ধারাবাহিক উপন্যাস দ্বিতীয় পর্ব
বেলাভূমি
জিৎ পাত্রজিৎ পাত্র |
দ্বিতীয় পর্ব
প্রতিদিন হাওড়া স্টেশনের 12 নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে 10.10
মিনিটে ছাড়ে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস।বোলপুর পৌছোয় 12.30 এ । আষাঢ় মাস চারদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি । কিন্তু এ বড় মজার বৃষ্টি হচ্ছে গতকাল থেকে। এখন আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে, বাইরে দমকা বাতাস বইতে শুরু করল । ঝমঝম বৃষ্টি শুরু হল। প্ল্যাটফর্মের উপরে মানুষের কোলাহল ,কেউ কেউ বেহিসেবি হয়ে ছাতা-রেনকোট না নিয়ে বৃষ্টির ফোঁটায় নিজেকে সঁপে দিয়েছে । আমাকে বাইরে বেরোতে হচ্ছে না । আমি ট্রেনের কামরায় জানালার পাশে বসে আছি । জানালার কাঁচ দিয়ে প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্য গুলি অনুধাবন করছি। চারদিকে বৃষ্টির রোমাঞ্চকর পরিবেশ আমরা তখন বর্ধমান জংশনে । মাইকে ঘোষণা শেষ এবার হুইসেল বাজল। আমি শুনতে পাচ্ছি শান্তিনিকেতনের সুশৃঙ্খল আনন্দ গান সকলে একত্রিত ভাবে আমাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সবাই গাইছে "ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল ,লাগল যে দোল " । এখন তো বসন্তকাল নয় , এখন আষাঢ় মাস ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তার মাঝেই ভেসে আসছে আন্তরিক অমলিন আনন্দময় ঋতু উৎসবের সূচনা।চোখের সামনে ভেসে উঠছে অপষ্ট এক পরমাসুন্দরী । আশাহীন ,ভাষাহীন অপষ্ট অন্ধকারের পথ দিয়ে গতানুগতিকভাবে আলোর দিকে হেঁটে আসছে কেউ । সেই গতানুগতিকতায় ঢেউ তুলতে। সুবর্ণ রায় তার দুই বন্ধু অনিকেত ও সৌরভ যাচ্ছে সুবর্ণের মাসির বাড়ি । সুবর্ণ রায় স্কুল বরাবর প্রথম হতো । জয়েন্টে রাজ্যের দ্বিতীয় হয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ,বাবা,মা দুজনেই কলকাতার একটি কলেজের অধ্যাপক ।এবার মেডিকেল কলেজের ছুটিতে বন্ধুদের নিয়ে মিতু মাসির বাড়ি শান্তিনিকেতন যাচ্ছে সবাই ।সকালের ট্রেনে রিজার্ভেশন কামরায় সাধারণ মানুষের ভিড় খুব। হঠাৎ সামনে সিটে নজর গেল তার পরনে সালোয়ার কামিজ হাতে মোটা বাঁধানো খাতা উদাস ভঙ্গিতে জানালার ধারে বসে প্রকৃতি দেখছে । ভিড় থাকায় ওর চোখ দেখা যাচ্ছে না কিন্তু নাক, ঠোঁট ,চিবুকের গড়ন জানিয়ে দিচ্ছে সৌন্দর্য কাকে বলে ।
"সৌরভ চাপা গলায় ডাকল " এই "
" কি সুন্দর না ? "
" অনিকেত জানালো, বেল পাকলে কাকের কি! আমরা কাক বুঝলি "
"সৌরভ বললো, ও হো এই বর্ষায় তোর মনে বসন্তের আগমন ভাই "
হাসতে লাগলো সবাই ।
একটার পর একটা স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন, গুসকরা আসতেই মেয়েটা নড়ে উঠল। সুবর্ণের খুব খারাপ লাগছিল , মেয়েটি নিশ্চয় নেমে যাবে এখানে । কিন্তু ও নামল না। মাঝে মাঝে বাইরের প্রকৃতি দেখছে ,আবার ভিতরেও নজর রাখছে । চোখ দুটো কি মায়াবী ! মেঘলা সকালে আলোরবর্ণে আষাঢ়ের মেঘে বৃষ্টি ছুঁয়েছে জানালার ফাঁক দিয়ে ঝিরিঝিরি ফোঁটায় ভিজে যাচ্ছে ওর মুখ।ঈশ্বরের সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নারী ,কাজল কালো নয়ন মণি , অভিলাষী হৃদয়ে তখন আষাঢ়ের মেঘে বসন্তের পদধ্বনি । এমন সময় মেয়েটি উঠে দাঁড়াল , সামনে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল দরজার সামনে ।
" এমন সময় অনিকেত বললো - স্বপ্নের সিঁড়ি দিয়ে বাস্তবের মাটিতে নেমে আয় চেয়ে দেখ বোলপুর চলে এসেছি।ট্রেন দাঁড়াতেই সবাই নেমে পড়ল । সুবর্ণ দেখল মেয়েটি গভীর ভঙ্গিতে ওভার ব্রিজ দিয়ে নেমে গেল নিচে। ওরা ও ওভার ব্রিজ দিয়ে নিচে নেমে দেখল কয়েক মুহুর্তে মেয়েটি ভ্যানিশ।
সৌরভ জিজ্ঞাসা করলো কেউ জানে আমরা আসছি আজকে , কত দূর স্টেশন থেকে মাসির বাড়ি ।
" অনেক ছোটোতে এসেছিলাম জানিনা "
" তবে এখানে কি দাঁড়িয়ে থাকব আমরা বললো অনিকেত "
" না না মায়ের সাথে কথা হয়েছে আমার মাসতুতো বোন স্মিতা আসবে স্টেশনে "
" সৌরভ বললো , স্মিতা আর আসবে না, তোর স্বপ্ন সুন্দরীর সাথে গেলে পৌছে যেতাম মাসির বাড়ি "
অবশেষে স্মিতার দেখা মিলল । গাড়ি নিয়ে স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে । সুবর্ণকে দেখামাত্র জড়িয়ে ধরে বলল স্বাগত জানাই আমাদের স্বপ্নের শহরে "
"তাড়াতাড়ি চলো হবু ডাক্তার সুবর্ণ রায় -আপনার বাবা, মা অপেক্ষায় আছে সাথে আপনার মাসি ও মেশো "
" আবার আমার পিছনে লাগছিস স্মিতা , পরিচয় করিয়ে দি আমার দুই বন্ধু সৌরভ সরকার ও অনিকেত মুখার্জী । "
" দেখেই বুঝেছি এমন স্মার্ট এন্ড ট্যালেন্টেড দাদার বন্ধুরা ফ্যাশনেবল , আপনাদের বডি ল্যঙ্গুয়েজ দেখেই বুঝেছি হবু ডাক্তার , আমি স্মিতা এই বছর রসায়নে বিএসি পাশ করলাম , এবার ডাব্লু, বিসিএস.সি এর জন্য কেচিং নিচ্ছি , চলুন সবাই গাড়ি রেডি । "
গাড়ির সামনের সিটে সৌরভ ও অনিকেত বসলো ,পিছনে স্মিতা ও সুবর্ণ । গাড়িতে যেতে যেতে হঠাৎ স্মিতা গাড়ি থামাতে বলল ডাইভারকে।গাড়ি দাঁড়াতেই জানালা দিয়ে ডাকল "দেবলীনা" এই দেবলীনা বাড়ি যাবি তো "
মেয়েটি মাথা নীচু করে উত্তর দিল হু ,
" উঠে আয় গাড়িতে "
সুবর্ণ দেখন ট্রেনের সেই মেয়েটি যাকে নিয়ে কয়েক মুহুর্ত স্বপ্নের ঘোরে ছিল রাজনন্দিনীর মতো আসছে। সামনে আসতেই মেয়েটি মুখ তুলল। এখন ওর চোখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । চোখ দুটো আশ্চর্য সুন্দর । ওই চোখের দিকে তাকালে আয়ু কোটি কোটি বছর বেড়ে যায় অনায়াসে। কিন্তু মেয়েটি কি হাসতে জানে না । মুখে কোন ভাঁজ পড়ল না।
" দাদা এ আমার সব চেয়ে প্রিয় বান্ধবী , স্কুল কলেজ এমন কি ইউনিভার্সিটি সব খানেই প্রথম , ভালো গান গাইতে পারে দেবলীনা "
পাশ থেকে সৌরভ বলল - যাক সারাজীবন গান শুনা যাবে "
" কিছু বললো দাদা বললো স্মিতা "
" এমন কিছুই নয় একজনের কঠিন অসুখ হয়েছে ট্রেনে, বললো অনিকেত "
" কী অসুখ কার হয়েছে জানতে চাইলো স্মিতা ""
" আছে একজন অসুখের নাম লাভেরিয়া বললো সৌরভ "
" ওদের কথা বাদ দে স্মিতা বললো সুবর্ণ "
সবাই একসাথে হেসে উঠল।
"দেবলীনা এই আমার দাদা যার কথা তোকে বলেছিলাম
সারাজীবন প্রথম হয়ে আমাকে বকুনি খাইয়েছে সব সময় মায়ের কাছে, এই দাদার জন্যই মায়ের বকুনি খেয়ে বাধ্য হয়ে ভালো রেজাল্ট করেছি, আমার হবু ডাক্তার দাদা সুবর্ণ রায় সাথে উনারা দাদার বন্ধু হবু ডাক্তার সৌরভ সরকার ও অনিকেত মুখার্জী । "
ঠোঁটের কোনায় হাসি নিয়ে উষ্ণ অভিনন্দন জানালো দেবলীনা ।সারা রাস্তা একটিও কথা বললো না সে।
অবশেষে কয়েক মিনিটের পথ অতিক্রম করে আমরা পৌছালাম মাসির বাড়ি ।
মাসি বাড়িতে এসে পরিচয়পর্ব সেরে স্নান করে রেস্ট নিল তিনজন।
দুপুরের খাবার টেবিল এসে পড়ল সবাই বাবা, মা, মেশোমশাই , মাসিমা, স্মিতা সৌরভ, অনিকেত, সুবর্ণ ।
" তোমরা তো কিছুদিন থাকবে সুবর্ণ ? বললো মেশোমশাই"
" এখনতো ওদের কলেজের ছুটি আছে ওরা তিনজন আর স্মিতা ওদের কে নিয়ে ঘুরে আসুন শান্তিনিকেতন,বীরভুম জেলার বিখ্যাত নিদর্শন, বললো বাবা"
" হবু ডাক্তার বাবুদের কি ভালো লাগবে সাংস্কৃতিক, কাব্যিক পরিবেশ মেশোমশাই! যাদের কাজ ছুরি কাঁচি নিয়ে , বললো স্মিতা "
" আমার ছেলেকে আমি ছোটো থেকে সব কিছুই শিখিয়েছি স্মিতা, শুধু পড়াশুনা নয়, গান, বাজনা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্যালচার বললো বাবা"
সুবর্ণ, অনিকেত , সৌরভ, মাথা নিচু করে খেতে লাগল।
" কি ব্যাপার ডাক্তার বাবুরা তোমাদের মতামত বলো কিছু, বললো মেশোমশাই"
" আমাদের এক সপ্তাহের মতো ছুটি আছে মেশোমশাই তাই পুরো বীরভুম জেলা ঘুরবো বললো অনিকেত"
" আচ্ছা বেশ আমি ডাইভারকে বলে দিচ্ছি স্মিতা তোমাদের ঘুরিয়ে দেখাবে বললো মেশোমশাই "
" বুঝলেন জামাই বাবু সুবর্ণ আমাদের সেই ছোটো থেকে লাজুক বললো মাসিমনি"
মাসিমনির দিকে চেয়ে রইল বাবা কিছু মতামত জানালেন না ।
" সঙ্গে সঙ্গে মা বললো সুবর্ণ আমার ভালো ছেলে "
" এবার সুবুর বিয়ে দে দিদি একা একা আর কতদিন থাকবি তোরা , বললো মাসিমনি"
" দেখ তোর জানা শুনা ভালো যদি মেয়ে থাকে বললো মা "
" এত তাড়াতাড়ি ছেলের বিয়ে নয় মিতু আগে ডাক্তারী পাশ করুক নিজের পায়ে দাঁড়াক তারপর , বললো বাবা "আসতে আসতে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল সবাই ।
সন্ধোবেলায় স্মিতা এসে তুলল, কি ঘুম কি ঘুম তোমাদের ! তিন বন্ধু মিলে দুপুর থেকে ঘুম দিচ্ছে , চোর এসে সব কিছু নিয়ে গেলে ও বুঝতে পারবে না ।"
" কি জন্য রুমে এসেছিস , বললো সুবর্ণ "
" বাজারে যাবো চলো ,একবার আমাদের শহরটা পরিক্রমা করে আসবে সবাই, বললো স্মিতা "
" চল যাচ্ছি নিচে একটু ফ্রেশ হয়ে নি , বললো সুবর্ণ "
সুন্দর শহর , কলকাতার মত ভিড় নেই ,গাড়ির জ্যাম নেই , ফুটপাতে মানুষের বসতি নেই, নেই বিশাল অট্টালিকা, নেই মেকি সাজসজ্জা, শহরের প্রতিটি মানুষ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ,প্রত্যেক দোকানে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে । চারদিকে বাহারী ফুলের পশরা সাজিয়ে বসে আছে কিছু প্রিয়জন ।
এখনকার ছেলে মেয়েদের মধ্যে একটা কাব্যিক কাব্যিক ভাব আছে সবার কাঁধে সাইড ব্যাগ ঝুলানো। কিছু দূর যেতেই সুবর্ণ তাকে দেখতে পেল , অনেকটা দূরে আসছে সে , আসছে তাদের দাঁড়িয়ে থাকা রাস্তায়। তাকে দেখা মাত্র সমস্ত শরীরে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে গেল । সেই অনুভূতি হতে না হতেই স্মিতা ডাকলো " এই দেবলীনা এই দিকে আয় ইশারায় সামনে আসতে বললো স্মিতা "
" কি রে তুই এখন "
" হ্যাঁ দাদাদের শহর ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি , আজ ও তোর টিউশুনি পড়ানো ছিল বুঝি বললো স্মিতা "
" হ্যাঁ প্রতিদিন এই টিউশুনি পড়ানো থাকে বললো দেবলীনা।"
" আপনি টিউশুনি পড়ান বললো সুবর্ণ। "
" কেন তুই টিউশুনি পড়বি বললো অনিকেত "
লজ্জায় লাল হয়ে গেল দেবলীনার মুখ।
" দেবলীনা খুব পরিশ্রম করে দাদা টিউশুনি পড়িয়ে নিজের খরচা তুলে "
" তুই তো জানিস বাবা রিটার্ড হবার পর পেনশন যেটুকু পাই তাতে আমাদের সংসার চলে কিন্তু নিজের পড়াশুনা চালানোর জন্য বাবাকে সাহায্য করি একটু "
"আয় আয় আমাদের সাথে এদের চিনতে পারছিস ? "
মাথা নিচু করে উত্তর দিল দেবলীনা।"
" তোর কিছু রোগ থাকলে বলবি তিন ডাক্তার নিয়ে ঘুরছি বললো স্মিতা। "
মনে মনে হাসছিল দেবলীনা । সুবর্ণ কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিল না । পাশ থেকে সৌরভ ও অনিকেত হাসছিল ।
" আয় আমাদের সাথে রেস্টুরেন্টে, যাবো। "
" আমাকে দেখলেই তোর খিদে পায় তাই না ? , কিন্তু আজ খুব লেট হয়ে গেছে, বাবা, মা চিন্তা করবে , অন্য কোনদিন প্লিজ বললো দেবলীনা"
" তুই খুব নিষ্ঠুর ! অনেকদিন পর দাদাদের পেলাম তুই সাথে থাকলে একজনের ভালো লাগবে ! বললো স্মিতা "
"আমার জন্য ভালো লাগবে একজনের মানে ? বললো দেবলীনা "
" কিছু না আয় আয় বলছি , আমি গিয়ে পৌছে দিয়ে আসবো বললো স্মিতা "
সবাই মিলে রেস্টুরেন্টের ভিতরে গেল।বেয়ারা আসতেই অর্ডার দিল স্মিতা। প্রতিটি টেবিলেই অল্পবয়সী ছেলে মেয়েদের ভিড় । স্মিতার ভাবগতিক দেখে মনে হল এর আগে অনেকবার এসেছে।হঠ্যৎ স্মিতা প্রশ্ন করল " তুমি কোনদিন প্রেমে পড়েছে দাদা (Have you ever been in love)?
এখনকার মেয়েরা খুব ভালো আর আমি ছাড়া সবাই গুণসম্পন্ন হয়, দেখো যদি কাউকে পছন্দ হয়। "
দেবলীনার দিকে তাকাতেই মুচকি হাসছে দেখন সুবর্ণ । হয়তে স্মিতার কথা শুনে হাসছে ।
স্মিতাকে দেখে যেন বোকা,বোকা লাগে আদৌ ও তা নয় বুঝলো সুবর্ণ ।
" দেবলীনা তুই আমার দাদার সাথে ব্ন্ধুত্ব করতে পারিস , একদম তোর মতো শান্ত দশটা কথা বললে একটা উত্তর দেয় , তোদের মিলবে ভালো "
লজ্জায় লাল হয়ে গেল দেবলীনার মুখ ,প্লেটে থাকা মটনকাটরেট একটাও খায়নি দেবলীনা , পাশ থেকে সৌরভ ও অনিকেত ,ওর মুখ চেয়ে হাসছে ।
"কি দেবলীনা খাচ্ছিস না কেন ? তাড়াতাড়ি খেয়ে নে বাড়ি যাবি না ? "
"হ্যাঁ খাচ্ছি তো আমি একটু আসতে খাই "।
সবার খাওয়া কম্প্লিট হতেই বেয়ারার কাছে বিল মিটিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল ।রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সবাই কম বেশী কথা বলছে । শুধুমাত্র সুবর্ণ ও দেবলীনা চুপ । ঠান্ডা হাওয়া বইছে । চারদিকে আলোর রোশনায় ফুটে উঠছে দেবলীনার মুখ । যেন নিরবতার মাঝে অনেক কিছু বলতে চাইছে সুবর্ণ । সে খানিকটা স্মার্ট্নেস জুগিয়ে বলতে শুরু করল "কালকে আমাদের সাথে যাবেন একবার ,শান্তিনিকেতন যাবো "
পাশ থেকে স্মিতা বললো " কি রে যাবি ভাই "
মাথা নিচু করে ইশারায় উত্তর দিল দেবলীনা "যাবো"
কিছুটা আসতেই শহরের বুকে একটা গলির বুকে দাঁড়িয়ে পড়ল দেবলীনা,
" খুব সকালে যেতে পারবো না আমার একটা টিউশুনির ব্যাচ আছে দশ টার পর হলে যেতে পারি , বললো দেবলীনা "
সুবর্ণ আনন্দের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো " থ্যাঙ্ক হউ'
আমরা দশটার পর গাড়ি নিয়ে ওয়েট করবো আপনার জন্য বললো সুবর্ণ
সবাইকে আসছি বলো বেরিয়ে গেল দেবলীনা "
পরিবর্তন এই জীবন তবুও,, রাত বাড়তে থেকে ঘুমের ঘোরে গাঢ় নিদ্রামগ্ন হয় আমার শহর।হয়তো ঘুমোইনি সারারাত।ফ্লাইওভার গুলো হত ক্লান্ত ধনুকের মতো পড়ে থাকে অব্যবহৃত। কারা যেন প্রেজেন্টেশন বানিয়ে চলছে,কারা সব পার্টি করছে উইক এন্ডে সুদূর কলকাতার বুকে। ।কারা,সব বসে আছে অনাহারে এক বিছানায়,
কিছু পেতে গিয়ে যা কিছু ছেড়ে এল , তার জন্য অবুজ মন বোবা কান্না হয়ে ঝরে পরে।
অভিমানী কালপুরুষ স্থির দাঁড়িয়ে থাকে পশ্চিম আকাশে।মদন দেবতা ফুলশর বানায়! কে জানে, কোন তিরে কে বিদ্ধ হয়।
এক অজানা ভায়োলিনের সুর ভেসে এসে সুবর্ণের হৃদয়কে অচৈতন্য করে।ঋতু অনুযায়ী রাগ,মনের অনুভূতি অনুযায়ী রাগ , এই সব বিশাল সমুদ্রের মতো।একবার ইন্টারেস্ট পেলে সাঁতার না কেটে উপায় নেই !
ভোর যত হতে লাগলো কি রকম রিমঝিম সুর বাজতে লাগল সুবর্ণের মনে !
আমার মনে হয় আরম্ভ বা প্রথম এই রকম কিছু হবে নান্দীমুখ।সুবর্ণের মুখে সেই ঝকমকে মুখটি ভেসে উঠল । ভোরের আলো ফুটতেই ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল সুবর্ণ । মনে মনে ভাবতে লাগল এখন কি দেবলীনা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে ? আজ সে এমন কোন কথা বলেনি যাতে মনে হয় আমার সম্পর্খে আলাদা কোন ভাবনা থাকতে পারে ! তাই স্মিতার কথা কাটতে পারেনি , ! তাই কি ? সুবর্ণ যখন ওর প্লেট থেকে চিকেন কাটলেট তুলে দিলো সাগ্রহে কিছু বলেনি দেবলীনা ।
পাশের বেড থেকে অনিকেত উঠে বলল " কি সুবর্ণ ঘুমাস নি নাকি ? "
" না রে এই উঠলাম "
" আমাদের তুলবি না ভাই "
সবার অলক্ষে সকাল হবার অপেক্ষায় রইল সুবর্ণ "
*চলবে...
ভালো হচ্ছে জিৎ।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনভালো লাগছে.....................
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনভালো লাগলো
উত্তরমুছুন