Web ডুয়ার্স ১৩/২ - সুমিত মন্ডল - গুচ্ছকবিতা
আমার রাজ্যে
আজকাল ভালবাসার কথা বলা হয়না,
মাঝেমাঝে গভীর অন্ধকারে -
মৃত্যু ভয় নেমে আসে সিলিং ফ্যানের শব্দে ।
বিছানার পাশে টেবিল
টেবিলে সাজানো কিছু বই,
ক্যালেন্ডার থেকে দিনগুলো ঝরে পড়ছে টেবিলে ।
টেবিলের ছোটো ঘড়ির কাটা দু'টো
ক্রমশ চিৎকারে বলে ওঠে
সমস্ত বই যেন এক একটা যুদ্ধবিমান ।
নামমাত্র স্বাধীন রাজ্যে
পরাধীন প্রজার মত টেবিলে পড়ে আছে
কালি ফুরিয়ে যাওয়া কিছু কলম ।
এখানে যুদ্ধ হলে -
হিংসা মরে , ঘৃণা মরে
মানুষ মরে না …
আমাদের মুখোমুখি দেখা হলে
এইতো সেদিন শিলাবতি নদীর জলে
পা ভিজিয়ে হেঁটে যেত
দুরন্ত এক কিশোর কাল
অর্ধেক চাঁদের মুখ ভেসে যেত
বাতাসের বেগে জলের স্রোতে , মনে হতো
শতাব্দীকাল আগে একটা হারিয়ে যাওয়া ডিঙি
ভেসে যায় দিক শূন্যে ।
আজ আর তেমনটা দেখিনা চোখের কাছে
শুধু দেখি গাছগুলো মাথা তুলে বেঁচে আছে
হৃদয়পুরের মাঠ জুড়ে ...
খেলনাবটির শব্দ এখন বাড়ির ছাদে
একা একা ভিড় জমেনা আট বয়সের রান্নাঘরে
এখন কেবল সুখ ভেসে যায় জলের বুকে
অন্ধকারে ডুব সাঁতারে কিশোরেরা স্বপ্নে আসে ।
সেই দিনটা হয়ত কাছে এসে দাঁড়িয়েছে
ভেবেছিলাম আমাদের মুখোমুখি দেখা হলে -
তারপর একদিন বালুচর ধরে হেঁটে
পৃথিবীর কাছে ক্ষমা চেয়ে
ভেসে যাব এক অজানা গভীর স্রোতে
শুধু তোমাকে ভালোবেসে।
হৃদয়পুর
১আমার শরীর থেকে এখন
ধীরে ধীরে খসে পড়ে দুঃখের দিন
বসন্তের পাতা যেমন
ক্রমশ সবুজ হতে থাকে
সেভাবেই তুমি আমাকে সাজিয়ে দাও ।।
২
বৃষ্টি থেমে গেলে
বাড়ির উঠোন পেরিয়ে পুকুর ঘাটের পাশে
একটা কৃষ্ণচূড়ার চারা পুঁতে দিয়ে এসো ।
সন্তানের ছায়া প্রয়োজন…
অন্ধ রাজা ও এক কিশোর
ভন্ডামীর এই কান্ড খানায়
গুন্ডামির এক উড়ছে ধ্বজা
পাগলা দাশু গল্প শোনায়
ভক্ত প্রজার অন্ধ রাজা ।
শহুরে ছেলে ; বিলেত পোশাক
কথায় কথায় ভীষণ শোক
স্মার্ট ফোনের যুদ্ধে মাতাল
কাস্তে কোদাল মিথ্যে হোক ।
শ্রমিক মুজুর পেটের টানে
পাথর ভেঙে সাজায় পথ
অন্ধ রাজা হোচট খাবেই
ভাঙবে চাকা রাজার রথ ।
হাওয়ার বেগে মেঘ ভেসে যায়
পাহাড় জানে কোথায় বারি
একটা কিশোর জোয়ার এলে
ঝাপিয়ে পড়ে শহর তলি ...
অন্ধ রাজা গভীর ঘুমে
স্বপ্ন দ্যাখেন যুদ্ধে যায় ,
এই শহরের একটি কিশোর
রাত্রি জেগে গান শোনায় ।।
হৃদয়পুরের ঈশ্বর
১
একটা পালক খসে পড়ে আছে মাটি ছুঁয়ে
ডানা ঝাপটানো গান টলতে টলতে চলে যায়
আলপথ বরাবর । পশ্চিমে
২
একটা পাখির চোখ খুলে পড়ে আছে
মৃতদেহের সামনে ।
মানুষ করেছে খুন ? নাকি পাখিটাই খুনি !
সাক্ষী হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে গাছেরা
৩
একটা রোদেলা দিনে কৃষকের সাথে ছিল
একগাছা দড়ি আর একটা কাস্তে।
রোদ আর মাটি মেখে কেঁদে ছিল ডুবে ডুবে
তারপর ছায়া টুকু এসে পড়েছিল জলে ।।
৪
বিকেলের ধানক্ষেত আর কতগুলো কীট
তার ঝুলন্ত পায়ের নিচে উড়ছিল ভনভন করে ।
সেদিন ,
একটা পাখি মারা গেলো বুঝি শুধু জলের অভাবে ?
শেষ যাত্রা
আমাকে একটা গান শোনাবে শহর
তোমার বুকের মাঝে একটা জানলা যদি
এঁকে দিই একরাতে । গান শোনাবে কি ?
এভাবে চুপ থেকোনা তুমি
বহুদিন এই চোখ ; পথেঘাটে একটাও
বাউল ফকিরকে দেখিনি
গান শুনতে পাইনি অনেকদিন ।
অনেক বছর হলো ভাসেনি একতারার সুর
আমার হৃদয়পুরে।
আমাকে একটা গান শোনাবে শহর ?
পাখিদের গানে আর মানুষের নাম নেই ।
মাছেদের কোলাহলে আরো ঘোলাটে জলের নিচে
মুখ ভেসে উঠে নাকো মানুষের মুখ ।
গাছেদের গায়ে গায়ে লেগে থাকে শুয়ো পোকা
একটাও ফড়িং এসে বসে না পাতায়।
সব যেন ছেড়ে চলে যায়
বয়সের সাথে সাথে।
আমাকে একটা গান শোনাবে শহর?
শেষ যাত্রায় ...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন