Web ডুয়ার্স ১৩/২ - সত্তাপ্রিয় বর্মন - তরুণ এর গুচ্ছকবিতা





তরুণ কবি পরিচিতি : - 

সত্তাপ্রিয় বর্মন, জন্ম - ১৭ ই নভেম্বর ১৯৯৬ ।নিবাস কোচবিহার জেলার দিনহাটায়। শিলিগুড়ি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে বি এ, বর্তমানে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগে এম এ পাঠরত। প্রথম কবিতা প্রকাশ উত্তরবঙ্গ সংবাদে।তারপর থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখেছেন। ওয়েব  ডুয়ার্স এর নিয়মিত লেখক ।  প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - 'কবি ও অন্ধকার রাজপথ'(২০১৯)।প্রবল সম্ভাবনাময় এই তরুণ।


জ্বর ও আশ্বাসের শব্দগুচ্ছ


চাবুক


চুপ -
হাঁড়ির মাথায় ভাপ দিচ্ছ শব্দহীনতা
আমাকে আঘাতে আঘাতে মালভূমি সাজালে
আমি চুপ করে থেকে সংকল্পে ধার দেই,
তুমি চাঁদের মুখে দৃশ্যমান কলঙ্ক হয়ে দেখা দাও।
সাদা পৃষ্ঠায় স্মৃতির মত ধানক্ষেত
কুরুক্ষেত্রের পর কলঙ্ক দিয়ে জ্যোৎস্না-আলো পাঠাবো
এটেল মাটির পা-দানিতে
                    গর্ভবতী ধানেরা আকাশে হাত মেলে দাঁড়াবে।
কাচের বয়ামের ছিপি খুলে নির্যাস বের করে আনি,
আমাকে চাবুক মেরে শূন্য করে যাও - নিরবতা।


বিশ্বাসঘাতক


ঘষা কাচে দেখি না কিছুই
অশ্বত্থামা হত গাছের কোটরে
শাসকের কাছে সব বিপ্লবীই সন্ত্রাসবাদী,
বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করে আয়নার প্রতিবিম্ব
সদ্যস্নাত মুখমণ্ডলে মেখে দেয় ক্যাওরা তলার ছাই।
বাম হাতে তুলে নিচ্ছ কুঠার
কুরুসন্তানদের ডান মুঠোয় ক্ষত -
মুকং করোতি বাচালং, পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম।
সটান পকেটে হাত গুটিয়ে ডেয়ারি মিল্ক কুড়িয়ে নাও
আমি জানালার গ্রিল সরিয়ে দেখি বিশ্বাসঘাতক রথচক্র।


জ্বর


আমার হাতে একটিও অস্ত্র নেই
                    তবু তুমি নির্দয়ের মত কোপ বসাচ্ছ
হাঁড়ি কাঠে নিষ্পাপ মাথাটি চিৎকার করছে
উল্লাসে ঢেকে গেছে অশ্রু।
বাইরে ভীষণ বৃষ্টি
ঘরের ভেতর কম্বলের উম -
তোমাকে ভালোবাসার মুহূর্তে কেন কাঁদে
                              বাঁচাল মেঘেরা?
অশ্রু ফোটায় ঘুমন্ত মানুষের নিশ্বাস পড়ে
সেপাই - সান্ত্রী - মন্ত্রী তোমাকে করেছি সমর্পণ
অসহায় নির্লিপ্তিতে মাপছি জ্বরের আপেক্ষিকতা।


খাদ


নিজের দিকে তাকাই
পঙ্গু স্রোত
শোকের প্রতিচ্ছবি মুখোশের নিচে
কালভার্টের ওপর ফুল বাগান
কার্পেটের তলায় চাপা রাখা বিষাদ,
বিষাদের ঘর ছেড়ে ছুটি নিয়ে পালিয়ে যাই
পাহাড়ে, জঙ্গলে, সাগরে...
শরীর যেন না ভেজে
রেইন কোট রেখেছি সঙ্গে -
প্লাস্টিক সার্জারির পর ভুলে যেতে পারি না পরিচিত মুখ।
এবার আমাকে থামতে হবে
                     কিংবা ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে
                                                  খাদে।


প্রত্যাশা


আর তো কয়েকটা দিন মাত্র
তারপর ছাই
শালিক পাখির ঠোঁটে অসহায় কীটের গায়ে
                              লেগে থাকবে আমার শরীর -
হয়তো আর কিছুদিন বাদেই,
জানিনা কখন কোথায় কিভাবে
                              থামতে হবে -
তবু থামতে তো হবেই,
অথচ দেখ আজও কার জন্য কবিতা লিখছি
                              সমুদ্রের কথা ভাবছি
                              ভাবছি পাওনাদারদের কথা
                              ভাবছি ও বেলা কী খাব?


খুন


ক্যাথারসিসের পর
খাদের ধারে পাথরগুলি বলছিল
                    - মামেকং স্মরণং ব্রজঃ।

আত্মহত্যা একটি দীর্ঘ খুনের প্রক্রিয়া
কতগুলি অদৃশ্য হাত অন্ধকারে গলা টিপে
                               শ্বাসরোধ করতে আসে,

প্রাচীন প্রবাদ -
                    নিচু হতে হয়, ছোট হতে হয়
                              নিজের কাছে।

রাত্রি শেষে সূর্যের সামনে দাঁড়াল
                    ভঙ্গুর ইল্যুশন
পায়ের তলে রাবণের ছায়া - মুক্তি।

আজ সকালে আমাকে মরে যেতে ইচ্ছে করছিল
                              তীব্র অভিমানে।


পোস্টকার্ড


মানুষগুলি মেখেছে এত আর্সেনিক
কোনদিকে দাঁড়াই?
রাস্তায় লোহিত পায়ের ছাপ
                    সংকেত গুহায় ফুলকি আঁকা শিকারী,
                    বিশ্বস্ত যারা ছিল তারা আজ বড়ই অপরিচিত -
ভিড়ের মধ্যে পাশ কাটিয়ে হেঁটে যায়
জিরাফ মাথায় তোয়াক্কাহীন মুখোশ।

ঝাঁপাচ্ছি না কুয়োয়
ও বেলার জন্য বসে আছি
যদি আসে আরেকটি পোস্টকার্ড,
যদি শুনি মৌসুমী বায়ু এবার দিক বদল করেছে।
সেই আশায়,
                    - সেই আশাতেই তো।




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সংখ্যা ১৮ || বর্ষ ৫

ফেরার অধ্যায়: -২য় বর্ষ সংখ্যা ১৫

বিষয় - বই আলোচনা-সংখ্যা ১৬ বর্ষ ২