Web ডুয়ার্স ১৩ -মলয় রায়চৌধুরী - গুচ্ছকবিতা



অশোকের শিলালিপি

উৎসর্গ : হিউয়েন সাঙ 

চারিদিকে হিজিবিজি স্পষ্টবাক বোবাদের গেঁড়িচোখ ভিড়ে
কে যে পরশ্রমজীবি নয়, সত্যি বলতে, টের পাওয়া যেত যদি
ঝড়েদের লেজ ধরে বৃষ্টিতে ঝুলে তারা পিঁড়ি-ছেড়ে ওঠা
বরেদের পাঁয়তাড়া ফ্রাই-করা প্রজন্মের বৈদ্যুতিক পুং
নেমন্তন্ন পাওয়া মাত্র পত্রপাঠ ছিঁড়ে ফেলার আনন্দে ভোগে--
তা ভুগুক, ক্ষেতি নেই । ডানার খাপে-খাপে যে-মস্তি লুকিয়ে রয়েছে
নিজেরই গলার স্বরে প্রতিধ্বনি সেজে তা তো বেমালুম হাওয়া
তাদের আঙুল নোংরা বরফের কোমল মোবিলে
তাহলে কাদের থাকে নখদর্পণের মতো মাথামোটা চিজ
বলো দিকি ! হ্যাঁ ঠিক, টিভি না থাকলে শ্যালে টেনে নিয়ে যেতো

জোব চার্নকের দিশি অ্যাণ্ডাবাচ্চা

উৎসর্গ : সঞ্জীব নিয়োগী

বেচারি ব্যথিতচিত্ত কুকুরির ফেকলুছাপ প্রতিস্বপ্নে যাঁরা
স্যাঁতসেঁতে বাগ্মীতাগড়া বাস্তবে হিসেবি আদর্শবাদ পুযে
অণ্ডকোষ ভরে ভরে আওয়াজের গুণিতকে তোলাবাজ আনলেন
রাংতায় বানানো সেসব সাকিন-পরিচয়হীন মনোপজীবীই তো
তারিয়ে তারিয়ে ভোগ করেন শান্তিমিছিলের ঢিল-ছোঁড়া দূরত্ব
আমি হ্যান আমি ত্যান আমি অমুক আমি তমুক আমি কেউ আমি কেটা
ভেবে ভেবে মশা-মাছিরাই কিনা মানব সভ্যতা পালটে দিলে
কেননা হাতফেরতা প্রেমিকদের প্রেমপত্রের ইনটারভ্যালে যে-প্যাঁচ থাকে
তা বুঝতে তুলোটনরম আবৃত্তিকারিনীদের কালো রঙের দুধ
বাকসাঁতারুদের ভাসিয়ে দেয়া বুদবুদের ঢঙে ফানুস হয়ে যায়
শেষে সেও-ভি-আচ্ছা ধাঁচের দার্শনিকতার ফুলেল আত্মকেন্দ্রে
মাচানে-মাচানে বুকনিবাজ থেটার-বিপ্লবীদের এমন পেঁকো জমঘট
যে বাঙালি আর কাঙালির তফাত এই ঘোচে কি সেই ঘোচে
মুক্ত চিন্তা মানে মনে-মনে ভাবুন দাদা পথিমধ্যে স্পিকটি নট
জোব চার্ণকের আদুরে গাড়ূগোপালদের ঔরস যে বহুরূপী ।

সপ্তফণ

  উৎসর্গ - হিড়িম্বা এবং তার বোন হিড়িম্বা

যে-মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে না
এমনই একজন সেদিন গোরস্হানে বল্লে
ঘৃণা করতে পারি এমন কিছু দিন দিকিনি
যাতে বেতো-শকুনদের অবসরপ্রাপ্ত বাসা থেকে
ফেলে-দেয়া জব্বর প্রশংসাগুলো কুড়োতে না হয়

ভদ্রপাল

উৎসর্গ : সুকৃতি শিকদার

চিঁটির হুঁচোট খেয়ে যে-পাথর চলেছেন গড়িয়ে-গড়িয়ে
মনোমজাদার ওঁর আধাফিল্মি ছম্মকছল্লো সুর--
যেন গড়াচ্ছে গড়াক শালা অসমমাত্রিক ধাক্কা পোয়াবার শেষে
থামবে চৌচপাট ক্যারদানি-চিত্তির কোনো হাফবাচনিক মহাফেজে
মাকড়সাথুতুর ছড়া লিভ-ইন গাঁটে-গাঁটে বেঁধে
ঘুষি-খাওয়া ত্যাবড়ানো ভুরু তুলে দেখবেন
খুড়ো তো মিচকে-মারা দিবাচর ভদ্রপাল শিলা

পাল্প ফিকশন

উৎসর্গ : অমৃতলাল বসু

যে-ভাষায় বাণিজ্য হয় না শুধু পদ্য লেখা যায়
সে-ভাষায় কথা বলে-বলে ক্লান্ত জিভ নাড়িয়ে
কুয়াশায় সাঁতরে আসা রিকশাটাকে যখন ডাকলুম
দেখলুম তার হলুদ গায়ে কালো অক্ষরে লেখা :
‘যে লেখে বিস্তর মিছা সে লেখে বিস্তর’ ।

আইলা রে

উৎসর্গ : নুরুন্নাহার শিরিন

আরে হ্যাঁ, বলতে ভুলে গিসলুম
খড়ের-মড়া পোড়াবার প্রতিবাদী গ্যাঞ্জামের ধোঁয়ায়
সমসাময়িক হবার ধান্দায় যেনারা জড়ো হয়েছেন
তেনাদের বুকনির মুসাফিরখানায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে
দেখলুম পকেট মারছেন গোল্ডফিশ চেহারার এক মাগ-মহিলা
আকাশ জুড়ে তখন ফুৎকারে-গড়া পেল্লাই রামধনু
যা টুকে রাখছিলেন হোঁৎকাপোঁদা খবরের কাগজের হাফখোচর
এক বেড়ালগুঁফো সাংবাদিক যেনার আঙুলের কন্ঠস্বর
থেকে-থেকে ডটপেনের ডগায় লুকিয়ে কাশলে কী হবে
ভোরবেলা উঠেই জানি দেখতে পাবো আলকাৎরায়
চোবানো করোটির ফোকলা-অক্ষর হাসি

দেহপট

উৎসর্গ : দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ

নোংরা ঘোলাটে পদ্মা আর গঙ্গা যেভাবে বঙ্গোপসাগরকে নীল করে তুলেছে
ঠিক সে-ভাবেই আগুনের দু’চার কলি নিঃশ্বাসে গড়া গান গেয়ে আমি
রুদ্রাক্ষহীন আঙুলে হাওয়ার শুটি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে জব্বর এক গপ্পো বানাই
অনেকটা যুবতী শোকাতুরাকে জড়িয়ে মৃতকে ভুলে দেহতাপের মাতনে
আমারই দুটো ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেন কানে-কানে বলছি
হ্যাঁ গা মেয়ে, ব্যকরণ যদি জানো, বলো দিকিন এই দেহ ব্যাপারটা কী ?

অংশুমালী, তোর ওই মহেঞ্জোদারোর লিপি উদ্ধার

উৎসর্গ : বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়

কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে
ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই
কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই
অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ
প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে
কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনি কবি
নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল
মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা
মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই
ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ
আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান
জাস্ট তুমি পিক-আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে
সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত  বলে মনে হয়, ব্যাস
ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ
গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা
হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে
মহেঞ্জোদারোর লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই
অবন্তিকা অংশুমালী, পড় পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে–
অমরত্ব অমরত্ব ! অবন্তিকা অংশুমালী, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে
আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস


মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো

উৎসর্গ : সোনালী চক্রবর্তী

মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো
মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, "চলুন পালাই"
ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিন, তাই
নিজের মাথা কেটে পাঠালুম, আজকে ভ্যালেনটাইনের দিন
ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, "ভালোবাসি" লেখা কার্ডসহ
সব পাবে যা-যা চেয়েছিলে, ঘাম-লালা-অশ্রুজল, ফাটাফুটো ঠোঁট
তুমি ঝড় তুলেছিলে, বিদ্যুৎ খেলিয়েছিলে, জাহাঝ ডুবিয়েছিলে
তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়, চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি
উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে ভুগতে হবে না
গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ দেখবার কোনো স্কোপ আর নেই
চোখ খোলা আছে, তোমাকে দেখার জন্য সবসময়, আইড্রপ দিও
গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলো, মুখ হাঁ-করাই আছে
আমার পছন্দের ননভেজ, সন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট, খাওয়াতে ভুলো না
মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলো, গিটার বাজিয়ে গান গেও
ছ'মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিও, চন্দনের পাউডার মাখিও
ভোর বেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে
রাত হলে দু'চোখের পাতা বন্ধ করে দিও, জানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না
কানে কানে বোলো আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসো
মাথা কেটে পাঠালুম, প্রাপ্তি জানিও, মোবাইল নং কার্ডে লেখা আছে

কবিতা সাহেব

উৎসর্গ : বৈদ্যনাথ মিশ্র

তাকিয়ে পাথর করে দেবার সৌন্দর্যবোধ যে আমার ছিল না
তা কাজরি মাছের জাতীয় সঙ্গীতের ছোটো-ছোটো ঢেউ দিয়ে বানানো
অচেনা টগবগে মেয়েদের দেখে ভাল্লাগে এমন উড়ুউড়ু দুপুরে
আকাশের গনধধ শুঁকতে-শুঁকতে লতিয়ে ওঠা গাছের ডগায় টের পেলুম
যে আমায় শহুরে চাকরানির দোআঁসলা ইশারায় আবডালে বলেছিল
ডাকটিকিট ছাড়া জীবনে আর কিছু চাটা হয়নি নাকি গো দাদাবাবু
পাঁকে হাঁটতে পায়ের আবার কষ্ট কিসের ? হ্যাপা তো সব মাথার ।
.
.
সে যাকগে ! দিনে দুবার অস্ত-যাওয়া সূর্যের একটা চিত্রকল্প যদি পেতুম
নিদেনপক্ষে খোসপাঁচড়ার অলংকরণে একজন স্যানিটারি বাঙালির উপমা
তাহলে অজ্ঞান করার ওষুধের সুগন্ধি ফিসফিসানি শুনতে শুনতে
নিশাচর শুক্রকীটরা যেভাবে নুডল-নরম ঠোঁট আর সুপ-গরম শ্বাসের
তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে ঝড়ের কায়দায় ফুরিয়ে যাবার তাড়ায় ভোগে
জিভের ওপরে হামাগুড়ি দেবার ইচ্ছে গোপন রাখতো না এদান্তি কেউ
পথচিহ্ণ দেখে মালুম হতো কে-কে কোনখানে দাঁড়িয়ে আর কোথায় যাচ্ছে
.
.
আয়নাও তো দেখি পারা ঝরিয়ে নতুন-বউয়ের স্মৃতি ভুলে যায়
তাই বলে যাদের রাশিফল সব কাগজেই নিত্যিদিন হাসিখুশি থাকে
তারা কি পোয়াতি-কাঁঠালের গাছপাকা গন্ধে হিংসুটে বোলতাদের ডাকবে
নাকি স্ফূলিঙ্গের জুতো পরা দূরপাল্লার রেলগাড়ির বাংকে শুয়ে ভাববে
পরতের পর পরত বয়সের মুখোশ জমে মুখটাই সাহেব হয়ে গেল গো

মাংস

উৎসর্গ : রঘু ডাকাত

লোকগুলো সাধারণ, ভিড়ের ভেতরে ঢুকে কেন
এমন খুংখার হিংস্র হয়ে পেটাতে লাগলো বুড়োটাকে
বেদম প্রহার, মুখ থেকে আতঙ্ক গোঙানি রক্তের ভলক
খালি গায়ে লাঠি দিয়ে লালচে নীলাভ দাগ দেগে
যতোক্ষণ না বুড়োটা পথের ওপরে পড়ে নিথর নীরব
আটপৌরে পথ-চলতি লোকেরাও ভিড়ে মিশে গিয়ে
ভয়ংকর কেন ? আত্মচেতনা বিসর্জন দিয়ে
অন্যেরা যা করছে তাতে জুটে গেল ? কীভাবে
দ্বৈতসত্তায় একটা বিষাক্ত আত্মা ঘাপটি মেরে থাকে !

এইভাবে মগজে নোংরা বিষ গড়ে ওঠবার কী কারণ
হতে পারে ? লোকগুলো সবাই তো সংসারি, ছেলে-মেয়ে
বউ বাবা রয়েছে বাড়িতে, চাকরি-বাকরি আছে
কিংবা চাষ-বাস জমি-জিরে, মাঠে কাটা ধান পড়ে আছে
একটু আগেই তো স্বাভাবিক পথচারী ছিল, এখন
হিংসা সম্পর্কে বোধহীন । মাংসের প্রতিশোধ নিতে
মোষের মাংসকেও গরুর মাংস নাম দিয়ে বুড়োটার
জীবন্ত মাংস খুবলে বিষাক্ত অপর সত্তাকে
আনন্দে আত্মহারা করে ছেড়ে দিলে হোমো স্যাপিয়েন

গপ-শপ

উৎসর্গ : অঞ্জন ঘোষরায়

একদিন না, কাকেদের সড়গড় ভাষায় দেখলুম
সরকারি প্যানেলভূক্ত মড়াগুলো আমায় চিবিয়ে খাচ্ছে
দাঁতগুলো খণ্ডে-খণ্ডে প্রকাশিত বত্রিশ ভল্যুম মেঘ
চেহারা দেখে মনে হল সব বাসি বিয়ের টাটকা বর
ব্যাঙের ডিমে তা দিতে মগ্ন বগিথালা-ছাপ পদ্মপাতায়
যারা হাই তুলে-তুলে অফিসঘরের হাওয়া পালটায়
কথাটা এতো সহজ যে বলে বোঝাতে পারব না অবশ্যি
এখানে একটা মেটাফর ঢুকিয়ে ব্যাপারটা খোলসা করা যায়
টেকোদের ব্রোঞ্জমূর্তি মরে যেতে চায় অথচ উপায় নেই
রাতের সঙ্গে ঘুষোঘুষির পর রক্তশূন্য সকাল বেলায়
পালাবদল না-হওয়া অব্দি ভুগতে থাকা অমরত্বের কলঙ্কে
প্রদূষিত পরিবেশ দিয়ে সুনির্মিত অহংকারের ছাইপাঁশে
হাউ-হাউ বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মা-মরা রাস্তায়
যেন ঘড়ি থেকে মুহূর্ত সরিয়ে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েছে


আহ্লাদে সাতখানা

উৎসর্গ : মানিক বৈরাগী

যে-মেয়েটির
চোখের পাতা  দুর্গাটুনটুনির ফিনফিনে ডানায় গড়া
তার সঙ্গে মানে বাদ-দেয়া শব্দে তৈরি আলটপকা বাক্যালাপে
নাতি-নাতনিদের ঝুলতে শেখাচ্ছিলেন লোলগতর বাদুড়ঠাকুরমা
.
যে-গ্রামে
মোষের কেঁদোপিঠে বসে শালিকপাখিরা হিচহাইক করে
সেখানের প্রেশারকুকারগুলো কিন্তু মেয়েটিকে দেখে আজও সিটি মারেনি
অথচ ওর সারা গায়ে জল চুয়ে-পড়া সোঁদা সুড়ঙ্গের ঘনসবুজ গন্ধ ছিল
.
যে-দেশে
চোখের জল ফেললে সত্যিই টপ করে মিউজিকাল শব্দ হয়
ওখানেই তো প্রতিটি শবের চোখের পাতা বোজাবার চাকরি পেয়েছে মেয়েটি
ইচ্ছে করলে ও চাঁদের কায়দায় যে-কোনো সমুদ্রের গোমর ঘোচাতে পারে
.
যে-জাজিম
মেয়েটির নাচের তাল নিজের মির্জপুরি নকশায় পুষে রাখে
তা আসলে ঝাঁকবাঁধা কাজরি মাছের কাতুকুতুতে খিলখিল ঢেউ
শহুরে টবের গোলাপের ঢঙে আলসে থেকে ঝুঁকে মেয়েটিকে ডাক পাড়ে
.
যে-লোকটা
লুঙ্গি না ধুতি পরবে ঠিক করতে না পেরে কাকতাড়ুয়া রয়ে গেল
তার সঙ্গে বিয়ে হতে ঝিলমিলে অন্ধকারে শুয়ে মেয়েটি জানতে পেরেছে
ওর বুকের খড়ে কুয়াশা জমে শ্লেষ্মা হয় বলে মাথায় পোড়ামাটির হেলমেট
.
যে-দরজার
কপাটে খোলা আর বন্ধ করার আওয়াজ চুপচাপ লুকিয়ে থাকে
তা ঘুরিয়ে বলা যায় যে সে-আওয়াজ এমনভাবে গুজব ফিরি করে যেন
বাদামের পাঠবস্তু চোখের সামনে মেলে ধরে মুখস্হ করছে কাঠবিড়ালি
.
যে-জেলখানায়
এক চিলতে আকাশে দ্বিতীয়ার চাঁদ তিন লাফে উঠে পড়ে
সেখানে পেঁয়াজ ছাড়িয়ে-ছাড়িয়ে যাদের কান্নার স্টক শেষ হয়ে গেছে
পান্তুয়ার মাংস দিয়ে তৈরি সেসব মহিলাদের ভিড়ে মেয়েটি আজ নায়িকা


নায়কত্ব

উৎসর্গ : শ্যামল শীল

আটাকলের চনমনে গমদানার কায়দায় নাচতে-নাচতে
জুতোপায়ে বাজারে গিয়ে যখন খালি পায়ে নিজের মধ্যে ফিরি
বাসন-ধোয়া আওয়াজে চমকে ওঠে কাঁসাপেতলের রান্নাবাড়ি
বুঝতে পারি না অতো গান কেন ওইটুকু গলায় ধরে রাখে পাপিয়া
মাটিতে কান পেতে শুনতে পাই আরশোলাদের শোকপ্রস্তাবের ফিসফিস
.
বয়স হবার পূর্বাভাস আয়না তো অনেক আগেই দিয়েছিল
আমিই বরং ভেবেছি কাঁধে পাণ্ডবদের কালাশনিকভ নিয়ে বেরিয়ে পড়ব
কিন্তু মাঝরাতে হাতের মুঠো যে উন্মাদ হয়ে যাবে তা কে জানতো
.
প্রথম চুমুর স্মৃতি রোমন্হন করতে যে বৃদ্ধ এখন ইনটেনসিভ কেয়ারে
নিজের ভুলগুলোকে সন্মান জানানো হয়ে ওঠেনি বলে
মদ খেয়ে নর্দমায় পড়ে থাকার উচ্চাকাঙ্খা পূরণ হল না
সমুদ্র তো অবিরাম ঝাঁপাই ঝুড়ে স্বাধীন হতে চায় তবু পারে না
.
ঝড়ের সঙ্গে লড়ছে বাড়িটা অথচ ভেতরে বসে লোকটা ভাবছে ওইই লড়ছে
উত্তরটা কী ? উত্তরটাই তো প্রশ্ন ! প্রশ্নটা কী ? প্রশ্নটাই তো উত্তর !
.
অতো বেশি পালক রঙ রূপ নাচ নিয়ে ময়ূর ওড়ে না
ওকে কেবল দেখুন আর প্রশংসা করুন ; ও-ই তো নায়ক


স্বচ্ছ দেওয়াল

উৎসর্গ : রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায়

সে দেওয়াল কেমন দেখতে জানে না
দেওয়ালটা যার সেও কখনও জানেনি
সে কেবল জানে রয়েছে দেওয়ালখানা
বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে সেই যুবকের জন্য
যাকে সে ভাঙতে দেবে
যুবকেরা তবু গলদঘর্ম হয় স্বচ্ছ একটা পাতলা
দেওয়াল ভাঙতে
হাজার হাজার বছর যাবত চলছে দেওয়াল ভাঙা
রক্তের সাথে রসের তৈরি সেই দেওয়াল
যার ভাঙে তার গর্ব ধরে না
যে ভাঙছে তারও অহমিকা নাচে ঘামে
রসের নাগর খেতাব মিলেছে প্রেমিকের
প্রেমিকা দেখাবে চাদরে রক্ত লেগে
অধ্যবসায়ে সময়ের সাথে লড়ে
দেওয়াল ভাঙার সে কি আনন্দ দুজনেরই
যে ভাঙল আর যার ভাঙা হল
সেলোফেন ফিনফিনে
দেওয়াল না ভেঙে মানুষ জন্মাবে না
তাই সব দেওয়ালই স্বচ্ছ মাংসে গড়া
সেলোফেনে হোক কিংবা
লোহার ইঁটের অদৃশ্য সীমারেখার
প্রেমের ঘামেতে ভিজিয়ে ভেঙে ফেলা দরকার


টাপোরি

উৎসর্গ : অলোক গোস্বামী

আমি যে-কিনা পালটি-মারা তিতিরের ছররা-খাওয়া আকাশ
জলে ডোবা ফানুসপেট মোষের শিঙ থেকে জন্মেছিলুম
অলসচোখ দুপুরে পুঁতি-ঝলমলে নিমগাছটার তলায়
থাবা-তুলতুলে আদর খাচ্ছিলুম ভুরু-ফুরফুরে শ্যামাঙ্গী গৌরীর
...

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সংখ্যা ১৮ || বর্ষ ৫

ফেরার অধ্যায়: -২য় বর্ষ সংখ্যা ১৫

বিষয় - বই আলোচনা-সংখ্যা ১৬ বর্ষ ২