলোর দিকে তাক করে ঢিল ছোঁড়া হচ্ছিল, আসলে রহস্য দানা বাঁধছিল । অভিযোগের ডাইরিতে লেখা রয়েছে, কয়েক বোতল গরম ফ্যান-কয়েক টুকরো ইঁট-কিংবা কয়েকটা হাত পেটো।
হি হি করে স্লোগান ঢুকে পড়ছিল বাড়ি গুলোর মধ্যে। রাস্তা পার হবার মধ্যে এক ধরনের যে আনন্দ ছিল হঠাৎ আতঙ্ক আছড়ে দিল পরিবারগুলোর ওপর।
প্রথম স্লোগান দ্বিতীয় ঝান্ডা উঠতে থাকলো পতপত শব্দে। খুর ধরে এক এক করে কাটা হলো শিরা-উপশিরা। ভেঙে ফেলা হলো বাড়িগুলোর মেরুদন্ড। কিছু খাবার ছড়িয়ে পড়ে থাকা খালার কোনে লাল রংয়ের আর্দ্রতায় ঠেসে ঠেসে ঢুকিয়ে দেওয়া হল এক বৃদ্ধা মায়ের মুখের ভেতর।
ঘড়ির কাটা দেখে সময় পার না হতেই আবার উঠল স্লোগান। জনা পঞ্চাশেক উন্মাদ জ্বালিয়ে দিলো বাড়িগুলো। আবারও ঝান্ডা উড়াল নিল পত পত শব্দ।
নিঃশব্দ স্লোগান জমিয়ে জোরকদমে রাস্তা পার হবার পর একটা আশ্চর্যরকম আনন্দ ফুটে উঠছিল সবার মনে।
চিত্রশিল্পী- মৌমিতা দাস |
প্রশ্নের বিপরীতে
সম্পিতা সাহাভুল হয়েছে প্রশ্ন সাজাতে গিয়ে।
একেকটা দৃশ্য কেবল সম্মান ফিরিয়ে দিতেই
ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে এরপর...
তোলপাড় বাদামি ভোরআকাশ।
আজানু দাঁড়িয়ে মানুষেরা,
ভ্রমচিঠি চেয়ে নিচ্ছে
মিলিয়ে যাওয়া চাঁদের দিকে হাত মেলে।
ঝাপসা...
তীব্রভাবে কারা যেন হেঁটে গেল বারান্দায়।
ভারিক্কি রোদ ঠেলে নেমে আসি।
অবগাঢ় গন্ধে সুফিসীমান্ত মিলে যাচ্ছে অবলীলায়।
মোহজগৎ অবিকল তোমার মতো।
তর্জনী পুড়ে যাচ্ছে...
চোরাশব্দটান।
জেনো,
স্পর্শ ভুলে যেতে হবে বলেই
সমস্ত ছোঁয়া বাতিল করেছি...
শরীর জুড়ে তীব্র টান
শুভ্রদীপ রায়জানিস অনিমেষ, এই শরীরে পাশে যখন আরও শরীর এসে দাঁড়ায়, আমি গন্ধটা পাই। তীব্রভাবে টের পাই আমার শরীরটা কী চাইছে। সেই অদৃশ্য ফেরোমেন আমাকে ভেতর ভেতর বিবশ করে তোলে। কোনো এক জাদুকরের দক্ষ কেরামতিতে এ'সব ঘটে যায়। অথচ বন্ধুরা কেউ টের পায়না, কিচ্ছুটি খোঁজ পায়না। তবু ভেতর থেকে কে একজন কিভাবে যেন বুঝে যায়, বলে শান্ত হতে, স্থিতধী হতে।
কখনও কখনও আবার অন্য শরীরগুলো তাদের গোপন পদ্মের সুবাস ছড়িয়ে দেয় আমার আশেপাশে।তারপর সে রাতটা বাকী রাতেদের থেকে আলাদা পথে হাঁটে।তীব্র অথচ এক অধরা মায়াবিভাবে শরীরটা ডুবে যেতে থাকে-- যেন চোরাবালি-- কামনার পাঁক আর লালসার বালি দিয়ে সাজানো,সুন্দর। ডুবতে থাকি ভালবেসে। হঠাৎ কেউ একজন হাত বাড়িয়ে দেয়, বলে-- ডুবে যাওয়া সহজ, ভেসে থাকা নয়।
কখনো আবার দূরের সংকেতগুলো সংগোপনে ইতিহাসের খড়কুটো তুলে আনে।সেই চরম উত্তেজনার মুহূর্তে শরীর নামের প্রাসাদটা ঝনঝন করে ওঠে। মাটিতে মিশে যেতে থাকে অদ্ভুত সব আকারের পাত্র। সেই বিদেহী পাত্রেরা ধারণ করে আমার বোহেমিয়ান পুরুষসত্তা। অথচ বাইরে বাইরে আমি যথেষ্ট পরিশীলিত। হুঁশটান ওঠে ক্ষনে ক্ষনে। আগুন আগুন একটা উল্লাস ভেতর ভেতর ফুটতে থাকে অবদমনের উনুনে। আমার লেখায় সে'সব গুহ্য ইঙ্গিত আমার প্রিয় বন্ধু সাবলীলভাবে পড়ে ফেলে, আর চরম শূন্যস্থান ভরে যায় তার কন্ঠস্বরে-- '' নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান,"
দারিদ্র্য +ve
উদয় সাহাআমাদের একসাথে ঘেঁষাঘেঁষি বসবাস
আমাদের দু'টো পা-ই রথ
হুল ফোটে সংসারে, হুল ফোটে দিকে দিকে
চুপ করে শুয়ে থাকে পথ
কোনোমতে সেঁটে আছি পৃথিবীতে
ঠেলাঠেলি, বাঁচা-মরা বেঁচে থাকা দায়
ডালে ডালে ঝুলে ঝুলে পরিযায়ী বেশ
ভিড় ঠিক বলে দেবে একটি উপায়
আমাদের পরিচয় ফুটপাত, বুনোফুলে
বাহুর পেশীতে ঝোলে স্বপ্নের দেশ
আমরাই ভিড় করি মাঝরাতে, দিবালোকে
উপবাসে হয়তোবা মৃত্যু অবশেষ
জীবন জুড়ে ঝাপটাই ডানা
ঘাম জুড়োয় না, জুড়োয় না পেট
ফসলি জমিতে ধানের সার
সীমানা পেরোলেই স্বর্গের গেট
অসুখ
অমিত দেমানুষের অশুভ যত অসুখ
সযত্নে লুকোনো থাকে
গাছের বাকলে
আমাদের উল্লাসের কাছে
গাঢ় সবুজ দেবতা...
বাকল পুরুষ্টু হলে হাসিমুখ
মাথা তোলে নতুন শাখায়
গাছে বিঁধে থাকা তীর দেখে
স্থিরতা শিখি না
বিষন্ন পাতার টান
ঝরে পড়ে একদিন।
অতৃপ্তির রেশে
প্রত্যেকেই দীর্ঘ সারি,
নিরাসক্ত বৃক্ষচ্ছেদে
গোড়া থেকে চুইয়ে পড়ে
আঠালো রক্তের স্মৃতি
গভীর আচ্ছন্ন রাতে
আমাদের দূরে রেখে
গাছেরা সংগীত ধরে—
বাকলে বাকলে ঘষা লেগে
দাবানলে ধ্বংস হতে জানে
দূরত্ব
রুবাইয়া জেসমিনধুয়েমুছে উঠেছি এবার সব দাগ
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়েছো বহুদিন,
নীচু জমিনের গল্পগুলো নাহয় তোলা থাক।
সদ্য ধ্যান খুলেছে।ধীরেধীরে নেমে যাবো এবার ইথারের দিকে।
যদি ভাবো রৌদ্র । যদি ভাবো বৃষ্টি তবে তাই।
উপর থেকেও নিচুজমিনের গল্পগুলো তারাদের মতো ক্ষুদ্র দেখায়।
একটি কবিতা
সুলগ্না বাগচীজীর্ণ শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সাদা কঙ্কাল
কালো রক্তের দাগ লেগে আছে মুখে
তেত্রিশ বসন্ত পার করে এসেছে সে
ট্রামলাইন ধরে হলুদ বাড়ি পেরোলে
মায়ের মুখ দেখা যায় উঠোনে ৷
জীর্ণ শরীর ছুরি নিয়ে ঢুকে পড়ে
শহরের সংসারে ,
বিছানা বালিশ রেখে সোনা টেনে নেয়
সংসার থেকে বেরিয়ে ঝুপড়িতে ঢোকে
কাকাতুয়া মুখ উঁচিয়ে দেখে... খানিক ৷
ভোররাতে ঘুম ভাঙে তাঁর
কঙ্কাল নিয়ে বসে থাকে
ঘুলঘুলি দিয়ে ভাঙা চাঁদের আলো আসে ,
মরফিনের প্যাকেটে মনে হয় পায়েসের স্বাদ
বছর ষোলোর গন্ধ মিশে আছে
খোঁজ রাখলে জানা যেত
চৌত্রিশ আজ জন্মদিনের বয়েস
মনে পড়ে সেই
লাল টিপ, শাঁখা আর একটুখানি পায়েস
আইসোলেশন পর্ব পাঁচ
নীলাদ্রি দেবমৃত্যু আসলে মিথ্যের মতো দ্বীপ
অসত্য অর্ধেক
তবু ঋণগুলো দীর্ঘতর হলে
বাঁশ গাছে ফুল ফোটে
দুলে ওঠে অল্প হাওয়ায়
যে গর্তে সাপ আর ব্যাঙ
শীতঘুম সেরে শরীরে বইয়ে নেয় সুখ
তার দিকে টেনে নেয় ক্রমে
আস্ত মানুষ শরীর
রাত ঘন হয়
আলো আর কুয়াশার গায়ে
অচেনা অক্ষর
বাঁশের শুকনো পাতা ঝরে যায়
মৃত্যু আসলে মিথ্যের মতো দ্বীপ
অসত্য অর্ধেক
পাপ
নির্মাল্য ঘোষশুধু শরীর হয়ে আছো....
একটার পর একটা...
দিনের পর দিন...
কত রূপান্তর দেখব
জানি না...
অল্প একটু জায়গা...
তবুও কত ছোঁয়াচে
একটা আলগা বাঁধনের
পথ কিম্বা পটভূমি...
নিজেই বাঁচি
নাম হয়
অন্য কারো..
একটা পাপ লেগে
আছে সবখানে
সাপ
মনোজ পাইনআমি এই কদিনেই বুঝে গেছি আমার ভেতরে
এক মস্ত বড়ো সাপ বাস করছে বহুদিন
সে আমার মোটেও পোশ্য নয়!
মানে না আমায়।ভাবুন একবার আমার ভেতরটা
আমারই অজানা।এমন হয় নাকি?
দাদু সেদিন বললেন-তুমি যদি রাজনৈতিক
মানুষ হও ; তোমার ভেতরকার নাড়ির,
হাড়ির খবর সব জেনে যাবে কিছু পতাকা
বাহক লোক। তাদের না আছে দেশ না দল?
পাকা গৃহিণী যেভাবে একটা ভাতটিপে বলে
দেন সেদ্ধ কিনা ; সেভাবে তারাও বুঝে নেয়
তুমি কতটা দলীয় হয় উঠতে পারবে। তারপর
তোমার মধ্যে যে সাপ আছে তাকে দলীয় বীন
বাজিয়ে জাগিয়ে তুলবে ।হিন্দু মুসলমান অথবা
অন্য কোনো ধর্মীয় জিরাফের পিঠে বসিয়ে পার
করবে একে একে সমস্ত স্মৃতি ।স্মৃতিগুলি বিস্মৃত
হলে মানুষ আর সাপের মধ্যে কোন ফারাক থাকে
না। তুমিও একদিন নিজের কাছে নিজেই অজানা
অচেনা হয়ে উঠবে ।তখন তোমার পাশ দিয়ে
প্রিয় সারস এসে বসলেও তুমি আদরের বদলে
ছোবল দিতে চাইবে ।মানুষ সাপ হলে সাপেরা
বিপন্ন হয়- এ আমার বহুদিনের অর্জিত বিদ্যা।
প্রকাশকাল ১৮ই এপ্রিল ২০১৯
১৫ দিন অন্তর অন্তর এই ওয়েবজিন প্রকাশিত হয়। কবিতা, গল্প,উপন্যাস পাঠিয়ে দিন ১-৭তারিখের মধ্যে প্রতিমাসে ।
email- bongboystoursandtravels653@gmail.com
WhatsApp - 9775071582
প্রথমেই দাদাভাই তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ বিশিষ্ট কবিদের মাঝের আমার লেখাগুলি ঠাই দেবার জন্যে।। সবকটা লেখা পড়লাম।।প্রত্যেকটি দুর্ধর্ষ।। এভাবেই তোমার web ডুয়ার্স চলতে থাকুক চিরকাল।। একরাশ ভালোবাসা।।🖤💛
উত্তরমুছুনঅনেক ভালোবাসা ভাই,শুভকামনা। এগিয়ে যা। তোরাই আমার শক্তি
মুছুনসবকটা লেখাই হৃদযের দাবি করে। মননকে বেঁধে রাখে নিরন্তন। দারুণ।লেখা পাঠাতে চাই । পাঠাবো কী? অনেক শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুনস্বপন নাথ