Web ডুয়ার্স ১৩/২ - কুহেলী রায় - তরুণ এর গুচ্ছকবিতা



তরুণ কবি পরিচিতি : - 

জন্ম = ১৪ মার্চ ১৯৯৩
বাবা =বরেন্দ্র নাথ রায়,
 মা =বীথি রায়
শিক্ষা =বাংলা সাহিত্য স্নাতকোত্তর
প্রথম লেখা শুরু ২০১৯ থেকে মুক্তবীনা অনলাইন সাহিত্য পত্রিকার মধ্য দিয়ে। কবিতা ভালোবাসি তাই কবিতায় জুড়ে থাকি। কবিতার শরীর বেয়ে ভালোবাসার ঝর্ণা। কবিতার মধ্যে খুঁজে পাই নিজেকে। কবিতাপ্রেমী ভীষণ।




একগুচ্ছ কবিতা 


(1)


বিষন্নতার অসুখে ছেয়ে ধরেছে আমায়,
মনের ঘরে বোলতার চাক,
নোনাধরা দেয়াল জুড়ে,
আমার মনকেমনের ছবি।
টেবিলে পরে আছে ভাঙা কম্পাস,
কেন্দ্রবিন্দু উধাও।
বিছানা ভর্তি বালিশ চাদর,
তাতে ভোররাতের কান্নার গন্ধ।
পরে আছে ভাঙা আয়না,
তাতে প্রেম আর আমার ছবি,
পরস্পর আবার মুখোমুখি।

(2)


হতাশা আর গ্লানির বোঝা বয়ে চলেছি,
মাইলের পর মাইল।
চারপাশে মুখোশের ভিড়,
আর আমার মৃত্যুরুপী বন্ধু।
আমি দিশাহীন,
আমার নগ্ন পায়ে কাঁচ ফুঁটে আছে শত।
পথে কত বোষ্টমীর দেখা,
জেগে ওঠে আমার দেবতার মুখ।
তবু আমি চলি,
যদি দেবতা পাই কখনো।

(3)


শতবার আমি প্রেমিকার শরীর ছুঁয়ে দেখেছি,
নিরালায় তাকে আলিঙ্গনের ক্ষিপ্রতায় ছুটে গেছি,

আমি কবিতা ভালোবাসি
তাকে একখানা শ্বেতশুভ্র কবিতা ভাবতে চেয়েছি।

কিন্ত তার শরীর জুড়ে কবিতার ভাষা নেই,
রোমহর্ষক কোনো মাতলামি নেই,
আগুন নেই।

ধীরে ধীরে আমি থিতিয়ে গেছি,
প্রেমিকা আধুনিক প্রেমের নোংরা ডোবায় ডুবে গেছে।

আমি কবিতার পর কবিতা লিখে গেছি,
প্রেমিকের মৃত্যু হয়েছে,
কবির নবজন্ম।

(4)


ভাঙা ঘর জুড়ে তোমার আসবাব,
পুরোনো চিরুনি,
শখের আয়না,
হারিয়ে যাওয়া কানের একটা দুল,
ড্রেসিংটেবিল ভর্তি রংবাহারি টিপের পাতা,
আলতার শিশি,
আমার মন জুড়ে তুমি,
তোমার গন্ধ,
তোমার নিশ্বাস,
সব বারবার বলে যায়, প্রেমিকার মৃত্যু আসে,
প্রেমের নয়।

(5)


আধুনিক দেবতার মৃত্যু,
কিংবা,
মৃত্যুর পরের জন্ম
উভয়ের প্রতীক্ষায় আমি,
গা জুড়ে ভীষণ জ্বর,
থার্মোমিটারের পারদ বেড়ে একাকার।

এবার দেবতা বৈদ্যুতিক চুল্লির কাছাকাছি,
আমার চোখ জুড়ে আয়না,
এতে অবিকল আমার প্রতিচ্ছবি।

(6)


শূন্য নদীর তীর, অথবা বিশ্বাস ঘাতক প্রেমিকা,
কিংবা,
রুক্ষ মরুভূমি,
পাতাঝরা গাছ,
সবটাই আসলে আমার চেহারা।
আমি,
আমার মতোই কেউ,
যার চেহারায় মলিনতা,
মুখে বসন্তের দাগ,
অথবা,
চরিত্রে বিশ্বাসঘাতকের তকমা,
আসলে সে আমার মতোই অন্য কেউ।

(7)


প্রেম আসলে অভিমান জমিয়ে রাখার ঠিকানা মাত্র,
কিছু অভিমান বাষ্প হয়ে ওঠে,
কিছুটা অগোচরে রয়ে যায়।
প্রেম হারিয়ে যায়
দীর্ঘ সমুদ্রের অতলে।
নাড়িছেড়া ধনের মতো তাকে,
আগলে রাখার চেষ্টা করে যাই।
ডুব দিয়ে পার হই বিষাদ সাগর,
তবু প্রেম পাইনা
তার বদলে,
কিছু কাঁকড়া আমার সম্বল।

(8)


দু একটা মাকড়সা ইতিউতি পরে আছে,
ছড়ানো ছেটানো কঙ্কালের খুলি,
আরশোলা ঘুরছিলো যত্রতত্র,
আমার গালে গিরগিটির চুম্বন,
পায়ের নিচে ইঁদুরের বিষ্ঠা,
আমি নরক নয়,
পৃথিবীর চার দেয়ালের মধ্যে আছি।

(9)


ফ্রিজের শীতে তুলে রেখেছি হৃদপিন্ড,
তার উপর সযত্নে বিছিয়ে দিয়েছি গোলাপের পাঁপড়ি।
কীটনাশক দিয়ে শুদ্ধ করে নিয়েছি ফ্রিজ,
ফ্রিজের বাইরের মাকড়সার জাল।

আমার মন মখমলের চাদরে ঢাকা,
তাতে অজস্র ছিদ্র,
সেই ছিদ্রপথে অবিশ্বাসের গন্ধ  ঢোকে।

আমি শুদ্ধ হতে চাই,
বিশ্বাসের জলে দুটো তুলসীপাতা ফেলে,
আকণ্ঠ গিলে খেতে চাই।।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সংখ্যা ১৮ || বর্ষ ৫

ফেরার অধ্যায়: -২য় বর্ষ সংখ্যা ১৫

বিষয় - বই আলোচনা-সংখ্যা ১৬ বর্ষ ২