Web ডুয়ার্স ১৩ - তুষারকান্তি রায় - গুচ্ছকবিতা
প্রখর
সকাল থেকেই লু বইছে গোবিন্দপুরে
চারিদিকে ধু – ধু মাঠ কোথাও কোনও জনপ্রানী নেই
সর্দারপাড়ার জোড়াপুকুরের জল শুষে নিচ্ছে রোদ
প্রখর বাতাসে মিশে যাচ্ছে ঘুঘুর ডাক
আগুনের হলকার মধ্য দিয়ে ছাতা মাথায়
হেঁটে আসছে কাজলদি
শহরে যাবার বাস ধরতে কাঁচা রাস্তা ধরে
আরও মাইলখানেক যেতে হবে তাকে
হাত ঘুরিয়ে সময় দেখে নিয়ে ভাবে – দেরি হয়ে গেলো
তেঁতুল গাছের তলায়
জমাট ছায়ায় খানিক জিরিয়ে নিচ্ছে
রৌদ্রের ক্লান্ত পথিক
ঠিক যেভাবে চৌরাস্তার মোড়ে
একটা বাগানওয়ালা বাড়িতে কাজলদির বিয়ের কথা
ঠায় দাঁড়িয়ে আছে , অলসভাবে
জল নূপুর
জলপ্রিয়া তুই মল্লার নাচে দক্ষ
লিখে পাঠালাম ছোট ছোট দানা বৃষ্টি
ভিজে যায় যদি কাগজের আঁকা বিদ্যুৎ
তবুও নিখুঁত অকালবেলার অক্ষর
কবিতার সুরে ভেজা কথা অনুষঙ্গ
জলের শব্দ এখনো লিখছে গল্প
দিগন্ত চিরে ছিটকে পড়ছে বজ্র
শব্দের জল ছুঁয়ে যাক নদী সংগম
চোখের তারার সংকেতে জ্বলে তিস্তা
প্রতিদিন লিখি শিরোনামহীন ছন্দ
নদীয়ালি চরে পুরাতন প্রেম বন্দিশ
জল নূপুরের টুং টাং সুর বিস্তার
সুর
শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা আশাবরির কোমল
আমার হেমন্তের মাঠ
ভিড় বা কোলাহলের পাতা ওলটাতে ওলটাতে
চলে যাই চিলাপাতার নির্জনে
আলতো সুরে দুলে ওঠে প্রান্তরের নামাবলি
নিবিড় সুতোর টানে খুলে যায়
গুটিপোকার উল্লাস
ভুলে যাই ডিসেম্বর , কুয়াশা , মেট্রোর এসি
বাজিকর
পরিচয় তার একটাই খাকি রঙ
লক্ষ মায়ের লক্ষ ছেলেরা যাবে
ক্ষুধার্ত দেশে সীমান্ত পাহারাতে
অযুত – নিযুত অস্ত্রও পৌঁছাবে
চুক্তিরা জানে যুদ্ধ কীভাবে বাঁধে
কতটা ধ্বংসে হাতে আসে বাজিমাত
কোন দেশে যাবে ত্রাণ নিয়ে কপ্টার
মিডিয়াকে দেবে যুদ্ধ বিরতি সংবাদ
আবার চুক্তি খবর পাঠাবে যুদ্ধের
বাজিকর রাজা লিখবেন দেশভাগ্য
চিরতরে যাবে প্রিয়জন সেজে সৈন্য
যুদ্ধ বাধানো খেলা থেকে কবে জাগবো !
নখরক্ষুব্ধ দিন
বাতাস শুনতে শুনতে শক্ত ঠোঁট ও চিবুক
ছিঁড়ে ফেলছে প্রজাপতির রং
উচ্চারনহীন রক্তপাতের আওয়াজ
আরও প্রখর হয়ে
অন্ধকারের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে , শান্তভাবে
মোচড়ে মোচড়ে আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিচ্ছে
মস্তিষ্কের গভীরে
বেহুঁশ কবিতা থেকে খুলে নিচ্ছে কোমল গান্ধার
বিস্তৃত নীলমাঠ – লালদীঘি ডিঙিয়ে
রোদ চলে যাচ্ছে
শেষ মাইলফলকের দিকে
শিশির নেমে আসছে
শব্দহীন
মূক ও বধির
লেখ্য
এইভাবে কতবার কত ঝংকারের শব্দে
অবিকল্প কথা ভেঙে গেছে
তখন অনাদি মাঠের দিকে হেঁটে যাওয়া ছাড়া
আর কোনও চলাচল থাকে না
রাজাকে বাঁচাবে বলে কতবার বাজি ধরেছে সমাধির দেশ
তবু রাখা যায়নি রাজার শাসন
এভাবেই একদিন
শেষ হয়েছে ব্যাস – বাল্মীকি বা হোমারের লেখা
আসলে ছায়ার কাছে নিজেকে বন্ধক রেখে
পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছে
আর , দাবার আসন পেতে ঘড়ির কাঁটা
যাকে যখন খুশি
এখানে সেখানে বসিয়ে লিখে রাখছে ই
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন