Web ডুয়ার্স ১৩/২ - শুভ্রদীপ রায় - গুচ্ছকবিতা





১. স্কারলেট উইচ

অনুপম মুখোপাধায় তার উপন্যাসে বলেছেন -- 'পৃথিবীতে দুটো মেয়ের চুলের গন্ধ কখনও একই হয়না'। আমার সে কথা  যাচাইয়ের সুযোগ  হয়নি। অথচ আমি তোমার চুল দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম।কারন হাজার জনের ভিড়ে একমাত্র তোমারই স্কারলেট চুল।আরও গভীর সাক্ষাতে জানতে পারলাম তোমার হাতে ' 666’ আর ছাগমুন্ডের ট্যাটু। তুমিই আমাকে বললে টেলিকাইনেসিস শব্দের অর্থ। প্রায়শই তুমি এদিকের জিনিস ওদিকে আর ওদিকের জিনিস এদিকে এনে দেখাতে।আমি মুগ্ধ হতাম,একেবারে স্পেলবাউন্ড  যাকে বলে। ব্লাড মুনের সাথে এককাপ রক্তের যে নিবেদনের সম্পর্ক তা তোমার মুখেই প্রথম শোনা।অবোধ শিশুর পিপাসা নিয়ে আমি শুষে নিচ্ছিলাম তোমার ডার্ক এনার্জি। তাই সবকিছু জানার পর তোমার বুকটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে আমার বিন্দুমাত্র হাত কাঁপেনি!

2. গাছের মত

' আজকাল আর কোনো কবিতা লিখি না,ইচ্ছেও করে না কোনো
মিতভাষী গাছের মতন বসে থাকি সারাটা দিন'
--- বুদ্ধদেব হালদার

    অপভ্রংশ/2

লেখার মত কিছু পাচ্ছিনা। প্রেম -বিরহ- আদর- বৃষ্টি এসব নিয়ে লিখে ফেলেছি গত জন্মেই।এই জন্মে শুধু স্বপ্নের মধ্যে থাকি।হাজার হাজার সিম্বল আর তাদের ডেসিফারের চিন্তায় আমার মাথা ঝনঝন করে। অহং এর পোশাক খুলে গেলে পরে থাকে শুধু স্মৃতি। যে গাড়িতে আমার উঠে বসার কথা ছিল তা আজ বন্ধুর গ্যারাজে শোভা পায়।আমার কান্না পাচ্ছে সর্বনাশী!কবিতা ছেড়ে আমার কি বনবাসে  যাওয়া উচিত?দ্বিধা! এর মাঝেই কিভাবে যেন স্কুল কলেজ চাকরি সব এঁটে গেল। এসব ভাবতে ভাবতে আজকাল নিজেকে কেমন একটা গাছ মনে হয়।

৩. কাঁটাতার

কাঁটাতার বলে যে বিভেদ সীমানাকে এত দিন চিনে এসেছ তা আসলে একটা মিথ! আমরা প্রত্যেকেই নিজের দেহের চারপাশে এক অদৃশ্য কাঁটাতার বুনে নিচ্ছি।অবসরে তাতে কি সুন্দর ফুল ফোটাচ্ছি। এরই নাম বোধহয় সোশাল ডিস্ট্যান্সিং। আবেগে থরথর কাঁপছি তার বর্ণনা দিতে গিয়ে। কোনরকমে শিখে নিচ্ছি নিজেকে পৃথক করার উপায়। গোত্তা খাওয়া ঘুড়ির মত ধুঁকছে আমাদের সম্পর্ক।  সেভাবে কখনও বসা হয়না কাছাকাছি। কাঁটাতারে শান দিতে দিতে হাত ছড়ে যায়। তবুও আমরা হার মানিনি।
৪. এসেন্স অফ ডেথ
মৃত্যুর গন্ধ পাই।হঠাৎ হঠাৎ সমস্ত ঘর ভরে  যায় সেই পুঁতিগন্ধে। দম আটকে আসে,মনে হয় হাসপাতালের ফাঁকা করিডোরে একা দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশ ঘিরে রেখেছে অজস্র লাশ। সেই মৃতদের ঘরে বসে আমি ছিপ ফেলি,  যদি দু' একটা জীবন উঠে আসে।  দুবেলা নিয়ম করে সুগন্ধী আতরে ডুবে থাকি,অথচ মাথার ভেতর সেই মৃতগন্ধের চাষ। চারিদিকে দেগে দেওয়ার একটা খেলা চলছে,টের পাই। কিন্তু এতদিনে দাগাদাগি কাটাকুটির খেলা ফুরিয়ে  যাওয়ার কথা ছিল।হয়ত আমার মত সকলেই সেই মৃতগন্ধ বুঝতে পারছে। ভূতগ্রস্তের মত তাই সবার চলন।তাও আমি ছিপ ফেলে বসে থাকি,  যদি এক দুটো জীবন উঠে আসে।




মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সংখ্যা ১৮ || বর্ষ ৫

ফেরার অধ্যায়: -২য় বর্ষ সংখ্যা ১৫

বিষয় - বই আলোচনা-সংখ্যা ১৬ বর্ষ ২